শেষ হলো ২য় লীলাবতী গণিত ক্যাম্প ২০১৩

‘গণিত ক্যাম্প! শুনলেই কেমন ভয় ভয় লাগত। মনে হয়েছিল, এখানে সবাই সারাক্ষণ ডুবে থাকবে গণিতের মহাসমুদ্রে!’ বলল চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী সমাপ্তি শিকদার। তবে ক্যাম্পে ভাবনার সঙ্গে কোনো মিল পেল না সে। কেননা এখানে আড্ডা, গান, গল্প সবই আছে। আর সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি বিষয়—গণিত!
‘গণিতের সমস্যা এত আনন্দের সঙ্গে সমাধান করা যায়, তা জানা ছিল না। সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন অনেক কৌশল শিখেছি। এ ছাড়া ছিল রুটিনমাফিক ক্লাস, একসঙ্গে আড্ডা ও নতুন বন্ধুতা। সব মিলিয়ে অনেক মজা।’ বলে অয়ন্তিকা রিন্তি বোস। এবারই প্রথম আবাসিক গণিত ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিল দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে।


আঞ্চলিক ও জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে মেয়েদের সাফল্য তুলনামূলকভাবে কমতে থাকায় শুধু মেয়েদের জন্যই যদি কোনো ক্যাম্পের আয়োজন করা যায়, তাহলে কেমন হয়? এমন ভাবনা থেকেই এই ক্যাম্পের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। যার নাম দেওয়া হয় ‘লীলাবতী গণিত ক্যাম্প’। একাদশ শতকের ভারতীয় গণিতবিদ লীলাবতীর নামে এই ক্যাম্প। এর আগেও মেয়েদের নিয়ে এমন একটি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এটি ছিল দ্বিতীয় আয়োজন।
২২ থেকে ২৪ আগস্ট ঢাকার আদাবরে পদক্ষেপ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডরমিটরিতে অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পটি। দশম ও একাদশ গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত সেরা ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এই ক্যাম্পে। ক্যাম্পে অংশ নেওয়া সবাই ছিল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ক্যাম্পটির পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন ২০০৯ সালের অলিম্পিয়াডে আন্তর্জাতিক গণিত (আইএমও) ব্রোঞ্জপদকজয়ী ও বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) অধ্যয়নরত নাজিয়া চৌধুরী।
২২ আগস্ট সকালে শুরুতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে ক্যাম্পটি শুরু করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। তার পর থেকে শুরু হয় ক্লাস, গ্রুপ স্টাডি, হোমওয়ার্ক ও সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা। দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ধারণা দেওয়া হয় জটিল সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে আগের আইএমওতে কয়েকজন অংশগ্রহণকারী। গণিত ক্যাম্প, তাই বলে কি আনন্দ থেমে থাকবে? বাড়ি থেকে অনেক দূরে অন্য রকম একটি পরিবেশে গণিতের এ ক্যাম্পকে আনন্দমুখর করে রাখতে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। চমক হাসানের ‘গণিতের রঙ্গ’-এর ভিডিও প্রদর্শন। দেখানো হয়েছে সিনেমা। ছিল ক্যাম্পারদের অংশগ্রহণে গান, আবৃত্তি, খেলাধুলা, গল্প বলাসহ নানা আয়োজন।
ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে যোগ দিয়েছিলেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আইএমওতে বাংলাদেশের এমন একটি দল দেখতে চাই, যেখানে ছয় সদস্যের মধ্যে ছয়জনই থাকবে মেয়ে।’ ক্যাম্পে আরও যোগ দিয়েছিলেন গণিত অলিম্পিয়াডের সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, অভীক রায়, গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর চিকিৎসক সৌমিত্র চক্রবর্তীসহ অনেকে। ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর জন্য ছিল সনদপত্র। ক্যাম্পের পুরো আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্যবস্থাপনায় ছিল প্রথম আলো।

দেশে ফিরল বাংলাদেশ গণিত দল

কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) তিনটি ব্রোঞ্জ পদক আর একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি নিয়ে দেশে ফিরল বাংলাদেশ গণিত দল। বাংলাদেশ গণিত দলের চার সদস্য ও উপদলনেতা মঙ্গলবার রাতে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে এসে পঁেৌছান।

রাত সাড়ে এগারটার দিকে লাল-সবুজের পোশাক পরে একে একে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী ঢাকা কলেজের শিক্ষাথর্ী সেৌরভ দাশ, নূর মোহাম্মদ সফিউল্লাহ, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদীব হাসান ও সম্মানসূচক স্বীকৃতি পাওয়া ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষাথর্ী মো. জাহিদুল হাসান এবং উপদলনেতা মুনির হাসান ।

মুনির হাসান সাংবাদিকদের জানান, আমাদের ছেলেরা তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। দলের গড় প্রাপ্তনম্বর সনে্তাষজনক। তারা আন্তজার্তিক এই মেধার লড়াইয়ে নিজেদেরকে তুলে ধরতে চষ্টো করেছে এবং ভালো করেছে।'

বাংলাদেশ গণিত দলকে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে বরণ করে নেন প্রথম আলোর উপফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন। এসময় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সমন্বয়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া, গণিত দলের সদস্যদের আত্মীয়স্বজন, গণিত অলিম্পিয়াডের স্বেচ্ছাসেবক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এবার নবমবারের মতো আইএমওতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। গত ১৮ থকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত কলম্বিয়ার সান্তা মার্তা শহরে অনুষ্ঠিত হয় গণিতের সবচেয়ে মর্যাদার এই প্রতিযোগিতা। ডাচ&-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে গণিত উত্সব আয়োজনের মাধ্যমে ৫৪তম আইএমওর জন্য চারজনের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করে করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

শেষ হলো আন্তর্জাতিক গণিতের আসর

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে | জুলাই ২৯, ২০১৩ |

মানুষে মানুষে সখ্য, ঐক্য, ভালোবাসা এবং মুক্তির জন্য বিজ্ঞান ও গণিতের উত্তরোত্তর ব্যবহারের আহ্বানের মধ্য দিয়ে গত শনিবার শেষ হলো ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) আসর। সমাপনী অনুষ্ঠানটি ছিল লাতিন আমেরিকার মুক্তিকামী মানুষের অগ্রণী নায়ক সাইমন বলিভারের জাদুঘরের সামনে। অনুষ্ঠানে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ীদের গলায় পদক পরিয়ে দেওয়া হয়। বক্তারা শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দেশে শিক্ষাদূত হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের বলেন, ভাষা ও গণিতে উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমেই কেবল মানব জাতির বৃহত্তর সমস্যাগুলোর উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৪ সালের আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিদের হাতে আইএমওর পতাকা তুলে দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় এবারের আনুষ্ঠানিকতা। ২০১৪ সালের ৩ থেকে ১৩ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরে ৫৫তম আইএমও অনুষ্ঠিত হবে। পরে হোটেল আইরোতমাতে ফিরে দলনেতা, উপদলনেতা, শিক্ষার্থীরা নৈশভোজে অংশ নেয়। গতকাল রোববার সকাল থেকে প্রতিযোগীরা সান্টা মার্তা শহর ত্যাগ করতে শুরু করেছে। তিনটি ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী বাংলাদেশ দলের কাল মঙ্গলবার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। এ আয়োজনের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাছাই করা হয় প্রতিযোগী।

এবার তিনটি ব্রোঞ্জ পেল বাংলাদেশ

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে |  জুলাই ২৮, ২০১৩

এবার তিনটি ব্রোঞ্জপদক ও একটি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ গণিত দল। কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এ অর্জনের (আইএমও) মাধ্যমে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকল। গত শুক্রবার রাতে আইএমওর বিচারকেরা পদকের নম্বর চূড়ান্ত করেন।ব্রোঞ্জপদক পাওয়া বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা হলো ঢাকা কলেজের নূর মোহাম্মদ সফিউল্লাহ, সৌরভ দাশ ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদীব হাসান। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের মো. জাহিদুল হাসান পেয়েছে সম্মানসূচক স্বীকৃতি। গণিতের এ বিশ্ব আসরে মোট ৪২ নম্বরের মধ্যে সফিউল্লাহ ২১, আদীব ১৭, সৌরভ ১৫ এবং জাহিদুল ৭ পেয়েছে। ৩১ বা তার চেয়ে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সোনা, ২৪-৩০-এ রৌপ্য এবং ১৫-২৩-এ ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। ৯৭টি দেশের ৫২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মোট ২৭৮ জন পদক পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ জন সোনা, ৯২ জন রুপা ও ১৪১ জন ব্র্রোঞ্জ এবং ১৪১টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়েছে।

পাঁচটি সোনা ও একটি রৌপ্য নিয়ে ২০৮ নম্বর পেয়ে শীর্ষে রয়েছে চীন। আর সমান পদক নিয়ে ২০৪ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশের মোট নম্বর ৬০। অবস্থান ৬১তম। এবার ভারত ১২২ নম্বর পেয়ে ২৯তম, শ্রীলঙ্কা ৬৫ নম্বর পেয়ে ৫৬তম, পাকিস্তান ২৫ নম্বর পেয়ে ৭৯তম স্থানে রয়েছে। গত বছর আইএমওতে বাংলাদেশ একটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ পেয়েছিল।

বাংলাদেশের এবারের প্রাপ্তিতে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ দলের ফলাফল সন্তোষজনক। আশা করছি শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।’ সংগঠনের সহসভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি খুবই খুশি হয়েছি এ ফলাফলে। আমাদের ছেলেরা অন্য দেশের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। এটা সত্যিই অনেক আনন্দের খবর। দলের সবাইকে শুভেচ্ছা।’

কলম্বিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশ দলের কোচ মাহবুব আলম মজুমদারও শিক্ষার্থীদের ফলাফলে খুশি। তিনি বলেন, ‘এবার রৌপ্য না পেলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গড় নম্বর বেড়েছে। তবে তারা আরও ভালো করতে পারত।’

এবারের আইএমওতে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএস তাবরেজ। তিনি জানান, ধারাবাহিক এ অর্জন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অতীতের মতো ভবিষ্যতেও গণিত উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করবে।

আইএমওতে টানা নয় বছর অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অর্জন একটি রৌপ্য, নয়টি ব্রোঞ্জ এবং ১৬টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় সারা দেশ থেকে ১৭টি গণিত উৎসবের মাধ্যমে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে এবার ওই চারজন প্রতিযোগীকে বাছাই করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

এবার ফলাফলের অপেক্ষা

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে |  জুলাই ২৭, ২০১৩ | 
পাঠকেরা যখন এই প্রতিবেদন পড়বেন, ততক্ষণে প্রায় সব দেশের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর। কত নম্বর পেলে একজন পাবে ব্রোঞ্চ পদক? কততে হবে সোনা বা রুপা? ২৫ তারিখেই বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদার আর আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের ১, ২, ৪ ও ৬ নম্বরের মূল্যায়ন ও সমন্বয়ের কাজ শেষ করেছি। ২৬ তারিখে দুপুর (বাংলাদেশ সময় গতকাল মধ্যরাত) নাগাদ বাকি দুটি মূল্যায়নের কাজ শেষ হবে। আইএমওর নিয়মানুসারে উত্তরপত্র নিজ নিজ দেশের দলনেতা ও উপদলনেতার পাশাপাশি আয়োজকদের পক্ষ থেকেও মূল্যায়ন করা হয়। পরে উভয় পক্ষ প্রাপ্ত নম্বরের ব্যাপারে একমত হলেই তা শিক্ষার্থীর নম্বর হিসেবে গৃহীত হয়। চারটি সমস্যা থেকে আমাদের চার খুদে গণিতবিদের অর্জন যথাক্রমে নূর মোহাম্মদ সফিউল্লাহ ১৯, আদীব হাসান ১৬, সৌরভ দাশ ১৪ এবং মো. জাহিদুল হাসান ৭। প্রত্যেকেই কমপক্ষে একটি করে সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করে নিজেদের সম্মানসূচক স্বীকৃতি নিশ্চিত করেছে। বাকি দুই সমস্যার ওপর নির্ভর করছে সফিউল্লাহ, আদীব ও সৌরভের পদকের নিশ্চয়তা। ২৬ তারিখের মূল্যায়ন শেষে ২৭ তারিখে ফলাফল ও পদকের হিসাব চূড়ান্ত হবে। এবার নিয়ে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা নবমবারের মতো আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে ১৭টি গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য এই চার প্রতিযোগীকে নির্বাচিত করেছে।

উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু হয়েছে

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে |  জুলাই ২৬, ২০১৩ | 
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে পরীক্ষার চাপ কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আনন্দের সময় শুরু হয়েছে। বিচ ভলিবল ও টেবিল টেনিস ছাড়াও সমুদ্র আর সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ গণিত দলের সৌরভ, সফিউল্লাহ, জাহিদুল ও আদীব। তারা অন্য দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে টেবিল টেনিস খেলেছে। তবে প্রতিযোগীদের মধ্যে কিছুটা হলেও ফলাফল নিয়ে রয়েছে চিন্তা। কারণ, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং নম্বর সমন্বয়ের কাজ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য চার সদস্যের দল নির্বাচিত করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
অলিম্পিয়াডে প্রথম দিনের পরীক্ষায় প্রশ্ন ছিল সংখ্যাতত্ত্ব, কম্বিনেটরিক্স আর জ্যামিতি থেকে। জ্যামিতির পরীক্ষাটি ছিল সেদিনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন। তবে জ্যামিতি আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রিয় বিষয়। তাই তাদের তেমন একটা সাহায্য নিতে হয়নি।
পরীক্ষার্থীদের মতে, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষার সমস্যাগুলো অনেকটা সহজ। জ্যামিতি ৪ নম্বরে থাকায় সেটি খুব সহজে সমাধান করা গেছে।
সান্তা মার্তায় পৌঁছানোর তৃতীয় দিনের মাথায় আমরা শহরটি ঘুরে দেখার সুযোগ পেলাম। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা শুরুর পর আমরা বাসে চড়ে বের হলাম। কিছুক্ষণ পর যেখানে থামলাম, সেটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে দেখতে অনেকটা উদ্যানের মতোই। ছেলেমেয়েরা সবাই গল্পগুজব আর হই হট্টগোলে ব্যস্ত। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো পাঠাগারে। নীরবতা ভেঙে প্রথমে দেখানো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিমূলক একটা ভিডিওচিত্র। জানলাম, সেখানে ১৮টি শাখায় ২১৯টি ডিসিপ্লিনে পড়ানো হয় এবং বিভিন্ন ডিগ্রি দেওয়া হয়।

শেষ হলো প্রথম দিনের পরীক্ষা

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে | জুলাই ২৪, ২০১৩

পাঠকেরা যখন এই খবর পড়বেন, ততক্ষণে ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। সাড়ে চার ঘণ্টার এই পরীক্ষা বাংলাদেশ সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত একটায় শেষ হয়।
পরীক্ষার কারণে প্রতিযোগীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। শুধু বিশেষ একটি স্থানে কয়েকটি কম্পিউটারে ই-মেইলসহ প্রাথমিক কিছু কাজের জন্য সংযোগসুবিধা রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা শেষে ইন্টারনেট উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনটি ছিল আইএমওর অন্যতম সহযোগী বিরানকিউলাস শহরে অবস্থিত নর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনডোর বাস্কেটবল কোর্টে। অনুষ্ঠানে শহরের মেয়র এলসা নগুয়েরা জানালেন, বরানকিউলাসের নানান সাফল্য-ব্যর্থতার কথা। ২০০৬ সালে শহরটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০০৮ সালে নতুন উদ্যমে শহরকে গড়ে তোলা হয়। এখন সেখানে সাক্ষরতার হার শতভাগ, যা দেশের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রধান শহরের মর্যাদা এনে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন কলম্বিয়ার শিক্ষামন্ত্রী মারিয়া ফার্নান্ডো, আইএমও উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান নজর আগাখানভ।
স্প্যানিশ গানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে ৭ থেকে ১৯ বছরের একদল শিক্ষার্থী। সবচেয়ে জমজমাট অংশটি ছিল প্রায় ১০০ জন শিল্পীর কারুকার্যখচিত জামা পরে নৃত্য পরিবেশনা। এতে উঠে আসে দক্ষিণ আমেরিকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।
সাংস্কৃতিক দলের সদস্যরা প্রতিটি দেশের গণিত দলকে নেচেগেয়ে মঞ্চে নিয়ে আসেন। প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা। ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে প্রায় প্রথম দিকেই মঞ্চে ডাক পায় বাংলাদেশের সৌরভ, সফিউল্লাহ, জাহিদুল ও আদীব। অনুষ্ঠানে দেখা গেল আরএমওতে মেয়েদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাড়ছে আরব দেশগুলোর মেয়েদের অংশগ্রহণ।
উপস্থাপকের জানানো তথ্য থেকে বুঝলাম এই আয়োজনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ করার জন্য আবেদন করেছে কলম্বিয়া। তাদের দাবি, এটিই দক্ষিণ আমেরিকার আদি রেড ইন্ডিয়ানের ঐতিহ্যের অংশ। আর প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে কলম্বিয়ানরা এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ঠিক তখন বুঝলাম কেন আমাদের এখানে আনা হয়েছে। কারণ তাতে বিশ্বের ১০৩টা দেশের সামনে কলম্বিয়ার দাবিটি উঠে এল।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশ থেকে ১৭টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে চারজনের বাংলাদেশ দল ঠিক করে।

শুরু হলো গণিতের লড়াই : আইএমও ২০১৩

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে |  জুলাই ২৩, ২০১৩

শুরু হলো বিশ্বের প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেধার লড়াই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) ২০১৩। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত নয়টার দিকে কলম্বিয়ার বিরানকিউলাস শহরে শুরু হয় এর আনুষ্ঠানিকতা।
অলিম্পিয়াডের ৫৪তম এ আসরে অংশ নিচ্ছে ১০৩টি দেশের পাঁচ শতাধিক খুদে গণিতবিদ। দুই দিনের প্রতিযোগিতা শুরু হবে আজ থেকে। প্রতিযোগীদের সাড়ে চার ঘণ্টায় তিনটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আইএমওতে নবমবারের মতো অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের গণিত দল। আইএমওর নিয়মানুসারে গতকাল নিজ নিজ দেশের দলনেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগীদের ‘চোখের দেখা’ হয়েছে। বাংলাদেশ দলের দলনেতা মাহবুব আলম মজুমদার হাত নেড়ে তার দলের গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানায়। নিয়ম অনুযায়ী, তিনি ১৮ জুলাই থেকে অন্য দলনেতাদের সঙ্গে ‘অজ্ঞাতবাসে’ রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা মূল প্রতিযোগিতার জন্য সমস্যা নির্বাচনও করেছে।
বাংলাদেশ দলের চার খুদে গণিতবিদ হলো ঢাকা কলেজের সৌরভ দাশ ও নূর মোহাম্মদ সফিউল্লাহ, ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের মো. জাহিদুল হাসান এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদীব হাসান।
গত রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন দেশের গণিতবিদেরা সান্তা মার্তা শহরে উপস্থিত হয়। সান্তা মার্তার সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্ট ইরোটামায় সব দেশের প্রতিযোগীরা অবস্থান করছে। আজ পরীক্ষা শুরু হওয়া পর্যন্ত উপদলনেতারা সেখানেই অবস্থান করবে। এরপর তারা নগরের অন্য প্রান্তের একটি হোটেলে দলনেতাদের সঙ্গে যোগ দেবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে।
আকাশপথে দীর্ঘ যাত্রা শেষ করে বাংলাদেশ দলের সদস্যরা বিশ্রামও নিয়েছে। মেজাজ বেশ ফুরফুরে। এখন কলম্বিয়ায় গরম কাল। তাপমাত্রাও প্রায় আমাদের দেশের মতোই। সান্তা মার্তা সমুদ্রতীরবর্তী শহর বলে এর তাপমাত্রা একটু বেশি।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশ থেকে ১৭টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে চারজন প্রতিযোগীকে লাল-সবুজের পতাকা বহনের জন্য নির্বাচন করেছে।

আজ কলম্বিয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ গণিত দল আরও ভালো করার প্রত্যাশা

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) শতাধিক দেশের বেশির ভাগেরই কর্মনৈপুণ্যের ক্ষেত্রে উত্থান-পতন দেখা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর থেকে উত্তরোত্তর ভালো করছে। গত বছরের চেয়ে এবার আরও ভালো করার আশা নিয়ে আজ শুক্রবার রাতে ৫৪তম আইএমওতে যোগ দিতে চার প্রতিযোগীসহ পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ দল কলম্বিয়ার সান্তা মার্তা শহরের উদ্দেশে রওনা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দলকে পরিচয় করিয়ে দিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক ও জাতীয় গণিত উৎসবের মাধ্যমে ২২ হাজার গণিতবিদ থেকে চার প্রতিযোগীকে আইএমওর জন্য মনোনীত করা হয়। তিনি এবারও ভালো করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ওই উৎসবের আয়োজন করে। গত বছর আইএমওতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো রৌপ্য পদক পায়। এ ছাড়া ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ছয়টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ১৫টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
অনুষ্ঠানে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে উপস্থিত ছিল এবারের চার প্রতিযোগী ঢাকা কলেজের সৌরভ দাশ ও নূর মোহাম্মদ সফিউল্লাহ, ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের মো. জাহিদুল হাসান, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদীব হাসান। আর দলনেতা ও প্রশিক্ষক মাহবুব মজুমদার ইতিমধ্যে কলম্বিয়া পৌঁছেছেন।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের আরও ভালো করতে হলে গণিতের পেছনে আরও বেশি সময় দিতে হবে। আইএমওতে পদকজয়ী বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা এখন বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন একটি নিয়ম করেছে। এতে কোনো পদকজয়ী গণিতবিদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিভাগে চাইলে ভর্তি হতে পারবে।
গণিত উৎসব ও আইএমওতে বাংলাদেশের যোগদানে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ বলেন, ‘আশা করি বাংলাদেশ কলম্বিয়ায় আরও ভালো করবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ কায়কোবাদ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ দলের উপ-দলনেতা মুনির হাসান।

৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড তিনটি ব্রোঞ্জ পেল বাংলাদেশ

 

মুনির হাসান, সান্তা মার্তা (কলম্বিয়া) থেকে

এবার তিনটি ব্রোঞ্জপদক ও একটি সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ গণিত দল। কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এ অর্জনের (আইএমও) মাধ্যমে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকল। গত শুক্রবার রাতে আইএমওর বিচারকেরা পদকের নম্বর চূড়ান্ত করেন।
ব্রোঞ্জপদক পাওয়া বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা হলো ঢাকা কলেজের নূর মোহাম্মদ সফিউল্লাহ, সৌরভ দাশ ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদীব হাসান। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের মো. জাহিদুল হাসান পেয়েছে সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
গণিতের এ বিশ্ব আসরে মোট ৪২ নম্বরের মধ্যে সফিউল্লাহ ২১, আদীব ১৭, সৌরভ ১৫ এবং জাহিদুল ৭ পেয়েছে। ৩১ বা তার চেয়ে বেশি নম্বরপ্রাপ্তরা সোনা, ২৪-৩০-এ রৌপ্য এবং ১৫-২৩-এ ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয়। ৯৭টি দেশের ৫২৮ জন শিার্থীর মধ্যে মোট ২৭৮ জন পদক পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ জন সোনা, ৯২ জন রুপা ও ১৪১ জন ব্র্রোঞ্জ এবং ১৪১টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
পাঁচটি সোনা ও একটি রৌপ্য নিয়ে ২০৮ নম্বর পেয়ে শীর্ষে রয়েছে চীন। আর সমান পদক নিয়ে ২০৪ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন দণি কোরিয়া। বাংলাদেশের মোট নম্বর ৬০। অবস্থান ৬১তম। এবার ভারত ১২২ নম্বর পেয়ে ২৯তম, শ্রীলঙ্কা ৬৫ নম্বর পেয়ে ৫৬তম, পাকিস্তান ২৫ নম্বর পেয়ে ৭৯তম স্থানে রয়েছে। গত বছর আইএমওতে বাংলাদেশ একটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ পেয়েছিল।
বাংলাদেশের এবারের প্রাপ্তিতে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ দলের ফলাফল সন্তোষজনক। আশা করছি শিার্থীরা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।’ সংগঠনের সহসভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি খুবই খুশি হয়েছি এ ফলাফলে। আমাদের ছেলেরা অন্য দেশের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। এটা সত্যিই অনেক আনন্দের খবর। দলের সবাইকে শুভেচ্ছা।’
কলম্বিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশ দলের কোচ মাহবুব আলম মজুমদারও শিার্থীদের ফলাফলে খুশি। তিনি বলেন, ‘এবার রৌপ্য না পেলেও বাংলাদেশের শিার্থীদের গড় নম্বর বেড়েছে। তবে তারা আরও ভালো করতে পারত।’
এবারের আইএমওতে অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএস তাবরেজ। তিনি জানান, ধারাবাহিক এ অর্জন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অতীতের মতো ভবিষ্যতেও গণিত উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করবে।
আইএমওতে টানা নয় বছর অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অর্জন একটি রৌপ্য, নয়টি ব্রোঞ্জ এবং ১৬টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় সারা দেশ থেকে ১৭টি গণিত উৎসবের মাধ্যমে প্রায় ২২ হাজার শিার্থী থেকে এবার চারজন প্রতিযোগীকে বাছাই করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।math 2