১০০টি দেশের পাঁচ শতাধিক গণিতবিদের অংশগ্রহণে শুরু হলো বিশ্বের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেধার লড়াই্ল—আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)। এটি অলিম্পিয়াডের ৫৩তম আসর। গতকাল সোমবার আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অলিম্পিয়াডের আনুষ্ঠানিকতা।
শহরের রেডিও সেন্টার মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা গাণিতিক সমস্যা সমাধানে খুদে গণিতবিদদের সাফল্যকে উৎসাহিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে খুদে গণিতবিদদের স্বাগত জানান আর্জেন্টিনার শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক আলবার্তো সিলোনি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী মন্ত্রী জোশে লিনো বারানো ও বুয়েনস এইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর রুবেন হালু। উপস্থিত ছিলেন মার ডেল প্লাটা শহরের মেয়র। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইএমও উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান নজর আগাখানভ।
আইএমওর নিয়মানুসারে গতকাল নিজ নিজ দলের দলনেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগীদের ‘চোখের দেখা’ হয়েছে। মিলনায়তনে বাংলাদেশ দলের দলনেতা মাহবুব মজুমদার হাত নেড়ে তাঁর দলের গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান। আইএমওর প্রথা অনুসারে মাহবুব মজুমদার ৪ জুলাই থেকে অন্য দলনেতাদের সঙ্গে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। সেখানে তাঁরা আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবারের জন্য সমস্যা নির্বাচন করছেন। এবার বাংলাদেশ দলে রয়েছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ: ধনঞ্জয় বিশ্বাস, মির্জা মো. তানজীম শরীফ, সৌরভ দাশ, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও আদিব হাসান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগীরা হোটেলে ফিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য সময় কাটিয়েছে। আজ সকাল নয়টা থেকে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টা) প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগীদের সাড়ে চার ঘণ্টা সময়ে তিনটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এর আগে রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন দেশের গণিতবিদেরা মার ডেল প্লাটা শহরে উপস্থিত হয়। বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা পৌঁছায় ভোর ছয়টায়। মার ডেল প্লাটাতে হোটেল প্রোভিন্সিয়ালে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সব দেশের প্রতিযোগীরা অবস্থান করছে। তবে ফ্লাইট জটিলতায় কয়েকটি দেশের প্রতিযোগীরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। আজ পরীক্ষা শুরু হওয়া পর্যন্ত অন্য উপদলনেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের উপদলনেতাও হোটেলে অবস্থান করবেন। এরপর নগরের অন্য প্রান্তের একটি হোটেলে দলনেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন খাতা মূল্যায়নের কাজে।
হোটেলে গণিত দলকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ দলের গাইড মাউরো সিলম্যান। মাউরো ২০০৭ সালের ভিয়েতনাম ও ২০০৮ সালের স্পেনের আইএমওতে আর্জেন্টিনা দলের পক্ষে অংশ নিয়েছেন। আইএমও ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী মাউরো আগামী কয়েক দিন বাংলাদেশ দলের দেখভাল করবেন।
সকালে গাইড মাউরো বলেন, ‘চাইলে আমি ওদের কিছু টিপসও দিতে পারব।’ মাউরো বর্তমানে গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এবার নিয়ে অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্যরা এই প্রথম একজন গণিতের শিক্ষার্থীকে গাইড হিসেবে পেয়েছে। দুই দিনের যাত্রাপথের ক্লান্তি সত্ত্বেও দলের সদস্যরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।
উত্তর গোলার্ধে এখন গরমের সময় হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে এখন শীতকাল। মার ডেল প্লাটা সমুদ্রতীরবর্তী শহর বলে এর তাপমাত্রা একটু বেশি। কিন্তু রাতের দিকে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে চলে যেতে পারে বলে জানা গেছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১২ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। আয়োজকেরা সবাইকে একটি করে উলের জ্যাকেট ও একটি করে ছাতা দিয়েছে। কারণ, আর্জেন্টিনার শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কোনো বৈরী মনোভাব নেই।
২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশ থেকে ১৭টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচজন প্রতিযোগীকে লাল-সবুজের পতাকা বহনের জন্য নির্বাচন করেছে।
Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-10/news/272296