‘বিড়ালের চোখ রাতে জ্বলজ্বল করলেও মানুষের চোখ একই রকম জ্বলজ্বল করে না কেন?’, ‘টিকটিকি কেন দেয়াল থেকে পড়ে যায় না?’, ‘হার্ডওয়্যারকে হার্ড এবং সফটওয়্যারকে সফট কেন বলা হয়?’—শিক্ষার্থীদের এমন নানা প্রশ্নে জেরবার হয়েছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী পর্বে আসা অতিথি-বিশেষজ্ঞরা।
গণিতজয়ের পাশাপাশি দেশ এবং নিজেদের গড়ার শপথ নিয়েছে গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী উৎসবে আসা শিশু-কিশোরেরা। চট্টগ্রাম থেকে ৮০ ও নোয়াখালী অঞ্চল থেকে ৫০ জন প্রতিযোগী বিজয়ী হয়ে ঢাকায় উৎসবের মূল পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম: ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে নগরের সেন্ট প্লাসিডস হাইস্কুল মাঠে গতকাল অনুষ্ঠিত উৎসবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭১৩ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো, আর সহযোগিতায় প্রথম আলো বন্ধুসভা, চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে শপথ নিয়েছে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার।
সকালে দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয় জাতীয়, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। তিনটি পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে সেন্ট প্লাসিড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার প্রদীপ লুইজ রোজারিও, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাঈদ মো. সোহেল ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। জাতীয় সংগীত ও উৎসব সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত গণিতবিষয়ক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে নানা জিজ্ঞাসায়। তারা একটি স্বনির্ভর দেশ উপহার দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকী। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরশাদ এম চৌধুরী বলেন, ‘খেলাধুলা, বিজ্ঞানচর্চা, সবকিছুই করতে হবে। তবেই গণিতকে জয় করা যাবে।’
শিক্ষার্থীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব ও প্রভাষক মোহম্মদ কামরুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বন্ধুসভা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম উদ্দিন।
নোয়াখালী: পৌষের শীত, মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে নোয়াখালীর খুদে গণিতবিদেরা নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল গণিত উৎসবে যোগ দেয়। সকাল সাড়ে নয়টায় নোয়াখালী বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আবুল হোসেন এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন।
নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী আঞ্চলিক পর্বের এ উৎসবে যোগ দেয়। গণিতের ওপর সোয়া এক ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাসান। তাঁর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের প্রধান নিজাম উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ফাতেহা খানম এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রভাষক আবিদুর রহমান। উৎসবে চারটি বিভাগে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে তাদের হাতে একটি করে পদক, টি-শার্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
সমস্বরে দেশ গড়ার শপথ