নারায়ণগঞ্জে আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চলতি বছরের ডাচ্–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের ষষ্ঠ আঞ্চলিক পর্ব। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের আমলাপাড়ার নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলে বসে এই উৎসবের আয়োজন। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে বাছাই অলিম্পিয়াড থেকে নির্বাচিত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই পর্বে অংশ নেয়।
উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। এ ছাড়া ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নারায়ণগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক শ্যামল কুমার সাহা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন।
উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে আনোয়ার হোসেন বলেন, গণিতকে মাদার অব সায়েন্স বলা হয়। কারণ, গণিত না থাকলে বিজ্ঞান এক অর্থে অসার হয়ে যাবে।
আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ১টি স্বর্ণপদক, ৭টি রৌপ্যপদক, ৩২টি ব্রোঞ্জপদক এবং ৩৮টি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বুদ্ধির চর্চা করতে হলে আমাদের গণিত বই পড়তে হবে, অনুশীলনের আগে বর্ণনা পড়তে হবে, উদাহরণের অঙ্কগুলো পড়তে হবে। আমরা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গল্পের বই পড়ব।’
শ্যামল কুমার সাহা বলেন, ‘গণিত হচ্ছে বুদ্ধিচর্চা ও বুদ্ধিবিকাশের মাধ্যম। গণিতের মাধ্যমে আমরা বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে পারি।’
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পর্ব থেকে ২৫ জনকে বিজয়ী ঘোষণ করা হয়। তাদের পদক, টি-শার্ট ও সনদ দেওয়া হয়। এসব শিক্ষার্থী ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় গণিত উৎসবে অংশ নেবে।
উৎসবে প্রশ্নোত্তর পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নারায়ণগঞ্জ কলেজের গণিতের প্রভাষক ছালেহ আকরাম আল আমিন, কম্পিউটারবিজ্ঞানের প্রভাষক মুহাম্মদ খায়রুজ্জামান, রণদাপ্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কাশেম জামাল, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায় প্রমুখ।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কল্পনাশক্তি বাড়াতে হবে। এ জন্য আমরা বলি, মুখস্থ করবে না। তোমাদের কল্পনা করার শক্তি, মস্তিষ্ক ব্যবহারের শক্তি বাড়াতে হবে।’
মুনির হাসান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা একমাত্র আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে শতাধিক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে স্বর্ণপদক পেয়েছি। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা পৃথিবীর বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, দেশে–বিদেশে কাজ করে।’
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের সংগীতশিক্ষিক রুমা ধরের নেতৃত্বে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত, গণিতের গান, গণিত জয়ের গান পরিবেশন করে। এ ছাড়া বন্ধুসভার বন্ধুদের অংশগ্রহণে ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মণিকা আক্তার।
আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্ব। ঢাকায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় গণিত উৎসবের জন্য শিক্ষার্থী বাছাইয়ের জন্য এভাবে মোট ২০টি আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের আয়োজন করছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। উৎসবের খবর মিলবে গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট এবং অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে।