২১তম জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে জুনিয়র ও সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির ভালো ফল অর্জনকারীদের মধ্য থেকে সেরাদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী অনাবাসিক জামিলুর রেজা চৌধুরী হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্প (১ম পর্ব) আয়োজন করা হয়েছে। ১ম পর্বের বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পটির ২য় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
শেষ হলো গণিতের বিশ্ব আসর। আজ বুধবার জাপানের স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পদক প্রদান করা হয়। প্রথমে পুরো আসরের নানা ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এরপর খুদে গণিতবিদদের উদ্দেশে চিবা শহরের মেয়র কামিয়া সুনিচি বলেন, ভবিষ্যতের মেধাবী তরুণেরা নতুন পৃথিবী তৈরির জন্য এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ফিরছে। সবাইকে চিবা ও জাপানের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের তাপমাত্রা বলা যায়। এমনই এক রৌদ্রোজ্জ্বল, কিন্তু কাঠফাটা রৌদ্রতপ্ত দিনে একদল খুদে গণিতবিদের সন্ধান মিলল কল্পরাজ্যে। গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে নানা রাইডের রহস্য উন্মোচন করতেই যেন সব প্রচেষ্টা।
সাড়ে চার ঘণ্টার পরীক্ষা। বাংলাদেশের মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুই–তিন ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। সেখানে সাড়ে চার ঘণ্টা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের মূল পর্বে। আজ রোববার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় ও শেষ দিনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় বীজগণিত, কম্বিনেটরিকস ও জ্যামিতির ওপর তিনটি গাণিতিক সমস্যা সমাধান করেন প্রতিযোগীরা।
ইরাশাইমাসে, জাপানি ভাষায় স্বাগতম বলা হয়। সেই ডাকেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পরীক্ষার প্রথম দিনে ভেন্যুতে প্রবেশ করে বিশ্বের নানা দেশের খুদে গণিতবিদেরা। জাপানের চিবা শহরে মাকুহারি মেসের বিশাল কক্ষে চলছে গণিত অলিম্পিয়াডের পরীক্ষা। দুই দিনের পরীক্ষায় প্রথম দিন বেশ উচ্ছল মনোভাব নিয়েই বাংলাদেশের গণিত দল অংশ নিয়েছে।
পরীক্ষা ঘণ্টা বাজল
সকালের প্রাতরাশ সেরেই আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় ১০৭টি দেশের ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থী ৬২ জন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ১৯ বারের মতো অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আজ প্রথম দিনের পরীক্ষায় তিনটি সমস্যা সমাধানের সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। সংখ্যাতত্ত্ব, জ্যামিতি ও বীজগণিতের প্রশ্নের সমাধান করে তারা। প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা জানায়, পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রশ্ন নিয়ে বেশ আলাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় সব শিক্ষার্থীকে।

এবারের গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের দলের সদস্যরা হলো ঢাকা কলেজের এস এম এ নাহিয়ান, রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাহরিয়ার হোসেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ, চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের দেবপ্রিয় সাহা রায় ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইমাদ উদ্দীন আহমাদ।
বিভিন্ন দলের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়
বাংলাদেশ দলের উপদল নেতা নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও নানা দেশের পর্যবেক্ষক ও ডেপুটি লিডারদের সঙ্গে আলাপের সুযোগ হয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, গণিত নিয়ে চর্চা ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কথা জানতে পেরেছি। গণিতে এশিয়ার দেশগুলো কেন ভালো করে, কিংবা ইউরোপের নানা দেশ আগে ভালো করত, তা নিয়ে বোঝার সুযোগ পেয়েছি আমরা। বাংলাদেশে যে গণিত উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে, তা অনেকেই প্রথমবার জেনে অবাকই হচ্ছে।

আগামীকাল শেষ দিনের পরীক্ষা
আগামীকাল ৯ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ও শেষ দিনের অংশ অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা এখন সময়টা হোটেলে ও গেমস জোনেই কাটাচ্ছে। গেমস খেললেও মাথায় যে অঙ্ক ঘুরছে, তা সবার চেহারায় বেশ স্পষ্টই দেখা গেল।
দাবা খেলা তো ছিলই। এরই মধ্যে দেখা যায়, নানা জাপানি মেধাভিত্তিক পাজল, সেট, মাফিয়া, কার্ডগেমসসহ অনেক খেলাধুলা। শিক্ষার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়েই খেলার বাহানায় পরস্পরের সঙ্গে চুটিয়ে নানা বিষয়ে গল্প করছে।

সুন্দর শহর চিবা
জাপানের চিবা শহরটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয়। শহরটিতে জাপানের দুটি ডিজনি পার্ক অবস্থিত বলে অনেক দেশের পর্যটক আসেন। সমুদ্রপারের দারুণ মুগ্ধকর একটি শহর চিবা। এই শহরের পাশেই আছে জাপানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমুদ্রতীর। বিচে নানা ধরনের ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য আলোচিত। খুদে গণিতবিদেরা এরই মধ্যে জাপানের সংস্কৃতি ও খাবারদাবারের অভিজ্ঞতা নেওয়া শুরু করেছে।

৫০ তলা হোটেল থাকছে গণিত দল
এবারের গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী, উপদলনেতা ও পর্যবেক্ষকেরা চিবার সবচেয়ে উঁচু হোটেলগুলোর একটি এপিএ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট টোকিও বে মাকুহারিতে অবস্থান করছেন। আমাদের খুদে গণিতবিদেরা এখানেই। শহরের ঠিক মধ্যখানে দূর থেকে দেখে মনে হয়, কাচের তৈরি একটা চকলেটের বাক্স দাঁড়িয়ে আছে। ৫০ তলা উচ্চতার কাচের আবরণে ঘেরা হোটেলটি দৃষ্টিনন্দনই বটে। দিনের বেলা সব সময়ই আকাশে নীল রঙের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় হোটেলে। আবার সন্ধ্যার পর দারুণ আলোকসজ্জার কারণে দৃষ্টি ফেরানো যায় না। পরীক্ষার আগে-পরে শিক্ষার্থীদের বেশ বড় একটা কোলাহল দেখা যায় হোটেলের সামনের টোকিও বে মাকুহারি হলের নিচে জেন স্ট্রিট হাবে।
উল্লেখ্য, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়। দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
আলোহীন মিলনায়তনে ভেসে আসছে বাদ্যযন্ত্রের সুর। এরই মধ্যে হঠাৎ চমকানো আলোর ছটায় চোখের সামনে ভেসে উঠল বিশাল এক মঞ্চ। এই আয়োজন ছিল ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী আসরের শুরুতে। এবারের আসর বসেছে জাপানের চিবা শহরে।
ঢাকা বিমানবন্দর, রাত ১২টা ৫০ মিনিট। মধ্যরাতে ঢাকার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে এত ব্যস্ত থাকে, তা সচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। দিনের বেলায় সাধারণ যে ভিড় থাকে, রাতে যেন তা বেড়ে যায়। এর মধ্যে ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন তো আছে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা অপেক্ষা করছি সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে যাওয়ার জন্য। আমাদের সাতজনের বাংলাদেশ দল তৈরি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের এবারের আয়োজনের জন্য। সেই উদ্দেশে৵ই বুধবার (৫ জুলাই) রাতে রওনা দিয়েছি জাপানের উদ্দেশে।
দেশের ৬ খুদে গণিতবিদ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) ৬৪তম আসরে অংশ নিতে জাপানে যাচ্ছে। মাথা ঠান্ডা রেখে আনন্দের সঙ্গে তারা নিজেদের সেরাটা দেবে বলে আয়োজকদের প্রত্যাশা।
মধ্য দুপুর। ভাতঘুম দেওয়ার সময়। এমনই একসময় আমরা ঢাকার লালমাটিয়া আপন উদ্যোগ ফাউন্ডেশনের ভবনে গণিত ক্যাম্পে ঢুঁ মারি। ভরদুপুরে নীরবতা খেয়াল করলাম। ভবনের তিনতলায় উঠেই দেখি গোল হয়ে বসে আছে কয়েকজন। নিস্তব্ধ, পিনপতন শব্দের মধ্যে ইশারায় বুঝতে চাইলাম কী হচ্ছে।
চলতি বছর ২-১৩ জুলাই জাপানের চিবা শহরে অনুষ্ঠিত হবে ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)। এ জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
আইএমওর জন্য নির্বাচিত বাংলাদেশ দলের সদস্যরা হলেন এস এম এ নাহিয়ান (ঢাকা কলেজ), শাহরিয়ার হোসেন (আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর), নুজহাত আহমেদ দিশা (ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা), জিতেন্দ্র বড়ুয়া (ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম), দেবপ্রিয় সাহা রায় (আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ) ও ইমাদ উদ্দীন আহমাদ হাসিন (কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।