রংপুর আঞ্চলিক গণিত উৎসব: উৎসবে এসে গণিত সহজ

গণিত নিয়ে পরীক্ষা চলছে। সমাধান নিয়ে ভাবছে শিশুটি। গতকাল রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবের দৃশ্য l ছবি: প্রথম আলোগণিত নিয়ে পরীক্ষা চলছে। সমাধান নিয়ে ভাবছে শিশুটি। গতকাল রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবের দৃশ্য l ছবি: প্রথম আলো

 

যখন অঙ্ক করি, মনে হয় শুধু অঙ্কই করি। আবার কখনো কিছুতেই অঙ্ক ভালো লাগে না। কেন এমন হয়? গণিত দিয়ে কেন নিজের নাম লেখা যায় না? আকাশের তারাগুলো কেন পাঁচকোনা বিশিষ্ট মনে হয়? খুদে গণিতবিদদের এমনই নানা মজার প্রশ্ন আর মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের উত্তরের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব।
ছুটির দিনে কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ; সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস—কিছুই ঠেকাতে পারেনি খুদে গণিতবিদদের। সাতসকালেই ভরে গিয়েছিল রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের মাঠটি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই যেন শুরু হয়ে যায় গণিত উৎসব। প্রথম আলো বন্ধুসভার স্টল ও বইয়ের দোকানে তখনো উপচে পড়া ভিড়। তবে ঘড়িতে যখন সকাল সাড়ে আটটা, তখনই মঞ্চে বেজে উঠল জাতীয় সংগীত। শুরু হলো গণিত উৎসব। সহস্র কণ্ঠে ঘোষিত হলো সবার কাছে সহজ হয়ে গেছে গণিত।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গতকালের এ উৎসবে অংশ নেয় রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯০৩ জন শিক্ষার্থী।
উদ্বোধনী পর্বে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বেগম ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্থানীয় ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম। বেলুন উড়িয়ে জেলা প্রশাসক উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, প্রথম আলো নবীন শিক্ষার্থীদের সুন্দর পথের সন্ধান দেখাচ্ছে। চমৎকার এ আয়োজনের জন্য তিনি প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
উদ্বোধনী শেষে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায়। সোয়া ১১টায় হল থেকে বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। এ সময় মঞ্চে বেজে ওঠে গণিতের গান। সঙ্গে সঙ্গে কে কার আগে মঞ্চের সামনে বসবে, তা নিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা।
এরপর শুরু হয় উৎসবের সবচেয়ে মজার পর্ব—প্রশ্নোত্তর। এ সময় মঞ্চে ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল মতিন, অধ্যাপক ফিরুজ আলম, সহকারী অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব, রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ আবদুস সামাদ প্রমুখ। এই পর্বে শিক্ষার্থীরা মজার মজার প্রশ্ন করে পুরস্কার জিতে নেয়।
দুপুরের বিরতির পর উৎসব শুরু হয় বন্ধুসভার বন্ধু রেজাউল করিমের গান দিয়ে। উপস্থিত সবাই গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী গান ও কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সদস্য জাহিদ হুসাইন শিক্ষার্থীদের মুখস্থ, মাদক ও মিথ্যাকে না বলার অঙ্গীকার করান।
পুরস্কার বিতরণের আগে এক মিনিট পর্বে অতিথিরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এ সময় অধ্যাপক ইকবাল মতিন অমসৃণ খেজুরগাছ থেকে মিষ্টি রস বের করার সঙ্গে তুলনা করে গণিতের অধ্যয়ন করার কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, গণিত কঠিন নাকি সহজ? উত্তরে খুদে গণিতবিদেরা সহস্র কণ্ঠে বলে ওঠে, উৎসবে এসে সহজ হয়ে গেছে গণিত।
উৎসবের সমাপনী পর্বে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে প্রাথমিক ক্যাটাগরিতে ১২, জুনিয়রে ২৪, সেকেন্ডারিতে ১৭ ও হায়ার সেকেন্ডারিতে ১২ জনকে পদক ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বেগমের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন।