বাংলা‌দেশ দ‌লের ৬ শিক্ষার্থীর স‌ঙ্গে উপদল‌ নেতা, পর্যবেক্ষক ও গাইড

উত্তেজনা ও আগ্রহের রেশ নিয়ে শুরু হলো গণিতের পরীক্ষা

ইরাশাইমাসে, জাপানি ভাষায় স্বাগতম বলা হয়। সেই ডাকেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পরীক্ষার প্রথম দিনে ভেন্যুতে প্রবেশ করে বিশ্বের নানা দেশের খুদে গণিতবিদেরা। জাপানের চিবা শহরে মাকুহারি মেসের বিশাল কক্ষে  চলছে গণিত অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা। দুই দিনের পরীক্ষায় প্রথম দিন বেশ উচ্ছল মনোভাব নিয়েই বাংলাদেশের গণিত দল অংশ নিয়েছে।

পরীক্ষা ঘণ্টা বাজল

সকালের প্রাতরাশ সেরেই আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থে‌কে বেলা দেড়টা পর্যন্ত পরীক্ষায় অনু‌ষ্ঠি‌ত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় ১০৭টি দেশের ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তাদের ম‌ধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ৬২ জন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ১৯ বারের মতো অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আজ প্রথম দিনের পরীক্ষায় তিনটি সমস্যা সমাধানের সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। সংখ্যাতত্ত্ব, জ‌্যা‌মি‌তি ও বীজগণিতের প্রশ্নের সমাধান করে তারা। প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা জানায়, পরীক্ষা মোটামু‌টি ভালো হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রশ্ন নিয়ে বেশ আলাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় সব শিক্ষার্থীকে।

বি‌ভিন্ন ইন‌ডোর গেমসে ব‌্যস্ত শিক্ষার্থীরা

এবারের গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের দলের সদস্যরা হলো ঢাকা কলেজের এস এম এ নাহিয়ান, রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাহরিয়ার হোসেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ, চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের দেবপ্রিয় সাহা রায় ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইমাদ উদ্দীন আহমাদ।

বি‌ভিন্ন দ‌লের স‌ঙ্গে অভিজ্ঞতা বি‌নিময়

বাংলা‌দেশ দ‌লের উপদল নেতা নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও নানা দেশের পর্যবেক্ষক ও ডেপুটি লিডারদের সঙ্গে আলাপের সুযোগ হয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, গণিত নিয়ে চর্চা ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কথা জানতে পেরেছি। গণিতে এশিয়ার দেশগুলো কেন ভালো করে, কিংবা ইউরোপের নানা দেশ আগে ভালো করত, তা নিয়ে বোঝার সুযোগ পেয়েছি আমরা। বাংলাদেশে যে গণিত উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে, তা অনেকেই প্রথমবার জেনে অবাকই হচ্ছে।

৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা অনু‌ষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছে এখানে

আগামীকাল শেষ দি‌নের পরীক্ষা

আগামীকাল ৯ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ও শেষ দিনের অংশ অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা এখন সময়টা হোটেলে ও গেমস জোনেই কাটাচ্ছে। গেমস খেললেও মাথায় যে অঙ্ক ঘুরছে, তা সবার চেহারায় বেশ স্পষ্টই দেখা গেল।

দাবা খেলা তো ছিলই। এরই মধ্যে দেখা যায়, নানা জাপানি মেধাভিত্তিক পাজল, সেট, মাফিয়া, কার্ডগেমসসহ অনেক খেলাধুলা। শিক্ষার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়েই খেলার বাহানায় পরস্পরের সঙ্গে চুটিয়ে নানা বিষয়ে গল্প করছে।

পরীক্ষার হ‌লের বাই‌রে অবস্থানরত বি‌ভিন্ন দে‌শের উপদল‌নেতা, পর্যবেক্ষক ও গাই‌ডেরা
পরীক্ষার হ‌লের বাই‌রে অবস্থানরত বি‌ভিন্ন দে‌শের উপদল‌নেতা, পর্যবেক্ষক ও গাই‌ডেরাছবি: প্রথম আলো

সুন্দর শহর চিবা

জাপানের চিবা শহরটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয়। শহরটিতে জাপানের দুটি ডিজনি পার্ক অবস্থিত বলে অনেক দেশের পর্যটক আসেন। সমুদ্রপারের দারুণ মুগ্ধকর একটি শহর চিবা। এই শহরের পাশেই আছে জাপানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমুদ্রতীর।  বিচে নানা ধরনের ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য আলোচিত। খুদে গণিতবিদেরা এরই মধ্যে জাপানের সংস্কৃতি ও খাবারদাবারের অভিজ্ঞতা নেওয়া শুরু করেছে।

চিবা শহরের ৫০ তলাবি‌শিষ্ট এপিএ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। এখানেই আছে সব দে‌শের গণিত দল
চিবা শহরের ৫০ তলাবি‌শিষ্ট এপিএ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। এখানেই আছে সব দে‌শের গণিত দলছবি: লেখক

৫০ তলা হো‌টেল থাক‌ছে গ‌ণিত দল

এবা‌রের গ‌ণিত অলি‌ম্পিয়া‌ডে অংশগ্রহণকারী, উপদল‌নেতা ও পর্যবেক্ষকেরা চিবার সবচেয়ে উঁচু হোটেলগুলোর একটি এপিএ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট টোকিও বে মাকুহারিতে অবস্থান করছেন। আমাদের খুদে গণিতবিদেরা এখানেই। শহরের ঠিক মধ্যখানে দূর থেকে দেখে মনে হয়, কাচের তৈরি একটা চকলেটের বাক্স দাঁড়িয়ে আছে। ৫০ তলা উচ্চতার কাচের আবরণে ঘেরা হোটেলটি দৃষ্টিনন্দনই বটে। দিনের বেলা সব সময়ই আকাশে নীল রঙের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় হোটেলে। আবার সন্ধ্যার পর দারুণ আলোকসজ্জার কারণে দৃষ্টি ফেরানো যায় না। পরীক্ষার আগে-পরে শিক্ষার্থীদের বেশ বড় একটা কোলাহল দেখা যায় হোটেলের সামনের টোকিও বে মাকুহারি হলের নিচে জেন স্ট্রিট হাবে।

উল্লেখ্য, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়। দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।