Blog

Latest articles

Explore our latest blog post where we share articles, news, insights, and more!

শেষ হলো ২য় লীলাবতী গণিত ক্যাম্প ২০১৩

‘গণিত ক্যাম্প! শুনলেই কেমন ভয় ভয় লাগত। মনে হয়েছিল, এখানে সবাই সারাক্ষণ ডুবে থাকবে গণিতের মহাসমুদ্রে!’ বলল চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থী সমাপ্তি শিকদার। তবে ক্যাম্পে ভাবনার সঙ্গে কোনো মিল পেল না সে। কেননা এখানে আড্ডা, গান, গল্প সবই আছে। আর সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি বিষয়—গণিত!
‘গণিতের সমস্যা এত আনন্দের সঙ্গে সমাধান করা যায়, তা জানা ছিল না। সমস্যা সমাধানের নতুন নতুন অনেক কৌশল শিখেছি। এ ছাড়া ছিল রুটিনমাফিক ক্লাস, একসঙ্গে আড্ডা ও নতুন বন্ধুতা। সব মিলিয়ে অনেক মজা।’ বলে অয়ন্তিকা রিন্তি বোস। এবারই প্রথম আবাসিক গণিত ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিল দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে।


আঞ্চলিক ও জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে মেয়েদের সাফল্য তুলনামূলকভাবে কমতে থাকায় শুধু মেয়েদের জন্যই যদি কোনো ক্যাম্পের আয়োজন করা যায়, তাহলে কেমন হয়? এমন ভাবনা থেকেই এই ক্যাম্পের আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। যার নাম দেওয়া হয় ‘লীলাবতী গণিত ক্যাম্প’। একাদশ শতকের ভারতীয় গণিতবিদ লীলাবতীর নামে এই ক্যাম্প। এর আগেও মেয়েদের নিয়ে এমন একটি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এটি ছিল দ্বিতীয় আয়োজন।
২২ থেকে ২৪ আগস্ট ঢাকার আদাবরে পদক্ষেপ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডরমিটরিতে অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পটি। দশম ও একাদশ গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সারা দেশ থেকে নির্বাচিত সেরা ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এই ক্যাম্পে। ক্যাম্পে অংশ নেওয়া সবাই ছিল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ক্যাম্পটির পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন ২০০৯ সালের অলিম্পিয়াডে আন্তর্জাতিক গণিত (আইএমও) ব্রোঞ্জপদকজয়ী ও বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) অধ্যয়নরত নাজিয়া চৌধুরী।
২২ আগস্ট সকালে শুরুতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে ক্যাম্পটি শুরু করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। তার পর থেকে শুরু হয় ক্লাস, গ্রুপ স্টাডি, হোমওয়ার্ক ও সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা। দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ধারণা দেওয়া হয় জটিল সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে আগের আইএমওতে কয়েকজন অংশগ্রহণকারী। গণিত ক্যাম্প, তাই বলে কি আনন্দ থেমে থাকবে? বাড়ি থেকে অনেক দূরে অন্য রকম একটি পরিবেশে গণিতের এ ক্যাম্পকে আনন্দমুখর করে রাখতে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। চমক হাসানের ‘গণিতের রঙ্গ’-এর ভিডিও প্রদর্শন। দেখানো হয়েছে সিনেমা। ছিল ক্যাম্পারদের অংশগ্রহণে গান, আবৃত্তি, খেলাধুলা, গল্প বলাসহ নানা আয়োজন।
ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে যোগ দিয়েছিলেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আইএমওতে বাংলাদেশের এমন একটি দল দেখতে চাই, যেখানে ছয় সদস্যের মধ্যে ছয়জনই থাকবে মেয়ে।’ ক্যাম্পে আরও যোগ দিয়েছিলেন গণিত অলিম্পিয়াডের সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, অভীক রায়, গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর চিকিৎসক সৌমিত্র চক্রবর্তীসহ অনেকে। ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর জন্য ছিল সনদপত্র। ক্যাম্পের পুরো আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এবং ব্যবস্থাপনায় ছিল প্রথম আলো।

You May also Like

Image