রংপুর আঞ্চলিক গণিত উৎসব : রোদ-বৃষ্টি-কুয়াশাতেই জমল উৎসব

রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে বিজয়ীদের সঙ্গে সেলফি তুলছে এক প্রতিযোগী l ছবি: সোয়েল রানারংপুর জিলা স্কুল মাঠে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবে বিজয়ীদের সঙ্গে সেলফি তুলছে এক প্রতিযোগী l ছবি: সোয়েল রানা

 


শীতের কুয়াশা মোড়ানো সকাল। কনকনে বাতাস। কখনো সামান্য সূর্যের ছটা। কখনোবা মুষলধারে বৃষ্টি। রোদ-বৃষ্টির এমন খেলার মধ্যেই আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো গণিত উৎসব।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫০৭ জন শিক্ষার্থী এ উৎসবে অংশ নেয়।
সকাল নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রংপুরের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণিত উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক শিশ মুহম্মদ আবু হানিফা ও রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। এরপর জেলা প্রশাসক বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
উৎসব উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, গণিতের ভীতি দূর করতে প্রথম আলো দেশব্যাপী গণিত উৎসবের মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা সফলও হয়েছে। প্রমাণ আজকের (গতকাল) এই সকাল। শীতের মধ্যে এই সকালে এত শিক্ষার্থী-অভিভাবকের উপস্থিতি তা প্রমাণ করেছে।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে শ্রেণিকক্ষে চলে যায় গণিত প্রতিযোগিতার পরীক্ষা দিতে। ৯টা ৫০ মিনিট থেকে সোয়া ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে স্কুলমাঠের টানানো শামিয়ানার নিচে এসে বসে তারা। এরপর বন্ধুসভার বন্ধুদের পরিবেশনায় গণিতের গান ছাড়া আরও কয়েকটি গান পরিবেশিত হয়।
গান শেষে উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ প্রশ্নোত্তর পর্ব যখন শুরু হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে আকাশটা ছেয়ে যায় কালো মেঘে। একটু পর নামে বৃষ্টি। শুরু হয় সবার ছোটাছুটি। আবারও শ্রেণিকক্ষে গিয়ে অবস্থান। এভাবে কাটে দুপুর সাড়ে ১২টা। বৃষ্টি থেমে যায়। তবে সূর্য-মেঘের লুকোচুরি খেলা চলে থেমে থেমে।
এমন লুকোচুরির মধ্যে শুরু প্রশ্নোত্তর পর্ব। ‘চাঁদে লেখার জন্য বিশেষ ধরনের কলম কেন ব্যবহার করতে হয়’, ‘জ্যোৎস্নার আলোতে রং দেখা যায় না কেন?’, ‘আকাশের তারা কেন গণনা করা যায় না’, ‘রাতের বেলা যখন আমরা চলাচল করি তখন আকাশের চাঁদ-তারাও কেন আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যায়’—এমন মজার সব প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের। আর তাদের অনুসন্ধিৎসার জবাবও দেন মঞ্চ থেকে শিক্ষকেরা। মজার প্রশ্ন, মজার উত্তরে জমে ওঠে প্রশ্নোত্তর পর্ব।
প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রুহুল আমিন এবং রংপুর জিলা স্কুলের গণিতের শিক্ষক শফিয়ার রহমান।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে জয়ী ৮০ খুদে গণিতবিদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় মেডেল। ছিল টি-শার্টও।