ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসবের খবর

গণিত শিখে দেশ গড়ার স্বপ্ন

 

ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসব হয়ে গেল গতকাল। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রাঙ্গণে সকালে বেলুন উড়িয়ে ওই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিরা l ছবি: প্রথম আলো

মাঘের সকাল৷ টানা অবরোধ৷ কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারেনি ওদের৷ গণিতের প্রতি ভালোবাসার টানে, সব বাধা উপেক্ষা করে খুদে গণিতবিদেরা জড়ো হয়েছিল ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রাঙ্গণে, ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসবে। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানের উৎসবে এসে তারা জয় করল গণিতভীতি, দেখল দেশ গড়ার স্বপ্ন৷
গতকাল শুক্রবার ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজন করে এই উৎসবের।
দিনভর গণিতের নানা বিষয়ের পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়ার, দেশকে এগিয়ে নেওয়ারও শিক্ষা পায় এই শিক্ষার্থীরা৷ উৎসবের গান ‘আয় আয় আয়, কে স্বপ্ন দেখবি আয়। আয় গণিতের আঙিনায়। কে দেশটা গড়বি আয়’—যেন সার্থকতা পায় এসব খুদে গণিতবিদের উচ্ছল অংশগ্রহণে৷
সকাল নয়টার আগেই অনুষ্ঠানস্থল মুখর হয়ে ওঠে খুদে গণিতবিদদের পদচারণে৷ সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসব। রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সুবহানি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল হাসান। পতাকা উত্তোলনের পর অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে জামিলুর রেজা চৌধুরী এই উৎসব ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে করার কথা বললেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তারা যে বিশ্বমানের, সেটা প্রমাণ করছে।
গণিতকে ভয় নয়, ভালোবেসে জয় করার মন্ত্র সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানালেন জামিলুর রেজা চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর পক্ষে সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এরপর সকাল ১০টায় গণিত উৎসবের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে চলে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত। পরীক্ষা শেষে খুদে গণিতবিদেরা আবারও মাঠে এসে জড়ো হয়। গণিত উৎসবের গান দিয়ে শুরু হয় উৎসবের এ পর্ব। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক বই দিয়ে সাজানো বইমেলা উৎসবে বিশেষ মাত্রা যোগ করে।
গাড়ি বা ট্রেনে করে যাওয়ার সময় কয়েন ওপরে ছুড়ে দিলে তা সেখানেই ফিরে আসে কেন? সর্ববৃহৎ মৌলিক নাম্বার কোনটি? পিত্তথলি, কিডনিতে পাথর হয় কীভাবে? গণিত উৎসবে এসে অংশগ্রহণকারীরা বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে।
খুদে গণিতবিদদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, আনিসুল হক প্রমুখ। প্রশ্নোত্তরের এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সেলর মাহমুদুল হাসান।
উত্তরা থেকে বাবার সঙ্গে উৎসবে আসে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ৷ সে বলল, ‘ম্যাথ করতে আমার ভালো লাগে৷ একদিন আমিও আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে যাব৷’
উৎসবে উপস্থিত ছিলেন রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা বেগম, অধ্যাপক লুৎফুজ্জামান, গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বুয়েটের অধ্যাপক আবদুল হাকিম খান ও ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, এস সোহরাবউদ্দীন, বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদার, সেন্ট যোসেফ কলেজের শিক্ষক দীপক কুমার সরকার, একাডেমিক কাউন্সেলর তামিম শাহরিয়ার প্রমুখ।
নিজের ছেলে ও ভাগনেকে নিয়ে উৎসবে এসেছিলেন ইকবাল আহমেদ৷ বললেন, ‘পুরস্কার পাওয়া না-পাওয়া বড় ব্যাপার নয়৷ ছেলেমেয়েরা এত ছোট বয়স থেকেই অঙ্কের ভয় কাটিয়ে মজা নিয়ে শিখতে শুরু করছে, এটাই আসল৷ ব্যাপারটা আরও তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হবে৷’
মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবারও অনুষ্ঠান শুরু হয় বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ওয়াটার রকেট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে। এর পরই হয় রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতা। মাত্র ১১ দশমিক ১ সেকেন্ডে কিউব মিলিয়ে এতে চ্যাম্পিয়ন হয় সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সাকিব ইবনে রশীদ ঋভু।
৫০ ও ৫১তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী নাজিয়া চৌধুরী ও তারিক আদনান খুদে গণিতবিদদের তাঁদের সফলতার গল্প শোনান।
বেলা তিনটায় শুরু হয় ফলাফল ঘোষণা। এর আগে গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান জানিয়ে দেন, ঢাকা অঞ্চলের এবারের আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ঢাকার ১৫৪টি স্কুলের ৩ হাজার ১৫৭ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। তার মধ্যে গতকালের উৎসবে উপস্থিত ছিল ২ হাজার ৫২৭ জন। ঢাকা উৎসবে প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি—এই চারটি ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। উৎসব সফল করার জন্য কাজ করেছেন প্রথম আলো বন্ধুসভা এবং ম্যাথ অলিম্পিয়াড ভলান্টিয়ার্সের (মুভার্স) ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক।
ফলাফল ঘোষণার আগে আনিসুল হক বলেন, অংশগ্রহণকারীরা প্রশ্নোত্তর পর্বে যেসব প্রশ্ন করেছে, সেই প্রশ্নগুলো উত্তরসহ কিশোর আলোয় ছাপা হবে।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ১৬৬ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এই ১৬৬ জন দেশের আরও ২৩টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবে বিজয়ীদের সঙ্গে ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আসাদগেটসংলগ্ন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে অনুষ্ঠেয় জাতীয় গণিত উৎসব ও ত্রয়োদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে।

 

ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসব আগামীকাল ১৬ জানুয়ারি

 

1

 

আগামীকাল শুক্রবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসব। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করেছে। সকাল নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করবেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সুবহানি।
চলতি বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ৫৬তম আইএমওর জন্য বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচনের লক্ষ্যে এ বছর ২৪টি শহরে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে ইতিমধ্যেই প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার ১৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে।
উৎসব শুরু হবে সকাল সাড়ে আটটায়। উৎসবে পরীক্ষার সময় মুঠোফোন ব্যবহার করা যাবে না। অলিম্পিয়াডে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাক পরে আসতে হবে। পরীক্ষার হলে প্রবেশপত্র, কলম ও পেনসিল সঙ্গে আনতে হবে।
উৎসবে খুদে গণিতবিদদের উৎসাহ জোগাতে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বিশিষ্ট গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান, অধ্যাপক লুৎফুজ্জামান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান, বুয়েটের অধ্যাপক আবদুল হাকিম খান, ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল হাসান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ও আনিসুল হক, গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদার এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
দিনব্যাপী এই উৎসবে চারটি ক্যাটাগরিতে উৎসবের মূল পর্ব গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে। গণিত অলিম্পিয়াড ছাড়াও থাকবে গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক নানা আয়োজন। থাকবে গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক স্পট কুইজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রশ্নোত্তর পর্ব, রুবিকস কিউব প্রতিযোগিতা, বইমেলা, সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী।
২৪টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবের বিজয়ীরা আগামী ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্র ও শনিবার ঢাকার সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে অনুষ্ঠেয় জাতীয় গণিত উৎসব ২০১৫ ও ত্রয়োদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করবে।

 

রাজবাড়ী গণিত উৎসব

গণিত গড়ে যুক্তিবাদী মন

 

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক গণিত উৎসবে প্রশ্ন করছে এক খুদে গণিতবিদ l ছবি: প্রথম আলো

শীতের সকালে কুয়াশা ফুঁড়ে বের হতে থাকে ঝলমলে রোদ। উষ্ণতার সঙ্গে বাড়তে থাকে উচ্ছ্বসিত খুদে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ পরিপূর্ণ। গতকাল শনিবার সেখানে অনুষ্ঠিত হয় গণিত উৎসব।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় রাজবাড়ীতে এ গণিত উৎসবে অংশ নেয় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার ৮০০ শিক্ষার্থী। সকাল নয়টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম খান। পরে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজা খানম এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন।
এরপর ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান লেখা উৎসবের ব্যানার উড়িয়ে দেওয়া হয় সকালের রোদেলা আকাশে। উদ্বোধন ঘোষণা করা হয় রাজবাড়ী আঞ্চলিক গণিত উৎসবের।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘গণিত যারা সমাধান করতে পারে তারাই বুঝতে পারে এতে কত আনন্দ। একটু মন দিয়ে চেষ্টা করলেই খুব সহজেই গণিত সমাধান করা যায়।’
সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব পরীক্ষা। এরপর বিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয় গণিত জয়ের গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন রাজবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধুরা।
এরপর শুরু হয় মজার মজার প্রশ্ন নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব। রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস প্রশ্ন করে, মানুষের মন কোথায় থাকে ও আকার কেমন? আলো একসঙ্গে কণা ও তরঙ্গের আচরণ করে কীভাবে—এ প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ফরিদপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিফা তাসনিম। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিমুর রহমান, সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের গণিত প্রভাষক সুশান্ত কুমার দে, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সমীর ময় মণ্ডল, আরিফ হোসেন, রাজবাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক রেজাউল হক, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পদার্থের শিক্ষক ইতিকা রানী দাস।
পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার (এসপি) তাপতুন নাসরীন। তিনি বলেন, ‘গণিত মানুষকে যুক্তিবাদী হতে শেখায়। আর যারা যুক্তিবাদী তারা কখনো ইভ টিজিং, মাদক ও খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। যুক্তিবাদী মন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।’
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, মাকে খুশি করলে ভালো মানুষ হওয়া যায়। আর মাকে বড় করলে সেটা হয় দেশমাতৃকা। এ সময় তিনি ‘মাদক, মুখস্থ ও মিথ্যা’কে না বলতে শিক্ষার্থীদের শপথ করান।
উৎসবে অংশ নেয় শারীরিক প্রতিবন্ধী তামান্না আক্তার রিন্তু। সে ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি উৎসবে অংশ নেওয়ার অনুভূতি জানিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এতে অনেক অভিজ্ঞতা হলো, অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারলাম।
উৎসবের বিভিন্ন পর্ব সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচি সমন্বয়ক মুনির হাসান এবং রাজবাড়ী বন্ধুসভার উপদেষ্টা শামীমা আক্তার মুনমুন।
অনুষ্ঠানস্থলে গণিত একাডেমির বই, তাম্রলিপি, রকমারি ডটকম ও বন্ধুসভার স্টলে শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়। উৎসবে সার্বিক সহযোগিতা করেন রাজবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধুরা।


 

শরীয়তপুর গণিত উৎসবের খবর

     

কণ্ঠে তাদের স্বপ্নের কথা

 

শরীয়তপুরের পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকালের গণিত উৎসবে শিক্ষক ও অতিথিদের উদ্দেশে প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী l ছবি: প্রথম আলো

এক দিনের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বন্ধ করবে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের ছাত্রী আঁখি আলমগীর। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বের সঞ্চালক মুনির হাসানের এক প্রশ্নের জবাবে সে এমনই ইচ্ছার কথা জানিয়েছে।
শরীয়তপুরের পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের উৎসব। উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল-মামুন, গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখ।
শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছায়। কুইজ ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে তারা অতিথি ও শিক্ষকদের গণিতবিষয়ক নানা ধরনের প্রশ্ন করে। অতিথি ও শিক্ষকেরা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। কুইজ প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকেরাও অংশ নেন এবং তাঁরাও সঞ্চালকের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
ফলাফল ঘোষণার আগে বন্ধুসভার সদস্যরা গণিত না শেখার কুফল শীর্ষক নাটক প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করা হয়। পুরস্কার বিতরণী পর্বে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মুহাম্মদ কায়কোবাদ, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল-মামুন, জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস প্রমুখ। গণিতকে জয় করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। আর জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। এ দেশের মানুষের প্রচুর মেধা আছে। সে মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বিশ্ব দুয়ারে গৌরবের সঙ্গে দাঁড় করাতে হবে। সে কাজটি নতুন প্রজন্ম করতে পারবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন জাজিরা কিন্ডারগার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আবিবা আফরিন বলে, ‘প্রতিবছর প্রথম আলোর মাধ্যমে গণিত উৎসবের খবর জানতে পারি। সে গণিতভীতি দূর করে বিশ্বকে জয় করতে চাই।’
মূল মঞ্চের পাশে শরীয়তপুর বন্ধুসভা, গণিত অলিম্পিয়াড, রকমারি ডটকম, জাজিরা গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বিজ্ঞান ক্লাব, তাম্রলিপি ও বিজ্ঞান একাডেমি প্রভৃতি সংগঠনের স্টল ছিল। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। নিবন্ধিত মোট ৬০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩৯৭ জন শরীয়তপুর আঞ্চলিক পর্বে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় ৪০ জন বিজয়ী হয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় উৎসবের মূল পর্বে অংশ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।

 

 

সকাল থেকে চলছে শরীয়তপুরে গণিত উৎসব

 

শরীয়তপুরে গণিত উৎসবে শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শরীয়তপুরে শুরু হয়েছে গণিত উৎসব। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় এবারের উৎসবের আয়োজনে আছে গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
শিক্ষার্থীদের গাণিতিক মেধার উৎকর্ষ বৃদ্ধি এবং থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ৫৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্য নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এ উৎসব শুরু হয়েছে।

সকালে শরীয়তপুরের পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল্লাহ। এ সময় জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস এবং পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুববিষয়ক কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান এবং গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
শরীয়তপুর বন্ধুসভার সহযোগিতায় এ উৎসব চলবে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। অনেক শিক্ষার্থী উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে এবারের উৎসবে অংশ নিচ্ছে।

 

রাঙামাটি ও চাঁদপুর গণিত উৎসবের খবর

     

গণিতে মিলবে জীবনের হিসাব

চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গণিত উৎসবে অতিথিদের উদ্দেশে প্রশ্ন এক শিক্ষার্থীর। গতকাল তার মতোই শত শত খুদে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে স্কুলমাঠটি পরিণত হয়েছিল এক মিলনমেলায় l ছবি: প্রথম আলো

মানুষের জীবনটাই একটা গণিত। জীবনের ভালোমন্দ সবটাই গুনতে হয়; গুনতে হবেও। তাই তো গণিত জয়েই মিলতে পারে জীবনের হিসাব-নিকাশও। গণিত জয়ের স্বপ্নে বিভোর গণিত উৎসবের খুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন উপদেশ ছিল শিক্ষক ও গণিতবিদদের।
পৌষের শীত আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মধ্যে সাতসকালেই উৎসবে মেতে উঠেছিল শিক্ষার্থীরাও। তাদের উচ্ছ্বাস-উল্লাসে জমে উঠেছিল গণিত উৎসবের আসর। গতকাল শনিবার চাঁদপুর ও রাঙামাটিতে বসে ১৩তম এ আসর। দুই স্থানে উৎসবে অংশ নেয় প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিজয়ী ৮০ জন যাবে জাতীয় গণিত উৎসবে।
গণিত উৎসবের স্লোগান ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’। আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। আর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো।
চাঁদপুর: আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব শুরুর ঘণ্টা খানেক আগেই কানায় কানায় ভরে যায় শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সকাল সাড়ে নয়টায় প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের গাওয়া জাতীয় সংগীতে অংশ নিতে দাঁড়িয়ে যায় চাঁদপুর ও কুমিল্লার প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, বেলুন ও ইলিশের আদলে তৈরি প্ল্যাকার্ড।
জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচনা হয় উৎসবের। হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক চাঁদপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমিনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘গণিতের মাধ্যমে ঘটে মেধার বিকাশ, হয় আইকিউ উন্নত। বোঝা যায় ভালোমন্দ। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই গণিত শেখা অপরিহার্য। এ উৎসবের মাধ্যমে গণিত সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাবে, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মানুষের জীবনটাই গণিত। গণিতকে জয় করলেই জীবনের হিসাবও মিলাতে পারবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় গণিত জয়ের প্রতিযোগিতায়। সোয়া এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে শুরু হয় বন্ধুসভার সদস্য ও চাঁদপুরের শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। ঘণ্টা খানেক শিল্পীরা নাচে-গানে মাতিয়ে তোলেন পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ।
দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসানের পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষক-অতিথিরা প্রশ্নের জবাব দেন। সেরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় বই পুরস্কার। এরই ফাঁকে এক মিনিট করে শুভেচ্ছা বক্তব্যে অংশ নেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, প্রভাষক শুক্কুর আলম মজুমদার, প্রভাষক মো. মাহফুজুর রহমান, ভেন্যু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মনজুরুল আলম, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল, প্রথম আলোর কুমিল্লা অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক, চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ ও চাঁদপুর বন্ধুসভার সভাপতি আফরোজা খাতুন।
উৎসবের শেষ পর্যায়ে মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে না বলার অঙ্গীকার করান। ভেন্যু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্মারক ক্রেস্ট ও বিজয়ী ৪০ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় মেডেল ও সনদ।
রাঙামাটি: লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় গণিত উৎসব। প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে পাঁচ শ শিক্ষার্থী উৎসবে অংশগ্রহণ করে।
উৎসব উদ্বোধন করেন লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এম এ মতিন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা।
পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ এম এ মতিন, রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বাঞ্চিতা চাকমা, বাংলাদেশ গণিত অিলম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়কারী মুনির হাসান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এম এ মতিন বলেন, ‘গণিত উৎসব শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে গণিত-ভীতি কমে যাচ্ছে। গণিতকে এখন সবাই উৎসাহ নিয়ে দেখছে।’ রাঙামাটিতে এ উৎসব আয়োজন করায় পার্বত্য এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টির জন্য প্রথম আলো ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানান এম এ মতিন।
বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, প্রথম আলো শিক্ষার্থী ও তরুণদের মেধাবিকাশে কাজ করে যাওয়ায় দেশে মেধার বিকাশ ঘটছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অনুষ্ঠিত হয় সোয়া এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা। এরপর মুনির হাসানের সঞ্চালনায় শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দেন মুনির হাসানসহ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাবেদ মোর্শেদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নোভা আহমেদ ও আরশাদ চৌধুরী।
গণিত উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ জন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।

চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী গণিত উৎসবের খবর

সমস্বরে দেশ গড়ার শপথ

 

চট্টগ্রাম নগরের সেন্ট প্লাসিডস উচ্চবিদ্যালয়ে গতকালের গণিত উৎসবে শিক্ষক ও অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা l ছবি: প্রথম আলো

 

‘বিড়ালের চোখ রাতে জ্বলজ্বল করলেও মানুষের চোখ একই রকম জ্বলজ্বল করে না কেন?’, ‘টিকটিকি কেন দেয়াল থেকে পড়ে যায় না?’, ‘হার্ডওয়্যারকে হার্ড এবং সফটওয়্যারকে সফট কেন বলা হয়?’—শিক্ষার্থীদের এমন নানা প্রশ্নে জেরবার হয়েছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী পর্বে আসা অতিথি-বিশেষজ্ঞরা।
গণিতজয়ের পাশাপাশি দেশ এবং নিজেদের গড়ার শপথ নিয়েছে গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী উৎসবে আসা শিশু-কিশোরেরা। চট্টগ্রাম থেকে ৮০ ও নোয়াখালী অঞ্চল থেকে ৫০ জন প্রতিযোগী বিজয়ী হয়ে ঢাকায় উৎসবের মূল পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম: ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে নগরের সেন্ট প্লাসিডস হাইস্কুল মাঠে গতকাল অনুষ্ঠিত উৎসবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭১৩ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো, আর সহযোগিতায় প্রথম আলো বন্ধুসভা, চট্টগ্রাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে শপথ নিয়েছে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার।
সকালে দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয় জাতীয়, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। তিনটি পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে সেন্ট প্লাসিড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার প্রদীপ লুইজ রোজারিও, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাঈদ মো. সোহেল ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। জাতীয় সংগীত ও উৎসব সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত গণিতবিষয়ক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে নানা জিজ্ঞাসায়। তারা একটি স্বনির্ভর দেশ উপহার দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকী। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরশাদ এম চৌধুরী বলেন, ‘খেলাধুলা, বিজ্ঞানচর্চা, সবকিছুই করতে হবে। তবেই গণিতকে জয় করা যাবে।’
শিক্ষার্থীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব ও প্রভাষক মোহম্মদ কামরুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বন্ধুসভা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম উদ্দিন।
নোয়াখালী: পৌষের শীত, মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে নোয়াখালীর খুদে গণিতবিদেরা নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল গণিত উৎসবে যোগ দেয়। সকাল সাড়ে নয়টায় নোয়াখালী বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আবুল হোসেন এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন।
নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী আঞ্চলিক পর্বের এ উৎসবে যোগ দেয়। গণিতের ওপর সোয়া এক ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাসান। তাঁর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের প্রধান নিজাম উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ফাতেহা খানম এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রভাষক আবিদুর রহমান। উৎসবে চারটি বিভাগে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে তাদের হাতে একটি করে পদক, টি-শার্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।


 

নোয়াখালীতে চলছে গণিত উৎসব

 

নোয়াখালীতে আজ শুক্রবার গণিত উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ। ছবি: এম সাদেক

বর্ণাঢ্য আয়োজনে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে চলছে আঞ্চলিক গণিত উৎসব। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। 
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় ১৩তম গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
সকালে নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী উৎসবের শুরু হয়। এ সময় জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল তাজেরীন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আবুল হোসেন এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন।
নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের ১০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থী এ গণিত উৎসবের আঞ্চলিক পর্বের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক—এই চার বিভাগে ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে।

 

বগুড়া ও ঝালকাঠি গণিত উৎসবের খবর

গণিতে হবে বিশ্বজয়

 

ঝালকাঠির সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবে মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষকদের কাছে কৌতূহলী জিজ্ঞাসা এক শিক্ষার্থীর l ছবি: প্রথম আলো

তীব্র শীত আর কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকাল। তবে শীত-কুয়াশা দূরে ঠেলে সাতসকালেই গণিত জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছিল খুদে শিক্ষার্থীরা। তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে জমে ওঠে গণিত উৎসবের আসর।
বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গতকাল রোববার বসেছিল ওই আসর। দুই স্থানে অংশ নেয় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। গণিত উৎসবের স্লোগান: ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’। আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো।
বগুড়া: সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসব। এ সময় জাতীয় পতাকা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক এ বি এম মামুনুল কবির ও জেলা পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক। বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
বগুড়া অঞ্চলের এই উৎসবে জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে আট শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাও আগে পাঠ্যসূচিতে গণিত নিতে ভয় করত। এখন শিক্ষার্থীরা উৎসাহ নিয়ে গণিত শেখে। গণিত উৎসব করে। শিক্ষার্থীরা এভাবেই একদিন গণিতে বিশ্বজয় করবে। এ দেশকে এগিয়ে নেবে।’
অন্য বক্তারা বলেন, গণিত মানেই কঠিন বিষয়, ভীতির বিষয়—উৎসবে আসা শিক্ষার্থীরা সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে।
উৎসবে গণিতের ওপর সোয়া এক ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষা হয়। শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। শিক্ষার্থীদের গণিত নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন মুনির হাসান ছাড়াও সরকারি আজিজুল হক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মাহতাব হোসেন মণ্ডল, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান।
শূন্য জোড় না বিজোড়; শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করছে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারির এক শিক্ষার্থী। তার মতোই গণিতজয়ের স্বপ্নে বিভোর অনেক শিক্ষার্থী গতকাল জড়ো হয়েছিল এই স্কুলে অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবে l প্রথম আলো

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে অংশ নেন বগুড়ার আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠী ও চর্চা সাংস্কৃতিক একাডেমির শিল্পীরা।
প্রশ্নোত্তর পর্বে মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে ‘না’ বলে শপথ করান মুনির হাসান। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা—এই তিন মাকে ভালোবাসতে হবে। গণিতকে ভালোবেসে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াড উৎসবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে তিন মাকে সারা বিশ্বে তুলে ধরা সম্ভব। সে জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।’
দিন শেষে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ সামস্-উল-আলম। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর অনেক সৃজনশীল কাজের মধ্যে গণিতের এই উৎসব আয়োজন এক অনবদ্য উদ্যোগ। মেধাবী জাতি ও সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়তে নিজেকে তৈরি করার বিকল্প নেই। গণিত জয়ের এই চ্যালেঞ্জের জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি থাকতে হবে। গণিত জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকে জয় করতে হবে।’
বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম বলেন, ‘প্রথম আলো সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়। গণিতে বিশ্বজয়ের মাধ্যমে অবশ্যই শিক্ষার্থীরা একদিন প্রমাণ করবে কালকের পৃথিবীটা আমাদের হবে।’
বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ করিমের চার হাত-পা নেই। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী আসিফকে এই বাধা গণিত জয়ের স্বপ্ন দেখা থেকে দমাতে পারেনি। সাতসকালে হুইলচেয়ারে বসে নানার সঙ্গে গণিত উৎসবে এসেছিল সেও।
উৎসবে চারটি ভাগে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে তাদের হাতে একটি করে পদক, টি-শার্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।
ঝালকাঠি: সকাল নয়টায় ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয় গণিত উৎসবের। তবে সকাল সাতটা থেকেই শিক্ষার্থীরা মাঠে সমবেত হতে থাকে। উৎসবে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও ভোলার ৩০টি বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে সাত শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আতিয়ার রহমান। এ সময় জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বরিশাল শাখার ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হুমায়ুন ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান সমীরণ রায়।
সৈয়দ আতিয়ার রহমান, মো. আলমগীর হুমায়ুন ও সমীরণ রায় ছাড়াও উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাহাত হোসেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাভেদ ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দত্ত, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম ও মানিক লাল ভদ্র, ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক নান্টু রঞ্জন বিশ্বাস, প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি সাইফুর রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি আক্কাস সিকদার ও ঝালকাঠি বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সৈয়দ আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমাদের ভালোভাবে গণিত শিখতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, গণিতের সমীকরণে বর্তমান বিশ্ব চলছে।’
কুইজ পর্বে নানা প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। চারটি বিভাগে ৫১ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। এর আগে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন ঝালকাঠি বন্ধুসভার সদস্যরা।

 

রংপুর আঞ্চলিক গণিত উৎসবের খবর

দেশ জাগানোর অঙ্গীকার

কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু, কিন্তু জানার আকাঙ্ক্ষার শেষ ছিল না। শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী। গতকাল রংপুর জিলা স্কুল মাঠে গণিত উৎসবে l ছবি: প্রথম আলো

গণিতের জিয়ন কাঠিতে দেশ জাগানোর অঙ্গীকার করল শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে তিন ‘ম’—মুখস্থ, মিথ্যা ও মাদককে না বলার শপথ করেছে তারা। 
রংপুর জিলা স্কুল মাঠে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৫-এর আঞ্চলিক পর্বে শিক্ষার্থীরা এই অঙ্গীকার করে। গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো—স্লোগানের এই উৎসবে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের ১০৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এ উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। পৃষ্ঠপোষক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো।
কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে জড়ো হতে থাকেন। সকাল নয়টার আগেই পুরো মাঠ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এ টি এম মাহবুব-উল-করিম। আন্তর্জাতিক গণিত উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক রংপুর শাখার ব্যবস্থাপক অপূর্ব রায় ও বাংলাদেশ গণিত উৎসবের পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, ভালো শিক্ষার্থী হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।
মাহবুব-উল করিম বলেন, প্রথম আলো পত্রিকা গণিত উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করছে।
উদ্বোধনী পর্বের পর শিক্ষার্থীরা সোয়া ঘণ্টার মূল্যায়ন পরীক্ষায় বসে। পরে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব হয়। ‘শূন্য দিয়ে কোনো কিছুকে ভাগ করা যায় না কেন’, ‘মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে’, ‘আকাশের তারা কেন গণনা করা যায় না’—এমন অনেক মজার মজার প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নের উত্তর দেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র সরকার, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের শিক্ষক শাহজাহান মিয়া, পীরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আলমগীর মো. সাইফুল ইসলাম, শঠিবাড়ী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক তারিক প্রধান।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বন্ধুসভার সভাপতি শাহজাদ হোসেন ও প্রথম আলোর রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হক। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। উৎসবে বন্ধুসভার বন্ধুরা সংগীত পরিবেশন করেন।
উৎসবে চার ক্যাটাগরিতে ৬০ জন বিজয়ীকে সনদ দেওয়া হয়। তাদের পরিয়ে দেওয়া হয় পদক ও টি-শার্ট।