আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) ৬০তম আসরে অংশ নিতে ইংল্যান্ডে যাচ্ছে বাংলাদেশের গণিত দল। কাল রোববার সকালে দলটি রওনা হবে। আগামী সোমবার থেকে এই প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এবারের আসরে বাংলাদেশ দলটি ১১৬টি দেশের ৬০০ প্রতিযোগীর সঙ্গে গণিতের লড়াই করবে।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশ দলের ছয় সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশ দলের সদস্যরা হলেন এসওএস হারমান মেইনার কলেজের এম আহসান আল মাহীর, ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সৌমিত্র দাস, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের আহমেদ ইত্তিহাদ হাসিব, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের মো. মারুফ হাসান রুবাব, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের দেওয়ান সাদমান হাসান ও নটর ডেম কলেজের মাশরুর হাসান ভূঁইয়া।
এই ছয়জন প্রতিনিধির সঙ্গে দলনেতা হিসেবে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার এবং উপদলনেতা হিসেবে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী জানান, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ আইএমওর সদস্য হয়। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। এ পর্যন্ত একটি স্বর্ণপদক, ছয়টি রৌপ্যপদক, ২২টি ব্রোঞ্জপদক ও ২৭টি সম্মানজনক পদক পেয়েছে বাংলাদেশ।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশ দলের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিজেকে চাপের মধ্যে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। ধীর মস্তিষ্কে তোমরা গণিতের সমাধান করার চেষ্টা করবে।’ তিনি আরও বলেন, আইএমওতে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ুয়াদের ছয়টি অঙ্ক সমাধান করতে দেওয়া হয়, পরপর দুই দিনে। ছয়টি অঙ্ক একেবারে মৌলিক ও নতুন। অংশগ্রহণকারীদের মেধা অনুসারে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জ পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
এবার ১৫ বারের মতো বাংলাদেশ আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় ছয় সদস্যের পাশাপাশি তিনজন পর্যবেক্ষক থাকবেন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় ৬০তম আইএমওতে অংশ নিতে বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের গণিতের ভয় দূর করে গণিত যে আনন্দ হতে পারে, সেটি প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এক বিপ্লব করেছে বলে আমার মনে হয়। শুধু শহর নয়, গ্রাম বা মফস্বলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত নিয়ে যে আগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, সেটাই এই উদ্যোগের একটি বিশাল অর্জন। আমাদের আরও অনেক অর্জন বাকি আছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এই যাত্রার সঙ্গে থাকবে।’
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, গণিতে আকৃষ্ট হলে শিক্ষার্থীদের মনের দুয়ার খুলে যায়। বাকি বিষয়গুলোও তখন সহজ মনে হয়। মাতৃভাষার পর গণিতের মৌলিক শিক্ষাটা নিলে যেকোনো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় ভালো করবে। তাদের জন্য সব দুয়ার খুলে যায়। বাংলাদেশ গণিত দলটি গতবারও ভালো করেছে, এবারের আসরেও ভালো করবে বলে তাঁর আশা।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, গণিত এমন একটি বিষয়, কোনো শিক্ষার্থী এই বিষয়ে সফলতা অর্জন করলে সে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, সব বিষয়ে ভালো করবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলা ও গণিতে ভালো করছে। এটা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, আরও বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইএমওতে অংশ নিতে বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্য নির্বাচনের লক্ষ্যে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬৪টি বাছাইপর্ব, ১২টি আঞ্চলিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসব করা হয়। জাতীয় উৎসবের সেরা ৪৫ জনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ বাংলাদেশ জাতীয় গণিত ক্যাম্প। ফলাফলের ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নাম।
সংবাদ সম্মেলনে ছয় শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরাও উপস্থিত ছিলেন। রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী সৌমিত্র দাসের বাবা শ্যামল চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে দ্বিতীয়বারের মতো আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। গতবার সে সম্মানজনক পদক পেয়েছে। এবার তার প্রস্তুতি ভালো। আশা করছি, এবারও ভালো কিছু করবে, দেশের জন্য সম্মান নিয়ে আসবে।’