দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে তারা
উৎসবে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা। গতকাল ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।

দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে তারা

সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সকালে এত শিক্ষার্থীর উপস্থিতিই প্রমাণ করে, গণিতের প্রতি তাদের কত ভালোবাসা। তাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে একেকজন আইনস্টাইন, গ্যালিলিও। এমন শিক্ষার্থীরাই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।

গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বে অতিথিদের বক্তব্য উঠে এসেছে এমন সব কথা। গতকাল শুক্রবার ছিল ময়মনসিংহ ও ফেনী অঞ্চলের উৎসব। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের ২৩তম উৎসবের ১৫টি আঞ্চলিক পর্বের আয়োজন। এসব অঞ্চল থেকে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে হবে জাতীয় গণিত উৎসব ২০২৫।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ব্যবস্থাপনা করছে প্রথম আলো। আগামী জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবে জাতীয় পর্ব থেকে নির্বাচিত ৬ জনের একটি দল।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের উৎসবটি হয় নগরের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। এতে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলা থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চার স্তর থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থীকে জাতীয় পর্বের জন্য বাছাই করা হয়।

সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের শুরু হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) লুৎফুন নাহার জাতীয় পতাকা; বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এখলাছুর রহমান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ রায়হান উদ্দীন, প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা আলী ইউসুফ প্রমুখ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লুৎফুন নাহার বলেন, ‘শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা গণিতকে কতটুকু ভালোবাসে। সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে একেকজন আইনস্টাইন, একেকজন গ্যালিলিওকে দেখতে পাচ্ছি। প্রত্যাশা করছি, এই মাঠ থেকে কেউ কেউ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’

গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষক এ কে এম জিয়াউল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের গণিতের শিক্ষক আলতাব হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহযোগী সদস্য সকাল রায়, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক মির্জা তানজিম মুগ্ধ, সুইডেনপ্রবাসী সফটওয়্যার প্রকৌশলী ফাহিম ফেরদৌস।

শেষে বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

bdmo mymensingh regional 1

ফেনী

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় বেলুন উড়িয়ে ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় উৎসবের। এখানকার পরীক্ষায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ৩৯৬ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ অঞ্চল থেকে বাছাই করা হয় ৩০ জনকে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জাতীয় পতাকা; ফেনী সরকারি বালিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শীলা রানী সিংহ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা; ফেনীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের এবং ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ফেনী শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম রায়হান কাউসার বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন।

শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন ফেনী সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দিন, ফেনী সরকারি কলেজের মো. মোশারফ হোসেন, মো. জহির উদ্দিন, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের জাহিদুল ইসলাম, ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অসীম কুমার নাথ ও মো. মহিউদ্দিন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, গণিতের ঘাটতি কমাতে বেশি করে চর্চা করা উচিত। এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের গণিতপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।

অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী শাকিল আহমেদ এবং ফেনী বন্ধুসভার জান্নাত আক্তার জাহান, মণিকা রায়, দিপঙ্কর রায় চৌধুরী ও তন্ময় নাথ টিটু। উৎসবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জয়নাল হাজারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আবদুল হালিম।

Related Articles