গণিতের বিশ্ব আসর বসছে এবার সূর্যোদয়ের দেশে
ঢাকা বিমানবন্দর, রাত ১২টা ৫০ মিনিট। মধ্যরাতে ঢাকার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে এত ব্যস্ত থাকে, তা সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। দিনের বেলায় সাধারণ যে ভিড় থাকে, রাতে যেন তা বেড়ে যায়। এর মধ্যে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন তো আছে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা অপেক্ষা করছি সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে যাওয়ার জন্য। আমাদের সাতজনের বাংলাদেশ দল তৈরি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের এবারের আয়োজনের জন্য। সেই উদ্দেশে৵ই বুধবার (৫ জুলাই) রাতে রওনা দিয়েছি জাপানের উদ্দেশে।
ঢাকা বিমানবন্দর, রাত ১২টা ৫০ মিনিট। মধ্যরাতে ঢাকার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে এত ব্যস্ত থাকে, তা সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। দিনের বেলায় সাধারণ যে ভিড় থাকে, রাতে যেন তা বেড়ে যায়। এর মধ্যে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন তো আছে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা অপেক্ষা করছি সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে যাওয়ার জন্য। আমাদের সাতজনের বাংলাদেশ দল তৈরি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের এবারের আয়োজনের জন্য। সেই উদ্দেশে৵ই বুধবার (৫ জুলাই) রাতে রওনা দিয়েছি জাপানের উদ্দেশে।
বাংলাদেশ গণিত দলের ছয় সদস্যের দলে আছে ঢাকা কলেজের এস এম এ নাহিয়ান, রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাহরিয়ার হোসেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ দিশা, চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের দেবপ্রিয় সাহা রায় এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইমাদ উদ্দীন আহমাদ হাসিন।
এ বছর জাপানে শতাধিক দেশের পাঁচ শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেবে। আগামীকাল শুক্রবার (৭ জুলাই) জাপানের চিবা শহরে উদ্বোধনী পর্বের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ১২ জুলাই সমাপনী পর্বে শেষ হবে এবারের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। দলনেতা বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদার ৩ জুলাই জাপানে পৌঁছেছেন। উপদল নেতা বাংলাদেশ গণিত দলের সাবেক সদস্য রৌপ্যপদকজয়ী নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যোগ দেবেন। আমি পর্যবেক্ষক হিসেবে সঙ্গ দিচ্ছি গণিত অলিম্পিয়াডের এই ছয় শিক্ষার্থীকে।

যাত্রাবিরতি
বাসে চড়লে যাত্রাবিরতি সাধারণ বিষয়, কিন্তু বিমানের যাত্রাবিরতিকে ট্রানজিট বলে। আমরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বিমানযাত্রা শেষে চীনের গোয়াংজুর বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছাই। সবই এখানে মেড ইন চায়না। আমার প্রথম চীন ভ্রমণ।
আমরা জ্ঞানের লড়াই করতে চায়না সাউদার্নের বিমানে চড়ে চীনে যাত্রাবিরতি করলাম। গোয়াংজুর বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বয়স কত ভাবুন তো? ১৯৩২ সালে যাত্রা শুরু করে এই বিমানবন্দর, প্রায় ৯১ বছরের পুরোনো বিমানবন্দর। চীনের সবচেয়ে ব্যস্ত এ বিমানবন্দর নাকি পৃথিবীর অষ্টম ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ব্যস্ত হলেও এই বিমানবন্দরে দেখলাম সব আধুনিক অনুষঙ্গ। ডিজটাল বিলবোর্ড, বিশাল বিশাল কনভেয়ার বেল্ট, কফিশপ আর হরেক বাহারি পণ্যের দোকান।

গন্তব্য সূর্যোদয়ের দেশ
ছোটবেলায় বই থেকে শুধু পড়েই গেছি, জাপান সূর্যোদয়ের দেশ। সূর্য এশিয়া মহাদেশের জাপানে আগে দেখা যায়, যে কারণে এ নাম। সেই দেশের রাজধানী টোকিও আমাদের গন্তব্য। চীন আর জাপান মানচিত্রে পাশাপাশি দেখা যায়, কিন্তু বিমানে যেতে আমাদের সময় লেগেছে সাড়ে চার ঘণ্টা। বিমানে বসে গল্প করে, সিনেমা দেখে কি আর সময় কাটে? হালকা ঘুমের ভাব আসতেই বিমানে ইংরেজি, জাপানি আর চীনা ভাষায় ডাক, আমরা পৌছে গেছি টোকিওতে। টোকিও শহরের ওটা নামের এলাকায় অবস্থিত হানেদা বিমানবন্দর। এর বয়সও অনেক, ১৯৩১ সালে স্থাপিত। হানেদা বিমানবন্দরের ভেতরে দেখলে ঢাকার যেকোনো শপিং মলের কথা পড়বে। এখানে গ্রাহকেরা ভ্রমণে যাচ্ছেন, নাকি শপিং করতে আসছেন, তা প্রথমে দেখে বোঝা গেল না। আমরা একটু ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ পাই ব্যাগ সংগ্রহ ও ইমিগ্রেশনের ধাপ পেরোনোর সময়। জাপানি উষ্ণতার ছাপ এরই মধ্যে চোখে পড়েছে বিমানবন্দরে।

নতুন এক দেশের নানান সংস্কৃতি আর বিষয়কে জানতে আমরা পুরো গণিত দল ভীষণ রোমাঞ্চিত। সেই রোমাঞ্চ নিয়ে আমরা ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষে বের হই। সেখানে আমাদের দেখেই হাতে ইশারা করতে দেখা যায় এক তরুণকে। তার সামনে ওয়েলকাম, আইএমও ২০২৩–এর লোগো লেখা প্ল্যাকার্ড। কাছে যেতে বলে ওঠে, সবাইকে জাপানে স্বাগত। পরিচয় পর্ব শেষে আয়োজকদের অপেক্ষমাণ বাসে রওনা হই ভেন্যুর উদ্দেশে।
বাসে আমরা সাতজন, প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ শেষ পৌঁছাই চিবা শহরে। যেখানে বসছে এবারের আইএমও। এপা হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের সামনে বাস থামতে আবার আমাদের স্বাগত জানান বাংলাদেশ দলের গাইড হাইয়ু মারিয়াম। এই হোটেলে সব অংশগ্রহণকারী, উপদল নেতা ও পর্যবেক্ষকেরা থাকবেন। ছোট আনুষ্ঠানিকতা পর্ব শেষ করে আইডি কার্ড, টি–শার্ট, ব্যাগ, মগসহ নানা উপহার দেওয়া হয় সবাইকে। গাইডের নির্দেশমতো চলে যাই রুমে। কারণ, একটু পরেই রাতের খাবার পরিবেশন করা হবে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজনের মাধ্যমে ৬৪তম আইএমওর জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়। দল নির্বাচন ও এর আনুষাঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
Share with others
Recent Posts
Recently published articles!
-
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
-
মুনির হাসান; বাথ, যুক্তরাজ্য থেকে