আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম পর্ব। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরের কোতোয়ালি এলাকায় অবস্থিত সেন্ট প্লাসিড স্কুলে গণিত উৎসবের উদ্বোধন হয়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের সহ-অধ্যক্ষ ব্রাদার চন্দন গোমেজ, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দে। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য–প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা।
গণিত উৎসবে অংশ নিতে কনকনে শীতের মধ্যেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির হয় নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৫০ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও। সকাল সাতটার মধ্যেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণে। অবশ্য উৎসবে অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিল ৬ হাজার শিক্ষার্থী। সেখান থেকে বাছাই করা শিক্ষার্থীরা উৎসবে যোগ দেয়।
সকাল আটটায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কথা হয় কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রজত ভট্টাচার্য ও শ্রাবণ চৌধুরীর সঙ্গে। তারা প্রথমবারের মতো গণিত উৎসবে অংশ নিচ্ছে। তাদের বাসা চকবাজারে। সকাল ৭টায় উৎসব উপলক্ষে চলে এসেছে। গণিতের ভয় দূর করতেই তারা উৎসবে অংশ নিচ্ছে। উৎসবে কিশোর আলো, গণিত অলিম্পিয়াড, দ্বিমিক প্রকাশনী, ল্যাব বাংলা বইয়ে স্টলও বসেছে। সেসব স্টল ঘুরে দেখেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র রাহুল পাল এসেছে নগরের ডিসি রোড থেকে। রাহুল বলেছে, গণিত তার পছন্দের বিষয়। কিন্তু খানিকটা ভয় রয়েছে। এই ভয় দূর করতেই সে উৎসবে এসেছে।
উৎসবের উদ্বোধন করে সহ-অধ্যক্ষ ব্রাদার চন্দন গোমেজ সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, গণিত উৎসবের মতো এমন উৎসবে অংশ নেওয়া সবার জন্য আনন্দের।
আনিসুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম আলো–ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অনেক দিন ধরে বাংলাদেশে গণিত উৎসব করছে। গণিত উৎসবে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।’ তিনি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত গণিত অলিম্পিয়াডে ৬৮টি পদক পেয়েছি। এর মধ্যে একটি স্বর্ণপদক, কয়েকটি রৌপ্যপদক, ব্রোঞ্জপদকসহ ৩৮টি সম্মাননা পদক রয়েছে। স্বর্ণপদক পেয়েছে এ চট্টগ্রামেরই একজন। এটি অত্যন্ত আনন্দের।’
বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘গণিতের ভয় দূর করতে হবে। গণিত মজার। আনন্দ নিয়ে গণিতের চর্চা করতে হবে।’
উদ্বোধনের পর আজ সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর থাকবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পাশাপাশি চলবে খাতা মূল্যায়নের কাজ।
গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেবেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক স্বপন কুমার রায়, গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. ইফতেখার মনির ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক তৌফিক সাইদ।