শীতের সকালে কুয়াশা ফুঁড়ে বের হতে থাকে ঝলমলে রোদ। উষ্ণতার সঙ্গে বাড়তে থাকে উচ্ছ্বসিত খুদে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ পরিপূর্ণ। গতকাল শনিবার সেখানে অনুষ্ঠিত হয় গণিত উৎসব। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় রাজবাড়ীতে এ গণিত উৎসবে অংশ নেয় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার ৮০০ শিক্ষার্থী। সকাল নয়টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম খান। পরে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজা খানম এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন। এরপর ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান লেখা উৎসবের ব্যানার উড়িয়ে দেওয়া হয় সকালের রোদেলা আকাশে। উদ্বোধন ঘোষণা করা হয় রাজবাড়ী আঞ্চলিক গণিত উৎসবের। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গণিত যারা সমাধান করতে পারে তারাই বুঝতে পারে এতে কত আনন্দ। একটু মন দিয়ে চেষ্টা করলেই খুব সহজেই গণিত সমাধান করা যায়।’ সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব পরীক্ষা। এরপর বিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয় গণিত জয়ের গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন রাজবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধুরা। এরপর শুরু হয় মজার মজার প্রশ্ন নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব। রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস প্রশ্ন করে, মানুষের মন কোথায় থাকে ও আকার কেমন? আলো একসঙ্গে কণা ও তরঙ্গের আচরণ করে কীভাবে—এ প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ফরিদপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিফা তাসনিম। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিমুর রহমান, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গণিত প্রভাষক সুশান্ত কুমার দে, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সমীর ময় মণ্ডল, আরিফ হোসেন, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক রেজাউল হক, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পদার্থের শিক্ষক ইতিকা রানী দাস। পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার (এসপি) তাপতুন নাসরীন। তিনি বলেন, ‘গণিত মানুষকে যুক্তিবাদী হতে শেখায়। আর যারা যুক্তিবাদী তারা কখনো ইভ টিজিং, মাদক ও খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। যুক্তিবাদী মন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।’ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, মাকে খুশি করলে ভালো মানুষ হওয়া যায়। আর মাকে বড় করলে সেটা হয় দেশমাতৃকা। এ সময় তিনি ‘মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যা’কে না বলতে শিক্ষার্থীদের শপথ করান। উৎসবে অংশ নেয় শারীরিক প্রতিবন্ধী তামান্না আক্তার রিন্তু। সে ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি উৎসবে অংশ নেওয়ার অনুভূতি জানিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এতে অনেক অভিজ্ঞতা হলো, অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারলাম। উৎসবের বিভিন্ন পর্ব সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান এবং রাজবাড়ী বন্ধুসভার উপদেষ্টা শামীমা আক্তার মুনমুন। অনুষ্ঠানস্থলে গণিত একাডেমির বই, তাম্রলিপি, রকমারি ডটকম ও বন্ধুসভার স্টলে শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়। উৎসবে সার্বিক সহযোগিতা করেন রাজবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধুরা।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শরীয়তপুরে শুরু হয়েছে গণিত উৎসব। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় এবারের উৎসবের আয়োজনে আছে গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। শিক্ষার্থীদের গাণিতিক মেধার উৎকর্ষ বৃদ্ধি এবং থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ৫৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্য নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এ উৎসব শুরু হয়েছে।
সকালে শরীয়তপুরের পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ। এ সময় জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস এবং পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুববিষয়ক কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান এবং গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কায়কোবাদ। শরীয়তপুর বন্ধুসভার সহযোগিতায় এ উৎসব চলবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। অনেক শিক্ষার্থী উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছে।
মানুষের জীবনটাই একটা গণিত। জীবনের ভালোমন্দ সবটাই গুনতে হয়; গুনতে হবেও। তাই তো গণিত জয়েই মিলতে পারে জীবনের হিসাব-নিকাশও। গণিত জয়ের স্বপ্নে বিভোর গণিত উৎসবের খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন উপদেশ ছিল শিক্ষক ও গণিতবিদদের। পৌষের শীত আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মধ্যে সাতসকালেই উৎসবে মেতে উঠেছিল শিক্ষার্থীরাও। তাদের উচ্ছ্বাস-উল্লাসে জমে উঠেছিল গণিত উৎসবের আসর। গতকাল শনিবার চাঁদপুর ও রাঙামাটিতে বসে ১৩তম এ আসর। দুই স্থানে উৎসবে অংশ নেয় প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিজয়ী ৮০ জন যাবে জাতীয় গণিত উৎসবে। গণিত উৎসবের স্লোগান ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’। আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। আর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। চাঁদপুর: আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব শুরুর ঘণ্টা খানেক আগেই কানায় কানায় ভরে যায় শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সকাল সাড়ে নয়টায় প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের গাওয়া জাতীয় সংগীতে অংশ নিতে দাঁড়িয়ে যায় চাঁদপুর ও কুমিল্লার প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, বেলুন ও ইলিশের আদলে তৈরি প্ল্যাকার্ড। জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচনা হয় উৎসবের। হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক চাঁদপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমিনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘গণিতের মাধ্যমে ঘটে মেধার বিকাশ, হয় আইকিউ উন্নত। বোঝা যায় ভালোমন্দ। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই গণিত শেখা অপরিহার্য। এ উৎসবের মাধ্যমে গণিত সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাবে, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’ চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মানুষের জীবনটাই গণিত। গণিতকে জয় করলেই জীবনের হিসাবও মিলাতে পারবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় গণিত জয়ের প্রতিযোগিতায়। সোয়া এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে শুরু হয় বন্ধুসভার সদস্য ও চাঁদপুরের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। ঘণ্টা খানেক শিল্পীরা নাচে-গানে মাতিয়ে তোলেন পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ। দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসানের পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষক-অতিথিরা প্রশ্নের জবাব দেন। সেরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় বই পুরস্কার। এরই ফাঁকে এক মিনিট করে শুভেচ্ছা বক্তব্যে অংশ নেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, প্রভাষক শুক্কুর আলম মজুমদার, প্রভাষক মো. মাহফুজুর রহমান, ভেন্যু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মনজুরুল আলম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল, প্রথম আলোর কুমিল্লা অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক, চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ ও চাঁদপুর বন্ধুসভার সভাপতি আফরোজা খাতুন। উৎসবের শেষ পর্যায়ে মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে না বলার অঙ্গীকার করান। ভেন্যু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্মারক ক্রেস্ট ও বিজয়ী ৪০ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় মেডেল ও সনদ। রাঙামাটি: লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় গণিত উৎসব। প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে পাঁচ শ শিক্ষার্থী উৎসবে অংশগ্রহণ করে। উৎসব উদ্বোধন করেন লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এম এ মতিন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা। পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ এম এ মতিন, রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বাঞ্চিতা চাকমা, বাংলাদেশ গণিত অিলম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়কারী মুনির হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এম এ মতিন বলেন, ‘গণিত উৎসব শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে গণিত-ভীতি কমে যাচ্ছে। গণিতকে এখন সবাই উৎসাহ নিয়ে দেখছে।’ রাঙামাটিতে এ উৎসব আয়োজন করায় পার্বত্য এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টির জন্য প্রথম আলো ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানান এম এ মতিন। বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, প্রথম আলো শিক্ষার্থী ও তরুণদের মেধাবিকাশে কাজ করে যাওয়ায় দেশে মেধার বিকাশ ঘটছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত হয় সোয়া এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা। এরপর মুনির হাসানের সঞ্চালনায় শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দেন মুনির হাসানসহ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাবেদ মোর্শেদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নোভা আহমেদ ও আরশাদ চৌধুরী। গণিত উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ জন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।
‘বিড়ালের চোখ রাতে জ্বলজ্বল করলেও মানুষের চোখ একই রকম জ্বলজ্বল করে না কেন?’, ‘টিকটিকি কেন দেয়াল থেকে পড়ে যায় না?’, ‘হার্ডওয়্যারকে হার্ড এবং সফটওয়্যারকে সফট কেন বলা হয়?’—শিক্ষার্থীদের এমন নানা প্রশ্নে জেরবার হয়েছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী পর্বে আসা অতিথি-বিশেষজ্ঞরা। গণিতজয়ের পাশাপাশি দেশ এবং নিজেদের গড়ার শপথ নিয়েছে গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী উৎসবে আসা শিশু-কিশোরেরা। চট্টগ্রাম থেকে ৮০ ও নোয়াখালী অঞ্চল থেকে ৫০ জন প্রতিযোগী বিজয়ী হয়ে ঢাকায় উৎসবের মূল পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। চট্টগ্রাম: ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে নগরের সেন্ট প্লাসিডস হাইস্কুল মাঠে গতকাল অনুষ্ঠিত উৎসবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭১৩ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো, আর সহযোগিতায় প্রথম আলো বন্ধুসভা, চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে শপথ নিয়েছে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার। সকালে দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয় জাতীয়, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। তিনটি পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে সেন্ট প্লাসিড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার প্রদীপ লুইজ রোজারিও, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাঈদ মো. সোহেল ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। জাতীয় সংগীত ও উৎসব সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত গণিতবিষয়ক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে নানা জিজ্ঞাসায়। তারা একটি স্বনির্ভর দেশ উপহার দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকী। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরশাদ এম চৌধুরী বলেন, ‘খেলাধুলা, বিজ্ঞানচর্চা, সবকিছুই করতে হবে। তবেই গণিতকে জয় করা যাবে।’ শিক্ষার্থীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব ও প্রভাষক মোহম্মদ কামরুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বন্ধুসভা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম উদ্দিন। নোয়াখালী: পৌষের শীত, মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে নোয়াখালীর খুদে গণিতবিদেরা নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল গণিত উৎসবে যোগ দেয়। সকাল সাড়ে নয়টায় নোয়াখালী বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আবুল হোসেন এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন। নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী আঞ্চলিক পর্বের এ উৎসবে যোগ দেয়। গণিতের ওপর সোয়া এক ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাসান। তাঁর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের প্রধান নিজাম উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ফাতেহা খানম এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রভাষক আবিদুর রহমান। উৎসবে চারটি বিভাগে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে তাদের হাতে একটি করে পদক, টি-শার্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে চলছে আঞ্চলিক গণিত উৎসব। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় ১৩তম গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। সকালে নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী উৎসবের শুরু হয়। এ সময় জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আবুল হোসেন এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন। নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থী এ গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক—এই চার বিভাগে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।
তীব্র শীত আর কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকাল। তবে শীত-কুয়াশা দূরে ঠেলে সাতসকালেই গণিত জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছিল খুদে শিক্ষার্থীরা। তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে জমে ওঠে গণিত উৎসবের আসর। বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল রোববার বসেছিল ওই আসর। দুই স্থানে অংশ নেয় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। গণিত উৎসবের স্লোগান: ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’। আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। বগুড়া: সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসব। এ সময় জাতীয় পতাকা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক এ বি এম মামুনুল কবির ও জেলা পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক। বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। বগুড়া অঞ্চলের এই উৎসবে জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে আট শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাও আগে পাঠ্যসূচিতে গণিত নিতে ভয় করত। এখন শিক্ষার্থীরা উৎসাহ নিয়ে গণিত শেখে। গণিত উৎসব করে। শিক্ষার্থীরা এভাবেই একদিন গণিতে বিশ্বজয় করবে। এ দেশকে এগিয়ে নেবে।’ অন্য বক্তারা বলেন, গণিত মানেই কঠিন বিষয়, ভীতির বিষয়—উৎসবে আসা শিক্ষার্থীরা সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। উৎসবে গণিতের ওপর সোয়া এক ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষা হয়। শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। শিক্ষার্থীদের গণিত নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন মুনির হাসান ছাড়াও সরকারি আজিজুল হক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাহতাব হোসেন মণ্ডল, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে অংশ নেন বগুড়ার আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠী ও চর্চা সাংস্কৃতিক একাডেমির শিল্পীরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে ‘না’ বলে শপথ করান মুনির হাসান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা—এই তিন মাকে ভালোবাসতে হবে। গণিতকে ভালোবেসে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াড উৎসবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে তিন মাকে সারা বিশ্বে তুলে ধরা সম্ভব। সে জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।’ দিন শেষে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ সামস্-উল-আলম। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর অনেক সৃজনশীল কাজের মধ্যে গণিতের এই উৎসব আয়োজন এক অনবদ্য উদ্যোগ। মেধাবী জাতি ও সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়তে নিজেকে তৈরি করার বিকল্প নেই। গণিত জয়ের এই চ্যালেঞ্জের জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি থাকতে হবে। গণিত জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে জয় করতে হবে।’ বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম বলেন, ‘প্রথম আলো সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়। গণিতে বিশ্বজয়ের মাধ্যমে অবশ্যই শিক্ষার্থীরা একদিন প্রমাণ করবে কালকের পৃথিবীটা আমাদের হবে।’ বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ করিমের চার হাত-পা নেই। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী আসিফকে এই বাধা গণিত জয়ের স্বপ্ন দেখা থেকে দমাতে পারেনি। সাতসকালে হুইলচেয়ারে বসে নানার সঙ্গে গণিত উৎসবে এসেছিল সেও। উৎসবে চারটি ভাগে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে তাদের হাতে একটি করে পদক, টি-শার্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। ঝালকাঠি: সকাল নয়টায় ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয় গণিত উৎসবের। তবে সকাল সাতটা থেকেই শিক্ষার্থীরা মাঠে সমবেত হতে থাকে। উৎসবে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও ভোলার ৩০টি বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে সাত শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আতিয়ার রহমান। এ সময় জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হুমায়ুন ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান সমীরণ রায়। সৈয়দ আতিয়ার রহমান, মো. আলমগীর হুমায়ুন ও সমীরণ রায় ছাড়াও উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাহাত হোসেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাভেদ ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দত্ত, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম ও মানিক লাল ভদ্র, ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নান্টু রঞ্জন বিশ্বাস, প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি সাইফুর রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি আক্কাস সিকদার ও ঝালকাঠি বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্যে সৈয়দ আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমাদের ভালোভাবে গণিত শিখতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, গণিতের সমীকরণে বর্তমান বিশ্ব চলছে।’ কুইজ পর্বে নানা প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। চারটি বিভাগে ৫১ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। এর আগে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন ঝালকাঠি বন্ধুসভার সদস্যরা।
ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে গত ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘১২তম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৪’। এতে সারা দেশের ২২টি আঞ্চলিক উত্সবের বিজয়ীরা অংশ নেয়। উত্সবের প্রথম দিনে প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিনে ফলাফল ঘোষণা এবং সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। জাতীয় উত্সবে বিজয়ীদের তালিকা:
ক্যাটাগরি: প্রাইমারি চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস ২০১৪: শাহাদাত হোসেন নাঈম (কারিকাহোনিয়া দক্ষিণ কুরুয়া হাইস্কুল)। চ্যাম্পিয়ন: এম এম সামিউল বাশার (স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ) ও মো. জিয়াদুল হাসান (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল)। প্রথম রানারআপ: জুলফিকার জাওয়াদ (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল), দেওয়ান সাদমান হাসান (সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা), ইসরাক নূর (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল), হাসিব হাসান মুন্সি (এস এম মডেল গভ. হাইস্কুল, ফরিদপুর), তাসনিম তাজ অবন্তি (ভোলা গভ. গার্লস হাইস্কুল), নাফিস আহমেদ (ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ) ও শেখ আশরাফুজ্জামান নাফিস (মনিপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ)। দ্বিতীয় রানারআপ: তামজিদ আহমেদ (বিএএফ শাহীন কলেজ, যশোর), রায়েদ আবির আহসান (সামারফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল), আশফাকুল হুসনা নাওশি (ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ), মো. ফাইয়্যেদ ইমতিয়াজ (বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আমির আবদুল্লাহ জাকারিয়া (সেন্ট ফিলিপস স্কুল, দিনাজপুর), মুস্তাফা মুহাইমিন (সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা), রাইয়ান সিদ্দিকী (সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা), ইসমাম খান (অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা) ও রায়া তাবাসসুম (ওয়াই ডব্লিউ সি এ জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল, ঢাকা)।
ক্যাটাগরি: জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস ২০১৪: তাহমিদ আনজুম খান (রংপুর জিলা স্কুল)। চ্যাম্পিয়ন: হাসান মেসবাউল আলি তাহের (মনিপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ), তানজিম আজওয়াদ জামান (সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা), রাহুল সাহা (ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ) ও প্রভা মল্লিকা পণ্ডিত (বিদ্যাময়ী গভ. গার্লস হাইস্কুল)। প্রথম রানারআপ: স্বরূপ সিদ্ধার্থ মণ্ডল (নওগাঁ কে ডি গভ. হাইস্কুল, রাজশাহী), এ এইচ এম ওসামা হক (এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি হাইস্কুল, ময়মনসিংহ), মো. ওয়াসি আল মোস্তাকিম (গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, রাজশাহী), রাগিব ফারহাত হাসান (বিএএফ শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ঢাকা), এম হাসিন ইসমাম জিত (ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ), দেবজিত পণ্ডিত (দিনাজপুর জিলা স্কুল) ও আইমান জহির আকিফ, (সিলেট গভ. পাইলট হাইস্কুল)। দ্বিতীয় রানারআপ গোধূলি রায় (নাইহাটি সেকেন্ডারি গার্লস হাইস্কুল, খুলনা), সৌভিক সাহা রায় (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল), সোহম সানজানান সৌমিপ (ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ), অনুপমা দেবনাথ (বিদ্যাময়ী গভ. গার্লস হাইস্কুল), কানিজ জাহান (বিদ্যাময়ী গভ. গার্লস হাইস্কুল), অর্ণব চৌধুরী (ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ), আশরাফুল ইসলাম শান্ত সিকদার (সিলেট গভ. পাইলট হাইস্কুল), সৈয়দ আশফাক তাসিন (পটুয়াখালী গভ. জুবিলী হাইস্কুল), মো. ফারহান মাসুদ (বগুড়া জিলা স্কুল) ও মো. গোলাম মোসাব্বির জয় (বরিশাল জিলা স্কুল)।
ক্যাটাগরি: সেকেন্ডারি চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস ২০১৪: প্রীতম কুণ্ডু (সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল)। চ্যাম্পিয়ন: সাদমান সাকিব (ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ), আসিফ-ই-ইলাহী (সিলেট গভ. পাইলট হাইস্কুল), ফাহিম তাজওয়ার (গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, রাজশাহী), মো. সাব্বির রহমান (গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল), কাজী মো. মারফুম আবিদ (চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল), সাজ্জাদ পারভেজ শুভ (পঞ্চগড় বি. পি. গভ. হাইস্কুল), সাজিদ আখতার তূর্য (সিরাজগঞ্জ বিএল গভ. হাইস্কুল) ও সাইফুল্লাহ তালুকদার (বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া)। প্রথম রানারআপ: আদিব হাসান (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল), মো. মুশফিকুর রহমান (সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা), এস এম হাসিবুল হক হিমেল (নওগাঁ কে ডি গভ. হাইস্কুল, রাজশাহী), জুনায়েদ আহমেদ (দিনাজপুর জিলা স্কুল) ও জুবায়ের রহমান নির্ঝর (অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)। দ্বিতীয় রানারআপ: জুলকার নাইন ভুঁইয়া (চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল), রাবিব ইবরাত (ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ময়মনসিংহ), মো. নাফিস ফাইয়াজ (চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) ও আরিয়ান শামীম (শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল)।
ক্যাটাগরি: হায়ার সেকেন্ডারি চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস ২০১৪: নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (ঢাকা কলেজ)। চ্যাম্পিয়ন: মো. জাহিদুল হাসান (আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ)। প্রথম রানারআপ: এম এম আল ফারাবী (গভ. আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া), ফাহিম শাহরিয়ার সাক্ষর (নটর ডেম কলেজ), আজওয়াদ আনজুম ইসলাম (এমসি কলেজ, সিলেট), নাফিস তিহাম (ঢাকা সিটি কলেজ), মো. সামিউর রহমান মীর (নটর ডেম কলেজ), মোয়াজ মাহমুদ (বিএএফ শাহীন কলেজ, যশোর), মো. শাহীবুর রহমান মিয়াদ (নটর ডেম কলেজ) ও শেখ ইসমাইল হোসেন (সাতক্ষীরা গভ. কলেজ)। দ্বিতীয় রানারআপ: দিব্যাতনয় ভট্টাচার্য (চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল), তানভীর মুত্তাকীন (ঢাকা কলেজ), সাফায়াত উল্লাহ (ফেনী সরকারি কলেজ), মুস্তাকিম মিম (রাজশাহী কলেজ)
বিশেষ পুরস্কার সজল-কাজল স্মৃতি গণিত পুরস্কার ২০১৪: মো. ফারহান শিফা মাহি (আনাম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল)। জেবুন্নেসা হাসেম গণিত পুরস্কার ২০১৪: মেহনাজ হূদি (ভিকারুননিসা নূন স্কুল)। আবিদ রেজা চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪: আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী (ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ)। ইঞ্জি. লুত্ফর রহমান স্মৃতি গণিত পুরস্কার ২০১৪: থানিক নূর সামিন (চট্টগাম গভ. হাইস্কুল)। এম সেকান্দার আলি স্মৃতি গণিত পুরস্কার ২০১৪: এস এম নায়েমুল ইসলাম (বরিশাল জিলা স্কুল)। তাজিমা এইচ মজুমদার গণিত পুরস্কার ২০১৪: প্রভা মল্লিকা পণ্ডিত (বিদ্যাময়ী গভ. গার্লস হাইস্কুল) দেলোয়ারা বেগম গণিত পুরস্কার ২০১৪: মো. সানজিদ আনোয়ার (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল) গৌরাঙ্গ দেব রায় স্মৃতি গণিত পুরস্কার ২০১৪: তাসনিম ফারহান ফাতিন (কুষ্টিয়া জিলা স্কুল)। জামাল নজরুল ইসলাম স্মৃতি গণিত পুরস্কার ২০১৪: নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (ঢাকা কলেজ)। সুফিয়া-নুরুল গণিত পুরস্কার ২০১৪: তাহমিদ হাসান (গভ. এম এম সিটি কলেজ, খুলনা)।
জাতীয় রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতা ২০১৪ চ্যাম্পিয়ন: হাসান জহিরুল ইসলাম (নটর ডেম কলেজ)। প্রথম রানারআপ: হুমায়ুন কবির রাসেল (আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ)। দ্বিতীয় রানারআপ: সাকিব বিন রশিদ (আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ)।
সুডোকু প্রতিযোগিতা ২০১৪ চ্যাম্পিয়ন: রিফা মুহাইমিনা রহমান (ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর)। প্রথম রানারআপ: সাহিকা আহমেদ (ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যশোর)। দ্বিতীয় রানারআপ: হাশিম ইসরাক (ময়মনসিংহ জিলা স্কুল)।
গণিতের জিয়ন কাঠিতে দেশ জাগানোর অঙ্গীকার করল শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে তিন ‘ম’—মুখস্থ, মিথ্যা ও মাদককে না বলার শপথ করেছে তারা। রংপুর জিলা স্কুল মাঠে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৫-এর আঞ্চলিক পর্বে শিক্ষার্থীরা এই অঙ্গীকার করে। গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো—স্লোগানের এই উৎসবে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের ১০৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে জড়ো হতে থাকেন। সকাল নয়টার আগেই পুরো মাঠ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এ টি এম মাহবুব-উল-করিম। আন্তর্জাতিক গণিত উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক অপূর্ব রায় ও বাংলাদেশ গণিত উৎসবের পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, ভালো শিক্ষার্থী হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। মাহবুব-উল করিম বলেন, প্রথম আলো পত্রিকা গণিত উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করছে। উদ্বোধনী পর্বের পর শিক্ষার্থীরা সোয়া ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষায় বসে। পরে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব হয়। ‘শূন্য দিয়ে কোনো কিছুকে ভাগ করা যায় না কেন’, ‘মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে’, ‘আকাশের তারা কেন গণনা করা যায় না’—এমন অনেক মজার মজার প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নের উত্তর দেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র সরকার, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষক শাহজাহান মিয়া, পীরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আলমগীর মো. সাইফুল ইসলাম, শঠিবাড়ী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তারিক প্রধান। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বন্ধুসভার সভাপতি শাহজাদ হোসেন ও প্রথম আলোর রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। উৎসবে বন্ধুসভার বন্ধুরা সংগীত পরিবেশন করেন। উৎসবে চার ক্যাটাগরিতে ৬০ জন বিজয়ীকে সনদ দেওয়া হয়। তাদের পরিয়ে দেওয়া হয় পদক ও টি-শার্ট।
গণিত গড়ে যুক্তিবাদী মন