এবার কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না

পর্যটন নগরের নানা আকর্ষণ থাকে। তবে পৃথিবীর ১০০টি দেশ থেকে আসা বেশির ভাগই একটি ‘সামার’ অলিম্পিয়াডের কথা ভাবে। সে কারণে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে কম লোককে। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় নগরের সবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম দেখাতে। সেখানে দুপুর কাটিয়ে বিকেলে আবার তাদের বিচ ফুটবল, টেবিল টেনিস খেলায় ফেরার কথা। এর মধ্যে আমাদের সৌরভ আর আবিদের দল বিচ ফুটবলে চার গোলে হেরে দর্শক সারিতে জায়গা নিয়েছে।
নতুন বন্ধু বানানো, নতুন নতুন খেলার সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ভাববিনিময়ে শিক্ষার্থীরা যখন ব্যস্ত, তখন তাদের দলনেতা আর উপদলনেতারা হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) উত্তরপত্র মূল্যায়ন ঠিক আমাদের দেশের যেকোনো পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের উল্টো। আমাদের দেশে উত্তরপত্র মূল্যায়নের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে শিক্ষার্থী কী জানে না, তা বের করার চেষ্টা। এখানে তার উল্টো।
যেহেতু ১০০ দেশের উত্তরপত্র ১০০টি দেশের মূল্যায়নকারীরা মূল্যায়ন করে থাকেন, তাই প্রথম থেকেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। পরীক্ষার আগে যখন সমস্যা চূড়ান্ত করা হয়, তখন সেটি সমাধানের নম্বর দেওয়ার কাঠামোও (মার্কিং স্কিম) চূড়ান্ত করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এক বা একাধিক অফিসিয়াল সমাধানও ঠিক করা হয়। তবে এই সমাধান দেওয়া হয় কেবল ধারণার জন্য। প্রকৃত প্রস্তাবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অফিসিয়াল সমাধানে কাজ করে না। এতে বোঝা যায়, পরিণত মস্তিষ্কের সঙ্গে তরুণদের চিন্তাভাবনার অনেক তফাৎ থাকে। মার্কিং স্কিমে মূলত কী কী করলে পরে কত নম্বর পাওয়া যাবে, সেটি ঠিক করা থাকে। কিন্তু কীভাবে তা করা হলো, তার কোনো নির্দেশনা থাকে না। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী তার ইচ্ছামতো সমস্যার সমাধান করতে পারে। যদি সে সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারে, যেভাবেই হোক, তাহলে তার প্রাপ্য ৭-এ ৭! তবে কথা থাকে, সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রমাণ করেছে। কোনো কোনো সমস্যার অনেকগুলো অংশ থাকে। সম্পূর্ণ নম্বর পেতে হলে তার সবটুকুই করতে হয়। যেমন এবার ৪ নম্বর সমস্যার চারটি অংশ রয়েছে। সবগুলোই করতে হবে।
সমস্যার সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো বিষয় নেই। খাতার নানা অংশে তা থাকলেই চলে। তবে সেসব ক্ষেত্রে দলনেতা আর সমন্বয়কারীদের ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। আবার কোনো সমস্যার সমাধানে কোনো শিক্ষার্থী যদি এমন কিছু করতে পারে, যা হয়তো সেভাবে নেই, কিন্তু আসলে ওই পথে এগুলোর সমাধান পাওয়া যাবে, তাহলেও শিক্ষার্থীকে কিছু নম্বর দেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আমরা প্রথম দিনের তিনটি সমস্যার খাতা দেখা চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে ৩ নম্বর সমস্যাটি আমাদের কোনো শিক্ষার্থী চেষ্টা করেনি। ১ নম্বর সমস্যার সমাধান সবাই পূর্ণভাবে করেছে। আইএমওতে অংশ নেওয়ার অষ্টমবারের মাথায় এবারই প্রথম আমাদের সব প্রতিযোগী অন্তত একটি সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করেছে। এর মানে, এবার আর কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না। অন্তত একটা সম্মানজনক উদ্ধৃতি তারা পাবে।
২ নম্বর সমস্যা থেকে সৌরভ ও ধনঞ্জয়—উভয়ে ৪ নম্বর করে সংগ্রহ করেছে। ধনঞ্জয়ের আংশিক প্রচেষ্টা যে শেষ পর্যন্ত একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিল, তা খুঁজে পেতে সমন্বয়কারীদের যথেষ্ট খাটাখাটুনি করতে হয়েছে।
পাঠক যখন এই প্রতিবেদন পড়বেন, ততক্ষণে আমাদের আরও দুটি সমস্যার সমন্বয়ের কাজ শেষ হবে। তবে সব খাতা দেখা শেষ হতে শনিবার দুপুর (বাংলাদেশ সময় রাত) গড়িয়ে যাবে। আর পদকের হিসাব-নিকাশ হবে রোববার সকালে। সেদিন বিকেলেই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের আইএমও।
এ নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।

Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-14/news/273452