প্রখ্যাত গণিতবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মুনিবুর রহমান চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের স্বর্ণপদক এসেছে আগেই। তবে অধরা ছিল এশিয়ান-প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডের (এপিএমও) স্বর্ণপদক। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ৮টায় নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষকের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির একজন ফেলো ও বাংলাদেশ গণিত সমিতির সাবেক সভাপতি। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
গণিত অলিম্পিয়াড পরিবার শোকাহত।
১৯ মে মঙ্গলবার গাংনী গণিত পরিবারের আয়োজন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহযোগিতায় অনলাইন গণিত উৎসব আয়োজিত হয়েছে। তিন ক্যাটাগরিতে চার শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে এই প্রতিযোগিতায়। অনলাইন গণিত কনটেস্ট প্লাটফর্ম "গণিতযজ্ঞ" এই অলিম্পিয়াডের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। দুপুর ১২ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রাইমারি, দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩:৩০ পর্যন্ত জুনিয়র এবং বিকেল ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত সেকেন্ডারির অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়েবসাইটেই লাইভ স্কোরকার্ড দেখা গেছে।
গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী আর নেই। আজ মঙ্গলবার ভোররাতে তিনি ইন্তেকাল (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) করেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। আজ বাদ জোহর জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড শেষে ঢাকা ফিরেছে বাংলাদেশ দল। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফিরে আসা দলটির এবারের অর্জন একটি ব্রোঞ্জপদক ও চারটি সম্মানজনক স্বীকৃতি।
মুনির হাসান, বাথ, যুক্তরাজ্য থেকে
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) শেষ হয়েছে আহসান আল মাহীরের ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রাতে ইংল্যান্ডের বাথ শহরে মেডবল নির্ধারণী সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলাদেশ এই একটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। দলের চারজন সদস্য পেয়েছেন সম্মানজনক স্বীকৃতি।
প্রথম আলো নিজেস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) ৬০তম আসরে অংশ নিতে ইংল্যান্ডে যাচ্ছে বাংলাদেশের গণিত দল। কাল রোববার সকালে দলটি রওনা হবে। আগামী সোমবার থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এবারের আসরে বাংলাদেশ দলটি ১১৬টি দেশের ৬০০ প্রতিযোগীর সঙ্গে গণিতের লড়াই করবে।
আগামী ১২–২৩ জুলাই ২০১৭ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও–তে অনুষ্ঠেয় ৫৮তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। শিক্ষার্থীরা হলো আসিফ-ই-ইলাহী (সিলেট এমসি কলেজ, সিলেট), মো. সাব্বির রহমান (নটর ডেম কলেজ), আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী (ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজ , চট্টগ্রাম), এ এম নাঈমুল ইসলাম (অমৃতলাল দে মহাবিদ্যালয়, বরিশাল), তামজীদ মোর্শেদ রুবাব (নটর ডেম কলেজ) ও রাহুল সাহা (ঢাকা কলেজ)। বাংলাদেশ গণিত দলের জন্য শুভ কামনা।
আইএমও ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের প্রোফাইল: https://www.imo-official.org/year_reg_team.aspx?year=2017&code=BGD
জাতীয় উৎসব ২০১৭ এর ফলাফল ডাউনলোড করুন নিচের লিংক থেকে।
ঢাকা আঞ্চলিক উৎসবের ফলাফল ডাউনলোড করুন নিচের লিংক থেকে।
একে ছুটির দিন। তার ওপর মাঘের সকাল। এমন সকালে লেপের ওম ছেড়ে হাজারো শিক্ষার্থী হাজির গণিত উৎসবে। সেখানে খুদে গণিতবিদদের বুদ্ধিদীপ্ত সব প্রশ্ন, গান-গল্পসহ গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক নানা আয়োজনের ভেতর দিয়ে শেষ হলো ‘ডাচ্-বাংলা-প্রথম আলো গণিত উৎসব, ২০১৭’-এর ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব।
উৎসবে উপস্থিত দেশের বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সুধীজনেরা এসব শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে দিলেন এক কার্যকর কৌশল। এটি হচ্ছে শুধু প্রতিযোগিতা নয়, গণিতকে আত্মস্থ করতে সবার আগে সেটাকে উপভোগ করা চাই।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই উৎসবে চার ক্যাটাগরিতে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ১৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করে।
চলতি বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় ৫৮তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচনের লক্ষ্যে এবং দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এ বছর ১৫টি শহরে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব উৎসবের বিজয়ীরা আগামী ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে অনুষ্ঠেয় জাতীয় গণিত উৎসব, ২০১৭ এবং পঞ্চদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।
গতকাল রেসিডেনসিয়াল কলেজ মাঠে আনন্দমুখর পরিবেশে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, গণিত এমন একটি বিষয়, যা শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতাকে উসকে দেয়।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে মনে হয় না একসঙ্গে এত শিক্ষার্থী গণিতবিষয়ক এ রকম একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের গণিতকে উপভোগ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে গণিতে ভালো করার বিকল্প নেই।
গণিতের ডানায় ভর করে এই শিক্ষার্থীরা একদিন সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন।
গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল খুদে গণিতবিদদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘এখানে তোমরা সবাই মেডেল পাবে না। কিন্তু সবাই বিজয়ী হবে। কারণ এটি উৎসব। আনন্দের ভেতর দিয়ে, উপভোগের ভেতর দিয়ে যে শিক্ষা অর্জিত হয়, সেটাই প্রকৃত শিক্ষা। কিন্তু আমার খুব মন খারাপ হয় যখন দেখি তোমরা গোল্ডেন ফাইভের জন্য প্রতিযোগিতায় নামো।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ঢাকার উৎসবে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ একটি রেকর্ড। তিনি আশা করেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় গণিতের এই আলো ছড়িয়ে যাবে।
উদ্বোধনী পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন গণিতবিদ অধ্যাপক লুৎফুজ্জামান, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বিজ্ঞানী ড. রেজাউর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখ।
উদ্বোধনী পর্বের পর শিক্ষার্থীরা সোয়া ঘণ্টাব্যাপী অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। এরপর উৎসবে ‘আয় আয় আয়, কে স্বপ্ন দেখবি আয়/ আয় গণিতের আঙিনায়’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নিত্যরঙের শিল্পীরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ অধ্যাপক মাহবুব মজুমদার, অধ্যাপক আবদুল হাকিম খান, মনোচিকিৎসক মোহিত কামাল, অধ্যাপক হায়দার খান প্রমুখ। খুদে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের জন্য ছিল পুরস্কারের ব্যবস্থা। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াডের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান।
‘তাওয়ায় দিলে রুটি কেন ফুলে ওঠে?’, ‘মাইনাস ১ কে বর্গমূল করা যায় না কেন?’, ‘দুঃখ পেলে চোখে পানি আসে কেন?’, ‘মানুষ কেন বুড়ো হয়?’ খুদে শিক্ষার্থীদের এমন সব প্রশ্নে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মঞ্চে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে বিরতির মধ্যে ছিল শিক্ষার্থী মনন মাহমুদের ওয়াটার রকেট উৎক্ষেপণের পালা। পরে রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে রবিন নামের এক শিক্ষার্থী। এরপর পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর প্রকাশের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।
বিতর্কের আগে কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘খালি পরীক্ষায় ভালো ফল করলে হবে না। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে গেলে কবিতা পড়তে হবে, সাহিত্য পড়তে হবে, দর্শন পড়তে হবে। খেলাধুলায় অংশ নিতে হবে।’
সমাপনী পর্বে ১৭৮ জন বিজয়ীর নাম ঘোষণা এবং তাদের পদক ও সনদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপী আয়োজন।
এর আগে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার হাতে ভেন্যু স্মারক ও উপাধ্যক্ষ ফেরদৌস আরার হাতে সুহৃদ স্মারক তুলে দেন আয়োজকেরা। উৎসব উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণে বিজ্ঞানচিন্তা, কিশোর আলো, প্রথমা প্রকাশনসহ গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের স্টলগুলোতেও ছিল উৎসাহী লোকজনের ভিড়। গোটা আয়োজনটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করে বন্ধুসভা ও ম্যাথ অলিম্পিয়াড ভলেনটিয়ার্সের সদস্যরা।
গণিত উৎসবে পরীক্ষা চলছে। তাই যত ভাবনা। গতকাল মৌলভীবাজার শহরের আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক উৎসব থেকে তোলা ছবি l আনিস মাহমুদগণিত উৎসবে পরীক্ষা চলছে। তাই যত ভাবনা। গতকাল মৌলভীবাজার শহরের আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক উৎসব থেকে তোলা ছবি l আনিস মাহমুদবাংলা-ইংরেজিতে নাম লেখা যায়, গণিতে লেখা যায় না কেন? শূন্যকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে শূন্য হয় কেন? সম্পাদ্য মনে রাখা যায়, উপপাদ্য তত মনে রাখা যায় না কেন? খুদে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলভরা এমনই কত-শত প্রশ্ন আর সেগুলোর মজার মজার উত্তর। এ রকম উচ্ছ্বাস আনন্দভরা পরিবেশে মৌলভীবাজারে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব। শীতের সকালে কুয়াশার চাদর সরিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই উৎসবের স্থান আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠ ভরে যায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সরব উপস্থিতিতে। সকাল নয়টায় শুরু হয় উৎসব। এতে অংশ নেয় মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের প্রায় অর্ধশত স্কুল-কলেজের ৮০০ শিক্ষার্থী। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে উৎসবের শুরুতে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা তোলেন আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রাজ্জাক। আর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা তোলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক এ এস এম শামীম চৌধুরী। উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রথম আলোর কারণে গণিত উৎসব ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। প্রথম আলো শুরু না করলে এই উৎসব এত ব্যাপকভাবে ছড়াত না। ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবক-শিক্ষকদের মধ্যেও এখন গণিত নিয়ে আগ্রহ। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষ করার চেষ্টা করছেন। খুদে গণিতবিদেরাও এ উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে। গণিতের মতো এ রকম প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের সব দুষ্টচক্র থেকে দূরে রাখবে। উৎসব উদ্বোধনের পরপরই শিক্ষার্থীরা গণিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সারিবদ্ধভাবে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে। পরীক্ষা শেষে আবার তারা মাঠে সমবেত হয়। শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সামনে নানা প্রশ্ন করে তাদের ভাবনার জগৎ মেলে ধরে। তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ তালুকদার, ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, আবদুল হান্নান, মো. আলমগীর কবীর, খায়রুল হাসান, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক সৈয়দ মুজিবুর রহমান, শক্তিপদ পাল প্রমুখ। প্রশ্নোত্তর পর্বে দেওয়া বক্তব্যে অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘গণিতে চিন্তার শক্তি আছে। চিন্তাশক্তির মাধ্যমে তোমরা অনেক কিছু আবিষ্কার করবে। তোমরা সেই চিন্তা করবে, যা দেশকে সমৃদ্ধ করে।’ অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার বলেন, ‘গণিত একটা দর্শন। কোথায় যাওয়া যায় না, কোথায় যায় গণিত সেই পথ তৈরি করে দেয়।’ আলী আমজাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিভার বিকাশ ঘটে। তোমাদের মধ্য থেকে একদিন বড় বড় গণিতবিদ বেরিয়ে আসবে।’ উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার বন্ধুসভার সভাপতি অপূর্ব সোহাগ। বন্ধুসভার শিল্পীরা পরিবেশন করেন গান। শিক্ষার্থীরাও গান গেয়ে শোনায়। সবশেষে ছিল পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ। এতে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এ চার বিভাগে ৫০ জন শিক্ষার্থী জয়ী হয়।
শিক্ষার্থীদের কেউ এসেছে পাহাড় ডিঙিয়ে। কাউকে পাড়ি দিতে হয়েছে নদী ও সাগর। পৌষের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কুয়াশায় ঢাকা সকালে তারা হাজির কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। গণিতের ভয়কে জয় করতে দুর্গম পথ ও ঠান্ডা তুচ্ছ করেছে তারা। পরীক্ষা, প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেওয়া, গান, নাচসহ নানা আয়োজনে দিনভর মেতে ছিল প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী।
গতকাল শনিবার সকাল সোয়া নয়টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসবের। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বুদ্ধিকে পরিপক্ব করে গণিত। মানবসভ্যতায় গণিতের অবদান অনেক। তাই গণিতকে জয় করতে হবে। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাত তুলে গণিতকে জয় করার শপথ নেয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা তোলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কক্সবাজারের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. সাজ্জাদুর রহমান। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন।
উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলো কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস।
‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে এই উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গতকালের এ উৎসবে অংশ নেয় কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৫৭ জন শিক্ষার্থী। উদ্বোধন শেষে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায়। এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বন্ধুসভার সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন এ আয়োজনে অংশ নেয়।
এরপর ছিল মজার পর্ব—প্রশ্নোত্তর। কারও প্রশ্ন ছিল, মোমবাতির শিখা ওপরের দিকে যায় কেন? কেউবা জানতে চেয়েছে, বোকামির সঙ্গে গণিতের সর্ম্পক কী? শূন্য জোড় নাকি বিজোড়? শূন্য ঋণাত্মক নাকি ধনাত্মক? সময় কেন আপেক্ষিক? খুদে গণিতবিদদের একের পর এক বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে মঞ্চে ছিলেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আরশাদ চৌধুরী ও নোভা আহমেদ, বদরখালী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, কক্সবাজার সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান আবদুল কুদ্দুস, প্রভাষক নিজাম উদ্দিন ফারুকী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মফিজুল আলম, কক্সবাজার সিটি কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক জেবুন্নেছা ও প্রথম আলো যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান। মজার প্রশ্ন করে পুরস্কার জিতে নেয় শিক্ষার্থীরা।
উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা মুখস্থ, মাদক ও মিথ্যাকে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করে। বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, সবাইকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ দেশ, এ মাটি আমার—এই চেতনায় শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক—প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৭’ এখন সারা দেশের শিক্ষার্থীদের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় ৫৮তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য
বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যদের নির্বাচনের লক্ষ্যে এ বছর ১৫টি শহরে আঞ্চলিক গণিত
উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ বছরের আঞ্চলিক পর্ব ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২৭ জানুয়ারির ২০১৭ শুক্রবার।সব আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে আগামী ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শুক্র ও শনিবার
ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে (আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা) অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় গণিত উৎসব ২০১৭।
জাতীয় গণিত উৎসবের তারিখ: ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শুক্র ও শনিবার
ভেন্যু: সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল,(আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর), ঢাকা।
