আলোহীন মিলনায়তনে ভেসে আসছে বাদ্যযন্ত্রের সুর। এরই মধ্যে হঠাৎ চমকানো আলোর ছটায় চোখের সামনে ভেসে উঠল বিশাল এক মঞ্চ। এই আয়োজন ছিল ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী আসরের শুরুতে। এবারের আসর বসেছে জাপানের চিবা শহরে।
আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটার দিকে চিবার মাকুহারি মেসে মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন হয়। ১৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। এবারের আয়োজনে ১০৭টি দেশের ৫৫৬ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর আগে ২০০৩ সালে জাপানে গণিত অলিম্পিয়াডের আসর বসেছিল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে হাজির হন। দশম দল হিসেবে মঞ্চে ওঠেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও বেঙ্গল টাইগারের মাস্কট। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ১৯ বারের মতো লাল-সবুজ পতাকা উড়ল।
মিলনায়তনে মূল মঞ্চের দুই পাশে আলাদা দুটি মঞ্চে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ছিলেন বাদকেরা। মঞ্চের সামনে প্রথম দিকের সারিতে বসেছিলেন গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এরপর ছিলেন অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া ৫৫৬ শিক্ষার্থী। তাঁদের ৬২ জন নারী। মিলনায়তনের শেষ সারির দিকে ছিলেন নানা দেশের কোচেরা। সেখানে বাংলাদেশ দলের কোচ মাহবুব মজুমদারকেও দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে জাপানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী কেইকো নাগাওকা বলেন, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে দেয়। মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে নিজেদের বিকাশের সুযোগ পাচ্ছেন। জাপানে এবারের অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগর ডলিনার বলেন, বিজ্ঞানের দুনিয়ায় মৌলিক বিষয়গুলোর একটি গণিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যের মেধাবৃত্তিক আয়োজন আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। জাপানে এই আয়োজনে বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বাগতম।
এরপর মঞ্চে বাদ্যযন্ত্রে জাপানের ঐতিহ্যবাহী নানা সুর তোলেন ১০ জন নারী শিল্পী। এই পরিবেশনায় মুগ্ধ হন উপস্থিত সবাই। সর্বশেষ আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান তাকাহিকো ফুজিতা বলেন, ‘আশা করছি দুই দিনের পরীক্ষা গণিত অলিম্পিয়াডের শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে উপভোগ করবেন। এ ছাড়া জাপানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাবারসহ সবকিছু তাদের অনেক নতুন অভিজ্ঞতা উপহার দেবে।’
এবারের গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের দলের সদস্যরা হলেন ঢাকা কলেজের এস এম এ নাহিয়ান, রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাহরিয়ার হোসেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ, চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের দেবপ্রিয় সাহা রায় ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইমাদ উদ্দীন আহমাদ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়। দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের সদস্যপদ পায়।
২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। আন্তর্জাতিক এ আয়োজনে এখন পর্যন্ত ১টি স্বর্ণ, ৭টি রৌপ্য ও ৩২টি ব্রোঞ্জপদক এবং ৩৮টি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ।