Blog

Latest articles

Explore our latest blog post where we share articles, news, insights, and more!

জাতীয় গণিত উৎসব ২০১৫ : গণিত নিয়ে মজার উৎসব

5গণিত নিয়ে মজার উৎসবে মেতেছিল সহস্রাধিক শিশু-কিশোর। গণিতের জটিল সব সমস্যায় তাদের ছিল না কোনো ভয়। পরীক্ষার সময় তাদের চোখেমুখে ছিল গণিতের চিন্তার ছাপ। পরীক্ষাকক্ষে এ দৃশ্য দেখে কয়েকজন স্বনামধন্য বিজ্ঞানী-গণিতবিদ বললেন, শিশুরা গণিত নিয়ে চিন্তা করছে। অথচ কয়েক বছর আগেও গণিতের প্রশ্ন হাতে নেওয়া শিশুর মুখে ভয়ের ছাপ চোখে পড়ত।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে দিনব্যাপী এই উৎসবে মেতেছিল বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। সারা দেশ থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর গতকাল তারা অংশ নেয় জাতীয় গণিত উৎসবে। এটি ছিল ১৩তম জাতীয় উৎসব। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ উৎসবের আয়োজন করে।
হরতাল-অবরোধের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় উৎসবে অংশ নেয় শিশু-কিশোরেরা। দিনটি পরীক্ষা ও আনন্দ আয়োজনে পার করে তারা। শেষ বিকেলে ফল ঘোষণার পর পুরস্কারপ্রাপ্তদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। তবে যারা পুরস্কার পায়নি, তাদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়নি।
খুলনার সাইফ আল মাহমুদ আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিল। বাবার সঙ্গে আসা সাইফ জানাল, ‘আমার ইচ্ছে বড় হয়ে বিজ্ঞানী হওয়ার। অঙ্ক করতে আমার ভালো লাগে। একদিন আমিও আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে যাব।’
সিরাজগঞ্জ থেকে চতুর্থ ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে সোমা রাণী পাল এসেছেন উৎসবে। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় ছোট ছেলে রানার্সআপ এবং বড় ছেলে চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়নস হয়েছে। সোমা রাণী বলেন, ‘মেধা বিকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যম এ উৎসব। পাঁচ বছর ধরে বড় ছেলে অংশ নিচ্ছে। যত দিন ওদের যোগ্যতা থাকবে, তত দিন অংশ নিতে উৎসাহ দিয়ে যাব।’
এবারের জাতীয় উৎসবে চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৮৪ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এর মধ্যে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ান অব দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের শিক্ষার্থী আদিব হাসান। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় সে চ্যাম্পিয়ান অব দ্য অলিম্পিয়াড পুরস্কারেও ভূষিত হয়। এ ছাড়া সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলের মো. সাব্বির রহমান, জুনিয়রে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মাশরুর হাসান ভূঁইয়া ও প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে সিরাজগঞ্জ ক্যালেক্টরেট স্কুলের মো. ইরফান আসিফ রহমান চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস পুরস্কার পেয়েছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ৫৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যদের নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৪টি জেলা শহরে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে বাছাই করা ১ হাজার ২৮১ জন জাতীয় উৎসবে অংশ নিয়েছে।
পৌনে নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় উৎসব। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশন। গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ। এরপর অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ ও প্রযুক্তিতে উন্নতি করতে গেলে গণিতে ভালো হতে হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, সমাজে যত পশ্চাৎপদতা আছে, সব দূর হবে গণিতের মাধ্যমে।
কে এস তাবরেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা শিক্ষক-অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান।
সকাল পৌনে ১০টায় লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি—এই চার ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়। প্রাইমারি ও জুনিয়র ক্যাটাগরি দেড় ঘণ্টা এবং সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে খুদে গণিতবিদেরা আবারও মাঠে জড়ো হলে রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতার বাছাইপর্ব হয়। বিডি গোস্ট রাইডার্সের সাইকেল স্টান্টের পর বিরতি হয় উৎসবে। গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক বই দিয়ে সাজানো বইমেলা এই উৎসবে বিশেষ মাত্রা যোগ করে। বিরতির পর বেলা সোয়া দুইটায় ওয়াটার রকেট উড্ডয়ন করা হয়। এরপর সিসিমপুর ও আলোর ঝিলিক পরিবেশন করা হয়। মঞ্চে নৃত্যরঙের নাচও উপভোগ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিরা। এ ছাড়া রুবিকস কিউব ও সুডোকু প্রতিযোগিতা হয়।
এবার গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি দুজনকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে। এঁরা হলেন বিশিষ্ট গণিতবিদ অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী ও অধ্যাপক ফরিদা বানু। দিনব্যাপী উৎসবের বিভিন্ন পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান, অধ্যাপক লুৎফুজ্জামান, বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান, গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী, জ্যোতির্বিদ এফ আর সরকার, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, অধ্যাপক আবদুল হাকিম খান, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, প্রয়াত অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের স্ত্রী সুরাইয়া ইসলাম, অধ্যাপক কাওসার জাহান, মনোচিকিৎসক মোহিত কামাল, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল হাসান প্রমুখ।
বিভিন্ন পর্ব সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, কমিটির অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান ও তামিম শাহরিয়ার। উৎসবে সহায়তা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা এবং ম্যাথ অলিম্পিয়াড ভলান্টিয়ার্সের (মুভার্স) ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক।

You May also Like

Image