ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও নরসিংদী আঞ্চলিক গণিত উৎসবের খবর

নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালেয়র মাঠে গতকাল গণিত উৎসবে প্রশ্ন করার জন্য দাঁড়িয়েছে ওরা l ছবি: প্রথম আলো

আঞ্চলিক গণিত উৎসবের তৃতীয় দিনের মিলনমেলাও দারুণ জমে উঠেছিল। গতকাল রোববার কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও নরসিংদীতে তিনটি আসরে সাত জেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৮ শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। কুষ্টিয়া ও নরসিংদীর উৎসবে পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সদ্যপ্রয়াত মাকসুদুল আলম স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আঞ্চলিক গণিত উৎসবের এ বছরের উৎসব শুরু হয় গত শুক্রবার। ওই দিন সুনামগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ ও পাবনায় ১১ জেলার ২০৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শনিবার রাজশাহী, টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ ও নড়াইলে ১০ জেলার ১৪১ প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শিক্ষার্থী উৎসবে মেতে ওঠে। সর্বশেষ গতকাল রোববার তিনটি স্থানে অনুষ্ঠিত উৎসব সকালে বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
আমারও একটা প্রশ্ন আছে—গতকাল কুষ্টিয়া জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত গণিত উৎসবে হাত তুলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা এক শিক্ষার্থীর l ছবি: প্রথম আলো

ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সকাল সাড়ে আটটার আগেই পূর্ণ হয়ে যায় কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের মাঠ। জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) আনার কলি মাহবুব। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা তোলেন জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিভা রানী পাঠক এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা তোলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম।
উৎসবে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলার প্রায় ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সকাল পৌনে ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ১১টায়। এরপর মূল প্যান্ডেলে চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব। অন্যদিকে শিক্ষক মিলনায়তনে চলে খাতা দেখার কাজ। প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের মজার মজার ও চমকপ্রদ প্রশ্নের উত্তর দেন মুনির হাসান। এর ফাঁকে ফাঁকে চলে কুষ্টিয়া বন্ধুসভার সদস্য ও উৎসবে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের গান, কবিতা ও আবৃত্তি। উৎসবে রুবিকস কিউব ২৪.৬ সেকেন্ড মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ছাত্র আবদুল্লাহ শাহরিয়ার।
ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গতকালের গণিত উৎসবে প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী l ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী বক্তব্যে আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘শীতের শীতল বাতাস ও গণিতের ভয় উপেক্ষা করে তোমরা এখানে এসেছ। তোমরাই পারবে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে।’
অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক নুরুন্নাহার, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক ও যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান, প্রথম আলোর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তৌহিদী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে উৎসবে অংশ নেয় ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরা জেলার ২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থী।
সকাল সাড়ে নয়টায় সরকারি কেসি কলেজের অধ্যক্ষ বি এম রেজাউল করিম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নাহিদ আক্তার এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ আমেনা খাতুন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান।
রেজাউল করিম বলেন, ‘মানুষের উন্নতির জন্য ভাষায় দক্ষতা আর গণিতে পারদর্শিতা থাকা দরকার। প্রথম আলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে, যা আমাদের ছেলেমেয়েদের বুদ্ধি বিকাশে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
গণিতের পরীক্ষা শুরু হয় সকাল ১০টায়। শেষ হয় বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত। আলোচনা করেন অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান, শিক্ষক নাহিদ আক্তার, প্রবীণ শিক্ষক আলতাফ হোসেন, বন্ধুসভার সভাপতি সাইক-আল-জামি লিশন ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আজাদ রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা শাহীনূর আলম।
নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৌনে পাঁচ শ শিক্ষার্থী সমবেত হয় নরসিংদীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান জাতীয় পতাকা, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খোদাদাদ খান গণিত অলিম্পিয়াডের আন্তর্জাতিক পতাকা এবং সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম চন্দ্র মিত্র বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন। উৎসব উদ্বোধন করেন গৌতম চন্দ্র মিত্র। অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন। উৎসবে শিক্ষার্থীরা মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যাকে না বলার অঙ্গীকার করে।
১৩তম বর্ষের এই উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান নিয়ে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চার বিভাগে শিক্ষার্থীরা উৎসবস্থলে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। সব স্থানেই বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসব উদ্বোধন করা হয়।