শেষ হলো গণিতের বিশ্ব আসর। আজ বুধবার জাপানের স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পদক প্রদান করা হয়। প্রথমে পুরো আসরের নানা ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এরপর খুদে গণিতবিদদের উদ্দেশে চিবা শহরের মেয়র কামিয়া সুনিচি বলেন, ভবিষ্যতের মেধাবী তরুণেরা নতুন পৃথিবী তৈরির জন্য এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ফিরছে। সবাইকে চিবা ও জাপানের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি গ্রেগর ডলিনা বলেন, এ অলিম্পিয়াডের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে আরও বড় ও নান্দনিক সব সমস্যা সমাধানে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
এবারের অলিম্পিয়াডের আয়োজন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফুজিতা টাকাহিকো জানান, অলিম্পিয়াড এখন শুধু পরীক্ষা নয়, শিক্ষার্থীদের বন্ধুত্বের নতুন মাধ্যম।
এরপর সম্মানজনক স্বীকৃতির তালিকা প্রদর্শন করা হয়। তারপর ক্রমে ব্রোঞ্জ, সিলভার ও গোল্ড মেডেল অর্জনকারী সবাইকে পদক দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ৬টি প্রশ্ন সমাধানের জন্য ৪২ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। নম্বর ভেদে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ প্রদান করা হয় শিক্ষার্থীদের।
এবারের আয়োজনে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নুজহাত আহমেদ (২৪ নম্বর), ঢাকা কলেজের এস এম এ নাহিয়ান (২৪ নম্বর), রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাহরিয়ার হোসেন (২০ নম্বর) এবং সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের দেবপ্রিয় সাহা রায় (১৭ নম্বর) ও চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া (১৬ নম্বর)। এ ছাড়া দলের অন্য সদস্য কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইমাদ উদ্দীন আহমাদ পেয়েছে ৯ নম্বর।
মির্জাখানি পুরস্কার পেল নুজহাত
২০১৪ সালে বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে গণিতের নোবেল পুরস্কারখ্যাত ফিল্ডস মেডেলে ভূষিত হন ইরানি গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানি। জ্যামিতিশাস্ত্রের জটিল বিষয়ে অবদানের জন্য তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হয়। জ্যামিতির জটিল বিষয়াবলি নিয়ে কাজের কারণে মির্জাখানি দীর্ঘদিন ধরেই গণিতবিদদের মধ্যে আলোচিত। ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সম্মানে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সেরা নারীশিক্ষার্থী হিসেবে মির্জাখানি পুরস্কার দেওয়া হয়। এবার অস্ট্রেলেশিয়া ক্যাটাগরিতে নুজহাত আহমেদ এ সম্মাননা লাভ করেছে। বাংলাদেশে নুজহাতসহ ছয়জন নারীশিক্ষার্থী এই পুরস্কার জয় করেছে। নুজহাত আহমেদ আরও জানায়, ‘আমার প্রত্যাশা ছিল ভালো নম্বর পাব, কিন্তু মির্জাখানি পুরস্কার পাব, তা কল্পনাতেও ছিল না। আমি অনেক অনুপ্রাণিত।’
বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদার জানান, ‘বাংলাদেশ দল খুব ভালো করেছে। এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কঠিন সমস্যা সমাধান করতে পারে। আমাদের নুজহাত, সে এবার দলে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে এরং সে এ বছরের ইউরোপীয় নারী গণিত অলিম্পিয়াডে সিলভার পদক পায়।’
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বিভিন্ন দেশ থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। দুই দিনের পরীক্ষায় ছয়টি অঙ্ক করতে দেওয়া হয়। ছয়টি প্রশ্ন একেবারে মৌলিক ও নতুন। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৭ নম্বর করে। প্রতিদিন সময় দেওয়া হয় সাড়ে চার ঘণ্টা। এর আগে ৭ জুলাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবারের আসরের সূচনা হয়। পরের দুই দিন, ৮ ও ৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষার পর্ব।
২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ এবার ১৯তমবারের মতো অংশ নিল। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১টি স্বর্ণ, ৭টি রৌপ্য, ৩৫টি ব্রোঞ্জপদক ও সম্মানসূচক স্বীকৃতি পেয়েছে ৪০ জন শিক্ষার্থী।
আগামী গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন বসবে যুক্তরাজ্যে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের গালা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে সব শিক্ষার্থী আগামীর নতুন পৃথিবীর অপেক্ষায় গান–নাচে মেতে ওঠে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি দেশজুড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নানা ধাপে গণিত দলের সদস্যদের নির্বাচন করে আসছে।