বছর ঘুরে দেশব্যাপী আবার শুরু হলো আঞ্চলিক গণিত উত্সব। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে কুমিল্লা থেকে শুরু হলো এবারের উত্সব। এতে যোগ দিতে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই খুদে গণিতবিদদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। উৎসবে গণিতকে জয়ের অঙ্গীকার করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করে গণিতের প্রতি তাদের আগ্রহী করে তোলা এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য দল নির্বাচনের উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৭। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব।
গতকাল গণিত উত্সবে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ১ হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
দিনব্যাপী এই উত্সবের মূল আয়োজন ছিল গণিত অলিম্পিয়াড (প্রতিযোগিতা), প্রশ্নোত্তর পর্ব, রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতা, সমাপনী পর্ব ও পুরস্কার বিতরণ। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সকাল নয়টায় শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে উত্সব উদ্বোধন করেন নবাব ফয়জুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার। এ সময় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সুনীল চন্দ্র দাস। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলন করেন উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি ব্রিটেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ গণিত সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. আবদুস সাত্তার। উদ্বোধনী পর্বের বক্তব্যে অধ্যাপক মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ‘গণিতের প্রতি মানুষের ভীতি এখন আর নেই। স্কুলে পড়া অবস্থায় আমরা গণিতকে ভয় পেতাম। এখন খুদে শিক্ষার্থীরা গণিতকে জয় করছে।’
৯টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় উৎসবের মূল আয়োজন গণিত প্রতিযোগিতা। এতে প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। খুদে গণিতবিদদের প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক সুনীল চন্দ্র দাস ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আবুল খায়ের, আন্তর্জাতিক ক্লাউড কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ মাহাদী উজ জামান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। এ পর্ব পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। এ পর্ব শেষে শিক্ষার্থীরা হাত উঁচিয়ে মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করে।
বেলা একটায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কুন্ডু গোপীদাস, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল খালেক, কুমিল্লা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দা বিলকিস আরা বেগম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য আলী আশরাফ বলেন, ‘সারা দেশে এই উত্সব গণিতের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দৈনন্দিন জীবনে গণিত ছাড়া কেউ চলতে পারে না। হিসাব করেই মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। যে গণিতে ভালো, সে সব বিষয়ে ভালো।’
উৎসবে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ১৩, জুনিয়রে ২১, সেকেন্ডারিতে ১৫ ও হায়ার সেকেন্ডারিতে ১১ জনকে পুরস্কার হিসেবে মেডেল, সনদ, টি-শার্ট ও প্রথম আলো পত্রিকা দেওয়া হয়। নবাব ফয়জুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে দেওয়া হয় ক্রেস্ট।
এবার ১৫টি আঞ্চলিক উৎসবে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে বলে আশা করছে আয়োজক কমিটি। এই উৎসবের বিজয়ীরা আগামী ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসবে অংশ নেবে।