১৭ তারিখ অনুষ্ঠিত ৮ আঞ্চলিক গণিত উৎসবের খবর

 


 শীতের সকাল। কনকনে শীত। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে আকাশ। কোথাও কোথাও কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের উঁকিঝুঁকি। রোদ-কুয়াশার লুকোচুরি। মাঘের শিশিরভেজা এই সকাল আরও সিক্ত হলো হাজারো শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাসে।বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার দেশের আটটি অঞ্চলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক পর্বের এ উৎসবে অংশ নিয়ে খুদে গণিতবিদেরা উচ্ছ্বসিত। তাদের চোখেমুখে গণিতজয়ের স্বপ্ন।
এ উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। উৎসবের পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো। উৎসবের স্লোগান ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’।
উৎসবের প্রথম দিনে রংপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, ফেনী ও রাঙামাটি অঞ্চলে অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি অঞ্চলেই জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করা হয়। উৎসবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষার পাশাপাশি ছিল কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রশ্নোত্তর পর্ব।
‘দেশের আয়তন ঘনমিটারে না করে বর্গমিটারে প্রকাশ কেন’, ‘রোমান সংখ্যায় জিরো নেই কেন’, ‘পদার্থ ও রসায়নে গণিত প্রয়োজন হয়, জীববিজ্ঞানে কেন প্রয়োজন হয় না’, ‘শূন্য যৌগিক না মৌলিক’—শিক্ষার্থীদের এমন আরও অনেক বুদ্ধিদীপ্ত, সৃজনশীল ও যুক্তিনির্ভর মজার মজার জিজ্ঞাসায় জমে ওঠে প্রশ্নোত্তর পর্ব। অতিথিরাও উত্তর দেন উৎসাহ নিয়ে। ভালো প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই ছিল পুরস্কার।
উৎসবে বক্তারা বলেন, মানুষের উন্নতির জন্য দুটি বিষয় দরকার। একটি হলো ভাষাজ্ঞান, অন্যটি গণিতে দক্ষতা। কেউ কেউ বলেন, ‘গণিত বিশ্বময়, বিশ্ব গণিতময়। আমরা লেখাপড়া না শিখলেও গণিত আমাদের প্রয়োজন হয়।’ শিক্ষার্থীরা মুখস্থ, মিথ্যা ও মাদককে ‘না’ বলার শপথ নেয়।
অলিম্পিয়াডে সব অঞ্চলের বিজয়ীদের সনদ, ক্রেস্ট ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয় জাতীয় উৎসবের।
উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।


রংপুর: রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে উৎসবের শুরু সকাল নয়টায়। উদ্বোধন করেন রংপুর জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন। রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় মোট ৫৬ জন।
জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, প্রথম আলো প্রতিবছর গণিত উৎসব করে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত শেখার আন্দোলন জাগিয়ে দিয়েছে।
উৎসবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান হাফিজুর রহমান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক অপূর্ব রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাঙামাটি: রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজে সকাল সাড়ে নয়টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। উৎসবে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ২১টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। চারটি বিভাগে বিজয়ী হয় ৩০ জন।
উৎসবে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জাবেদ মোর্শেদ, রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল ও কলেজের উপাধ্যক্ষ বৈশিলী রায়, রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বাঞ্চিতা চাকমা, রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. সদরুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন শিক্ষক মো. মনজু মিঞা, সনাতন দাস, মো. বশির আহমেদ, নূর মোহাম্মদ ও পরান্টু চাকমা।

যশোর: সকাল সাড়ে নয়টায় যশোর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে উৎসবের শুরু। উদ্বোধন করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি সুন্দর বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের জন্য এই উৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। দূর হয়েছে গণিতভীতি।
যশোর ও নড়াইলের ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৬০০ শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়। এক ঘণ্টা ২৫ মিনিটের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে চারটি বিভাগে ৩০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।উৎসবে গণিতবিদ অধ্যাপক এ এ কে এম লুৎফুজ্জামান, মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ এলিয়াস হোসেন, যশোরের ডাক্তার আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সকাল নয়টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন। উৎসবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মূল্যায়ন পরীক্ষায় ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
বক্তৃতা পর্বে ফরিদা নাজমীন বলেন, গণিতকে ভয় পাওয়ার দিন আর নেই। এখন সময় বিশ্বকে জয় করার। আরেক শিক্ষক চিন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, গণিত হচ্ছে বিজ্ঞানের ভাষা। বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে হলে গণিতের প্রয়োজন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইডিয়াল রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সোপানুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর সৌমিত্র চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপক জহিরুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ প্রমুখ।

ফরিদপুর: ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে নয়টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুর্গারানী সিকদার। ফরিদপুর অঞ্চলের উৎসবে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের ৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭৪১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। উৎসবে ৪৪ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
উৎসবে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রবীণ শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র ঘোষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আ স ম আবদুল হক, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক পরিমল কুমার কুণ্ডু, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর তামিম শাহরীয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হরিদাস হালদার তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘গণিত বিশ্বময়, বিশ্ব গণিতময়। আমরা লেখাপড়া না শিখলেও গণিত আমাদের প্রয়োজন হয়।’

ফেনী: ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সকাল ১০টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ। এরপর শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা। এতে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আট শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। চারটি বিভাগে ৪৬ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
উৎসবে অন্যান্যের মধ্যে ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার, অধ্যাপক ফসিউল আলম, ডাচ্্-বাংলা ব্যাংক ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক মো. সফিউল আজম ভূঞা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

ঝিনাইদহ: সকাল থেকেই কুয়াশাছন্ন ঝিনাইদহ। কুয়াশা ভেদ করে ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাজির প্রায় ৮০০ খুদে গণিতবিদ। তারা এসেছে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও মাগুরা জেলা থেকে।
সাড়ে নয়টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, মানুষের উন্নতির জন্য দুটি জিনিস দরকার। একটি হলো ভাষায় দক্ষতা, অন্যটি হলো গণিতে পারঙ্গমতা।
এরপর এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের পরীক্ষায় চারটি বিভাগে মোট ৫০ জন বিজয়ী হয়। সেরাদের সেরা হয়েছে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র তাসনিম ফারহান।
উৎসবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান, ওয়াজির আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, প্রবীণ শিক্ষক আলতাফ হোসেন প্রমুখ।

 

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের মাঠে সকাল নয়টায় উৎসবের উদ্বোধন করেনময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) মো. ফিরোজ আহমেদ। উৎসবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার ৫২টি স্কুলের এক হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। বিজয়ী হয় ৫৯ জন।
উৎসবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান শেখ সুজন আলী, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান, শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক মজিবুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অভীক রায়, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সামসুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।