খুলনায় শীতের সকালে গণিত উৎসবে মেতেছে শিক্ষার্থীরা

খুলনায় শীতের সকালে গণিত উৎসবে মেতেছে শিক্ষার্থীরা

শীতের সকালে ঘন কুয়াশা। পূর্বাকাশে সূর্য হালকা উঁকি দিচ্ছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছে খুলনা জিলা স্কুল মাঠে। সেখানে শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২৫-এর আঞ্চলিক গণিত উৎসব। প্রায় ৮০০ খুদে গণিতবিদ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে এই গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’—স্লোগানকে সামনে রেখে উৎসবের উদ্বোধন করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। খুলনা জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোল্লা মোকছেদ আলী বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক খুলনার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন।

উদ্বোধনী পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ও খুলনা বন্ধুসভার সভাপতি কাজী মাসুদুল আলম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মোতুর্জা আহমেদ, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক অমিত সরদার, খুলনায় কর্মরত প্রথম আলোর প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল ও বন্ধুসভার বন্ধুরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি এস এম মাসুম বিল্যাহ।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো খুলনা বন্ধুসভা।

শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে উদ্বোধনী পর্বে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবনের সব ক্ষেত্রেই গণিত কাজে লাগবে। গণিতের চর্চা তোমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তোমরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। তোমাদের জন্য অনেক শুভকামনা।’

bdmo khulna regional 2025 2

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক খুলনার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে ও সামাজিক উন্নয়নে গণিত অলিম্পিয়াডের মতো বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এই গণিত উৎসবে তোমরা যারা অংশগ্রহণ করেছ, গণিতের এই চর্চা অব্যাহত রাখবে। তোমরা তোমাদের লক্ষ্যটাকে স্থির করে সেই মোতাবেক সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তোমরা ভালো কোনো অবস্থানে পৌঁছাতে পারাটাই হবে এই অনুষ্ঠানের সার্থকতা।’

গণিত উৎসবে অংশ নিতে সকাল থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির হয় গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই জিলা স্কুলের সুবিশাল প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণে। অনলাইনে প্রাথমিক বাছাইপর্বে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা উৎসবে যোগ দেয়। গণিত উৎসবে প্রথমা প্রকাশন, দ্বিমিক প্রকাশনী, তাম্রলিপি, অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স, তৌফিক প্রকাশন, ল্যাব বাংলার স্টলও বসেছে। সেসব স্টল ঘুরে দেখেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

গোপালগঞ্জ থেকে উৎসবে অংশ নিতে মাকে নিয়ে এসেছে পঞ্চম শ্রেণির রামিন রায়হান। ভোর সাড়ে পাঁচটায় খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয় তারা। রামিন বলে, ‘জীবনে প্রথমবার এই উৎসবে অংশ নিচ্ছি। এখানে এসে অনেক আনন্দ লাগবে। ভেতরে ভেতরে একধরনের উত্তেজনা কাজ করছে।’

ফুলতলার মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল খুলনা (এমসিএসকে) থেকে দল বেঁধে উৎসবে অংশ নিতে এসেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের একজন দশম শ্রেণির লুবাবা জামান আদিবা বলে, ‘এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো গণিত উৎসবে অংশ নিচ্ছি। একটা সময় গণিতে ব্যাপক ভীতি ছিল। গণিত উৎসব আমার গণিত ভীতি কাটিয়ে দিয়েছে।’

উদ্বোধনের পর আজ সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে বিদ্যালয়ের ২২টি কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন আছে।

উদ্বোধনের পর এক ঘণ্টার পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষে একদিকে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেবেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক আজমল হুদা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক এস এম রাফিজুল হক, সরকারি ব্রজলাল কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন ও সরকারি ব্রজলাল কলেজের গণিত বিভাগের অধ্যাপক এস এম শোয়েব হোসেন। পাশাপাশি চলবে খাতা মূল্যায়নের কাজ। প্রশ্নোত্তর পর্বের পর বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।

Related Articles