গণিত অলিম্পিয়াড এখন আর সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ নয়, এটি আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রমের অংশ। গণিত মানুষকে যুক্তিবাদী ও উন্নত প্রজন্ম গড়তে সাহায্য করে। তাই নতুন প্রজন্মকে গণিতচর্চায় বেশি বেশি সময় দিতে হবে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের বরিশাল আঞ্চলিক পর্বে গতকাল শনিবার কথাগুলো বলেন বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব। এদিন কুমিল্লা অঞ্চলের উৎসবও হয়। জাতীয় প্রতিযোগিতার জন্য বরিশাল থেকে ৩৫ ও কুমিল্লা থেকে ৪১ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়।
বরিশালের অনুষ্ঠানটি হয় শহরের ঐতিহ্যবাহী ব্রজমোহন (বিএম) বিদ্যালয় মাঠে। এতে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চার স্তর থেকে ৫৩০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ অঞ্চলের উৎসবে অংশ নেয় বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ভোলা, পিরোজপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর জেলার শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যাপক আবদুল মোতালেব। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হুমায়ূন এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেনা রানী বিশ্বাস ও সরকারি বিএম কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গৌতম কুমার সাহা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর রুহুল আজগর। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বরিশালের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও তাঁর দল।
কুমিল্লা অঞ্চল
কুমিল্লা অঞ্চলের গণিত উৎসবে অংশ নেয় কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষার্থীরা। এই তিন জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়। কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সকাল ৯টার দিকে উৎসবের উদ্বোধন হয়।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আহমদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ১ কেন মৌলিক বা যৌগিক নয়—জানতে চায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের চুউরিয়া মুন্সী রহিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুহিদুল ইসলাম। জবাবে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ১–এর সাধারণ উৎপাদক নেই। তাই ১–কে সবচেয়ে ক্ষুদ্র মৌলিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সবচেয়ে ক্ষুদ্র মৌলিক সংখ্যা এবং একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় ২–কে। যার কারণে ১ মৌলিক বা যৌগিক সারিতে পড়ে না।
প্রশ্নোত্তর পর্বটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর জাহিদ হোসাইন খান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাপনী আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা বন্ধুসভার সভাপতি মহিউদ্দিন লিটন। সংগীত পরিবেশন করেন নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বন্ধুসভার সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার, শশীদল আলহাজ মোহাম্মদ আবু তাহের কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কুমিল্লা জোনের ইনচার্জ আবু কাউছার ছিদ্দিক প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।