দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষ করে তোলা এবং সেই সঙ্গে কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠেয় ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) যোগদানের জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্য বাছাইয়ের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৩ ও একাদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে এবারের লড়াই। বরাবরের মতো এবারের উৎসবের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের ব্যাংক—ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, আর ব্যবস্থাপনায় প্রথম আলো। এবার ১৭টি গণিত অঞ্চলে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। অঞ্চলগুলো হলো চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, জামালপুর, যশোর, কুমিল্লা, বগুড়া, ফেনী, ফরিদপুর, রাঙামাটি, ঢাকা-১ ও ঢাকা-২। আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ীরা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় একাদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবে। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সেরাদের নিয়ে আয়োজন করা হবে নবম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। গণিত ক্যাম্পে অর্জিত সাফল্যের ভিত্তিতে গঠিত হবে বাংলাদেশ গণিত দল, যা আগামী জুলাই মাসে কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দেবে। এ ছাড়া থাকবে ২৫তম এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় গণিত অলিম্পিয়াডে (এপিএমও) অংশগ্রহণের সুযোগ।
ক্যাটাগরি
চারটি ক্যাটাগরিতে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে।
ক. প্রাইমারি: বাংলা মাধ্যম—তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৩ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৫।
খ. জুনিয়র: বাংলা মাধ্যম—ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৬ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৮।
গ. সেকেন্ডারি: বাংলা মাধ্যম—নবম, দশম শ্রেণী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং ও-লেভেল এবং ও-লেভেল পরীক্ষার্থী।
ঘ. হায়ার সেকেন্ডারি: বাংলা মাধ্যম—একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণী ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং এ-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষার্থী।
রেজিস্ট্রেশনের খোঁজখবর
সব আঞ্চলিক উৎসবে ‘আগে এলে আগে’ ভিত্তিতে মোট এক হাজার শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন করা হবে। শিক্ষার্থীদের ২০১২ সালে অধীত শ্রেণী অনুসারে তার ক্যাটাগরি নির্ধারিত হবে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমের বেলায় এটি প্রযোজ্য হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে কেউ অংশ নিতে পারবে, তবে রেজিস্ট্রেশন করার সময় শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, বেতনের রসিদ, ফলাফলের বিবরণী কিংবা এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র—যেকোনো একটি প্রমাণ হিসেবে দেখাতে হবে। আঞ্চলিক গণিত উৎসবের রেজিস্ট্রেশনের তারিখ, স্থানসহ বিস্তারিত তথ্য অচিরেই প্রথম আলো এবং রোববারে প্রকাশিত প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘বিজ্ঞান প্রজন্ম ও গণিত ইশকুল’ পাতায় প্রকাশ করা হবে।
গণিত ক্লাবগুলোর প্রতি
অন্যান্য বছরের মতো এবারও নির্বাচন করা হবে ২০১২ সালের সেরা গণিত ক্লাব। এ জন্য দেশের গণিত ক্লাবগুলোকে তাদের বিস্তারিত তথ্য এবং ২০১২ সালের কার্যক্রম গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির বরাবর পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ঠিকানা: গণিত উৎসব ২০১৩, প্রথম আলো (ষষ্ঠ তলা), ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
গণিত অলিম্পিয়াড ডেস্ক
প্রস্তুতি নিতে হবে বছরজুড়ে
অলিম্পিয়াডের পরীক্ষায় ভালো করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে সারা বছর ধরেই। শুধু অলিম্পিয়াডের আগে আগে কিছুদিন পড়াশোনা করে ভালো করা সম্ভব নয়। গণিত নিয়ে পড়াশোনা করা, সমস্যা সমাধানের চর্চা করা—এগুলো নিয়মিত হতে হবে। তা হলেই জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়বে।
পড়তে হবে পাঠ্যবই
অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতির একটা বড় অংশজুড়ে থাকতে হবে পাঠ্যবইটার ওপর ভালো দখল নেওয়া। সব ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীকেই নিজ নিজ পর্যায়ের বইগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে, বিষয়গুলো বুঝতে হবে। বিশেষ করে নবম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত জ্যামিতির বিষয়গুলো পড়তে হবে, সমাধান করতে হবে এক্সট্রাগুলোও।
গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www.matholympiad.org.bd) পাওয়া যাবে অলিম্পিয়াড-সংক্রান্ত সব তথ্য। সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় বইয়ের তালিকা এবং গণিত অলিম্পিয়াডের বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন। এ ছাড়া গণিত অলিম্পিয়াডের সব খবর পাওয়া যাবে ফেসবুক পেইজে (www.facebook.com/BdMOC) এবং গ্রুপে (www.facebook.com/groups/BdMOC)। গণিত বিষয়ক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে গণিত অলিম্পিয়াডের ব্লগে (blog.matholympiad.org.bd)
আমাদের গণিত ফোরাম
অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি রয়েছে আমাদের নিজস্ব গণিত ফোরাম। এই ফোরামে প্রত্যেকে গণিতের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, গণিত এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অলিম্পিয়াডের সাবেক এবং বর্তমান প্রতিযোগীদের অনেকেই ফোরামে নিয়মিত। তা ছাড়া ফোরামকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই পরিচালিত হয় অনলাইন ক্যাম্প। ফোরামে নিয়মিত থাকাটা যে কারও জন্যই নিয়মিত গণিতচর্চার খুব সুন্দর একটা সুযোগ হতে পারে। ফোরামের ঠিকানা— forum.matholympiad.org.bd
ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে একাদশ বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের প্রথম পর্ব। জিততে হলে জানতে হবে, করতে হবে প্রচুর অনুশীলন। প্রস্তুতি পর্বেতোমাদের সঙ্গে আছেগণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক সমন্বয়কারী অভীক রায়
প্রাইমারি
সবচেয়ে ছোট প্রতিযোগীদের বিভাগ নিয়েই সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয় গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক দলকে। এর সবচেয়ে বড় কারণটা হলো, অন্য সব ক্যাটাগরির তুলনায় এরা অনেক বেশি সৃজনশীল। সুতরাং এদের সৃজনশীলতার যোগ্য মূল্যায়ন করার ‘কঠিন’ কাজটা করতে গিয়ে প্রশ্ন করার লোকগুলোকে বরাবরই বেজায় খাটতে হয়।
কী কী পড়তে হবে?
প্রাইমারি ক্যাটাগরির প্রশ্নে খুব বেশি প্রাধান্য থাকে সংখ্যাতত্ত্বের একদম প্রাথমিক কিছু বিষয়ের। মৌলিক সংখ্যা, মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ, গসাগু ও লসাগু, বিভাজ্যতা, জোড় ও বিজোড় সংখ্যার বিভিন্ন ধর্ম—এ রকম ছোট ছোট ও সহজ সহজ বিষয়গুলো আয়ত্ত করা চাই। এগুলোর বাইরে স্থানীয় মান, গড়, শতকরা হিসাব, ভগ্নাংশ, দশমিক—এগুলোর ওপর দখল থাকাটাও জরুরি। জ্যামিতির দিক থেকে দেখতে হবে ক্ষেত্রফল, পরিসীমা, কোণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য। প্রশ্নগুলোতে শিক্ষার্থীদের চিন্তা করার শক্তি ব্যবহার করার জায়গা থাকবে। তেমনি দেখাতে হবে প্যাটার্ন বুঝতে পারার ক্ষমতাটা তোমাদের কেমন আছে।
কোথা থেকে পড়ব?
অলিম্পিয়াডের প্রতিযোগীদের প্রথম যেটা পড়তে হবে, সেটা হলো নিজ ক্যাটাগরির পাঠ্যবই। সেখানে যে বিষয়গুলো থাকে, সেগুলো ভালোমতো বুঝে পড়তে হবে। শুধু অনুশীলনীর অঙ্ক করে যাওয়া নয়, ভালোমতো পড়তে হবে সেই অনুশীলনীর আগে যে কথাগুলো লেখা থাকে সেগুলোও। গণিতের বিভিন্ন মজার বিষয় নিয়ে ধারণা পেতে পড়তে পারো মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও মোহাম্মদ কায়কোবাদ স্যারের লেখা নিউরনে অনুরণন এবং নিউরনে আবারো অনুরণন বই দুটি। এই বইগুলোতে বেশ কিছু মজার মজার সমস্যাও রয়েছে, সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করতে পারো। গণিত অলিম্পিয়াডের কিছু প্রশ্ন পাওয়া যাবে মুনির হাসানের
বছর ঘুরে আবার শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় গণিত অলিমিপয়াড ২০১৩। আজ গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন সমস্যা এবং সেগুলো সমাধানের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সমস্যা সমাধানের যত কৌশল
গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যা আর আমাদের বইয়ের অনুশীলনীর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, বইয়ের অনুশীলনী সমাধানের উপায়গুলো আমাদের আগে থেকেই জানা থাকে।
আর সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সেই উপায়টা প্রয়োগ করতে হয়। তবে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের অধিকাংশ সমস্যাই একাধিক ধাপের। তাই সমস্যা সমাধানের শুরুতেই আমাদের কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। একেকজনের ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের ধাপগুলো একেক রকমের হতে পারে। তবে সাধারণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য চারটা ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. সমস্যাটি ঠিকমতো বুঝতে পারা: আমাদের প্রথমেই সমস্যাটি ভালো করে বুঝতে হবে। কারণ, সমস্যাটির মধ্যেই সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য আছে। তাই সমস্যাটি বারবার পড়তে হবে এবং সমস্যাটির সব অংশ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে।
২. সমস্যাটি নিয়ে কাজ করা: সমস্যা পাওয়ার পর প্রথমেই যে জিনিসটি দেখতে হবে, তা হলো কোন পদ্ধতি বা সূত্র ব্যবহার করলে সমস্যাটি সমাধান করা যাবে বা কীভাবে এগোলে সমস্যাটি সমাধান হতে পারে, তা বের করা। তাই সমস্যার তথ্যগুলো বিভিন্ন মান ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে। অনেক সময়, বিশেষত জ্যামিতির ক্ষেত্রে ভালো করে একটি চিত্র আঁকলে সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়। তবে বলে রাখা ভালো, শুরুতে সহজে নাও বোঝা যেতে পারে কীভাবে কাজ করলে সমাধান হবে। তাই তোমার জানা সব কৌশল ব্যবহার করে দেখতে হবে কোন কৌশল কাজে লাগে।
৩. সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা: সমস্যাটি সমাধানের উপায় বের করে সমাধানের জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে হবে এবং এভাবে ধাপে ধাপে সমস্যাটি সমাধান করতে হবে।
৪. সমাধান সঠিকভাবে লেখা এবং পরীক্ষা করা: সমস্যার সমাধান সঠিকভাবে লিখতে পারাও সমস্যা সমাধানের বড় অংশ। তাই সমাধানের পর সঠিকভাবে সমাধানটি উপস্থাপন করতে হবে এবং প্রাপ্ত ফলাফলটি সঠিক কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
গণিত অলিমিপয়াডের প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত অনুশীলন এবং লেখাপড়ার বিকল্প নেই। প্রস্তুতির সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বিগত বছরের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা। তা হলে সমস্যার ধরন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে, যদিও বোর্ড পরীক্ষার মতো কমন পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই!
এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রশ্ন সম্পর্কে কিছু আলোচনা এবং কিছু সমস্যার সমাধান। সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বইয়ের
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রস্তাবিত গণিত ক্লাবগুলো নিয়ে প্রথমবারের মতো গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার পলাশীতে ফ্রেপড মিলনায়তনে হয়ে গেল প্রথম গণিত ক্লাব সমাবেশ। শুধু প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোই নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী অনেকে যোগ দেন এই সমাবেশে। গণিত ক্লাব কেন দরকার, কীভাবে একটি ক্লাব এলাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত বিষয়ে সচেতনতা জন্ম দিতে পারে—এ রকম নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে পরিচিতিমূলক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান। গণিত ক্লাবের পথচলা কীভাবে শুরু হতে পারে, কীভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমিক দলের সদস্য তানভীর আরাফাত।
অলিম্পিয়াডকে লক্ষ্য করে ক্লাবের কার্যক্রম কীভাবে চালানো যেতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমিক দলের অপর সদস্য ফরহাদ মহসিন। এ সময় রামানুজন গণিত সংঘের উদ্যোগে প্রস্তুত করা একটি পাঠ্যসূচি মডেল হিসেবে তুলে ধরা হয়। কার্যক্রমের পরবর্তী অংশে অলিম্পিয়াড-ভিত্তিক কার্যক্রমের বাইরেও একটি ক্লাব অন্য কী কী কাজ করতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমিক সমন্বয়ক অভীক রায়। একাডেমিক কাউন্সিলর সৌমিত্র চক্রবর্তী ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুল পরিচালনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া নওগাঁর সাইকাস ম্যাথ সার্কেলের তানভীর গালিব বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন আমাদের ক্লাবগুলোর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক হবে।
এ রকম সমাবেশের আয়োজন নিয়মিত করা উচিত।’ তিনি জানান, সম্ভব হলে ঢাকার বাইরে আঞ্চলিকভাবে এ ধরনের আয়োজন করা উচিত। সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪০টি গণিত ক্লাবের ৮২ জন সদস্য সমাবেশে অংশ নেন। গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে শেষ হয় সমাবেশ। ক্লাব সমাবেশের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন গণিত অলিম্পিয়াডের সমন্বয়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া ও মুভার্স কেন্দ্রীয় সার্কেলের সদস্য আইয়ুব সরকার, কামরুজ্জামান, তুষার চক্রবর্তী, মোহাইমিন, তাহনিন জাহান, সকাল রায়, সুদীপ্ত দেবনাথ, দিপু সরকার, পবিত্র কুমার, রকিবুল ইসলাম, জয়দীপ সরকার, রাকিব, সাদিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এবং পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল রকমারি ডট কম।
অভীক রায়
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গণিতে উর্যাসাহীর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে নিজেরা গণিতের চর্চা করে বা করার চেষ্টা করে। তবে বেশির ভাগ জায়গায়ই এই চর্চাটা হচ্ছে অনেকটা ব্যক্তিগতভাবে, ঠিক সংঘবদ্ধভাবে নয়। অনেকেরই ধারণা নেই কীভাবে গণিতের চর্চা শুরু করতে হবে? কী কী বই পড়তে হবে, তা কোথায় পাওয়া যাবে ইত্যাদি। এসব কাজ করা অনেকটাই সুবিধা হয় যদি একটা ক্লাব থাকে। একই এলাকার গণিত উর্যাসাহীরা একসঙ্গে বসে একসঙ্গে গণিতচর্চা করতে পারে। এখন প্রশ্নটা আসে যে গণিত ক্লাব শুরু করা যায় কীভাবে? ক্লাস আয়োজন করব কীভাবে? কী পড়াতে হবে?
তো এসব প্রশ্ন যাঁরা করছেন, যাঁরা বিভিন্ন স্থানে গণিত ক্লাব খুলেছেন বা খুলতে চান তাঁদের নিয়েই বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজন করেছে গণিত ক্লাব সমাবেশ।
স্থান: ফ্রেপড মিলনায়তন, পলাশীর মোড়, ঢাকা।
তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার।
সময়: সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
সমাবেশে অংশ নিতে কোনো রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে না। আগ্রহীদের নিচের তথ্যগুলোসহ ই-মেইল করতে হবে এই ঠিকানায় :
প্রয়োজনে: অভীক রায় (০১৯১২২৪৪৯৩০)
ফুলেল শুভেচ্ছায় সংবর্ধিত হলো পাঁচ খুদে গণিতবিদ। লাল-সবুজের বাংলাদেশের জন্য প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে তারা ছিনিয়ে এনেছে রৌপ্য পদক। সঙ্গে আরও আছে ব্রোঞ্জ আর সম্মানজনক স্বীকৃতি। এ সাফল্যের খবর আরও আনন্দঘন করে তুলতেই গণিত দলের সদস্যদের সম্মান জানাতে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠান ঘিরে গোটা মিলনায়তন পরিণত হয় খুদে গণিতবিদ, তাদের শিক্ষক, অভিভাবক ও গণিত উৎসবের স্বেচ্ছাসেবকদের মিলনমেলায়। শুধু শুভেচ্ছা আর বক্তৃতা নয়, গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের সেই সব দিনের মজার গল্প, স্মৃতিচারণা আর গানে গোটা মিলনায়তন মেতে ওঠে উৎসবে।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সূচনার পর আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী বক্তব্য দেন। এর পরই শুরু হয় গণিতে সফলদের শুভেচ্ছা জানানোর পালা। একে একে মঞ্চে আসে গণিতের পাঁচ বীর। দর্শক সারি থেকে উঠে এসে ওদের পাশে দাঁড়ান অতিথিরা। যোগ দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদারও। ফুলের তোড়া দিয়ে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান অতিথিরা। এ সময় মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে গোটা মিলনায়তন। গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানানোর ফাঁকে ফাঁকে চলে শুভেচ্ছা বক্তৃতা।
জুলাইয়ে আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অনুষ্ঠিত হয় ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। এতে বাংলাদেশ দলের সদস্য চট্টগ্রাম কলেজের ধনঞ্জয় বিশ্বাস দেশের পক্ষে প্রথমবারের মতো রৌপ্যপদক অর্জন করে। দলের সদস্য ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সৌরভ দাস ও নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ব্রোঞ্জপদক এবং নটর ডেম কলেজের মির্জা মো. তানজিম শরীফ ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আদিব হাসান সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করে। গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলকে আর্থিক সহায়তা দেয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। আর সার্বিক সহায়তায় ছিল প্রথম আলো।
অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খুদে গণিতবিদদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পক্ষে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ, প্রথম আলোর পক্ষে সম্পাদক মতিউর রহমান ও সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান, রকমারি ডটকমের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের পক্ষে মোহিত কামাল, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার প্রজেক্টের পক্ষে বদিউল আলম মজুমদার, মুক্ত আসরের পক্ষে আবু সাঈদ, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) পক্ষে হুমায়ূন কবির, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির পক্ষে আরাফাত, প্রথম আলো বন্ধুসভার পক্ষে সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান রওশন ফুলের তোড়া দিয়ে খুদে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান।
ভীতি দূর করে গণিত এক উৎসবে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জামিলুর রেজা চৌধুরী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, ‘গণিত নিয়ে বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এত কাজ হয় না। খুদে গণিতবিদেরা আমাদের জন্য যে সম্মান এনে দিয়েছে, এটা আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নেবে।’
খুদে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সায়েম আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত। অংশগ্রহণকারীরা একটি কঠিন বিষয়কে সহজ করে জয় ছিনিয়ে এনেছে।’
এবার রৌপ্য পদক পেলেও দু-এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে স্বর্ণ ছিনিয়ে আনবে বলে আশাবাদ ছিল আব্দুল কাইয়ুমের কণ্ঠে।
খুদে গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও বক্তব্য দেন প্রবীণ গণিতবিদ খোদাদাদ খান, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিদ এফ আর সরকার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ূন কবির, নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ বেঞ্জামিন ডি কস্তা, আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইনুদ্দিন মুনেম, লেখক ও চিকিৎসক মোহিত কামাল প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি ও বিশিষ্ট লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভিডিও বক্তব্য দেখানো হয়।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। গণিতের গান ‘মন মেলে শোন শুনতে পাবি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
--
প্রথম আলো, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) প্রথমবারের মতো রুপার পদক পেল বাংলাদেশ। দেশের তরুণ গণিতবিদেরা জিতেছে দুটি ব্রোঞ্জ পদকও। প্রতিযোগিতাটিতে এ পর্যন্ত সেরা সাফল্য দিয়েই এবারের অলিম্পিয়াড শেষ করল বাংলাদেশ।
আগের দিনই কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ধনঞ্জয় বিশ্বাসের রুপা জেতার বিষয়টি। বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। সেটাই হয়েছে গতকাল রোববার। সৌরভ দাশ ও নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জিতেছেন ব্রোঞ্জ।
আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অনুষ্ঠিত ৫৩তম আইএমওর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হয় স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে। এর আগে বিচারকদের চূড়ান্ত সভায় ফল অনুমোদিত হয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ১৪ থেকে ২০ নম্বর পেয়েছে তারা ব্রোঞ্জ, ২১ থেকে ২৭ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা রুপা এবং ২৮ ও এর বেশি নম্বরপ্রাপ্তরা স্বর্ণপদক জিতেছে। ধনঞ্জয় বিশ্বাস ২৫, নূর মোহাম্মদ এবং সৌরভ দাশ ১৫ নম্বর পেয়েছে। বাংলাদেশ দলের অন্য দুই সদস্য পেয়েছে সম্মানজনক স্বীকৃতি।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর সারা দেশ থেকে গণিত উৎসবের মাধ্যমে এ জন্য শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হয়।
প্রবীণ গণিতবিদ অধ্যাপক খোদাদাদ খান প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘গণিতের এই কঠিন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এই সাফল্য অনেক বড় খুশির খবর। অভিনন্দন ধনঞ্জয়কে, অভিনন্দন বাংলাদেশ গণিত দলকে।’
আনন্দিত বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালও। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক ই-মেইল বার্তায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে আগামীতে আরও ভালো করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, ‘এই অর্জন অনেক আনন্দের, অনেক গর্বের। আন্তর্জাতিক এই মেধার লড়াইয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আবারও প্রমাণ করল তাদের যোগ্যতা। গণিত নিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা, তার আরও একধাপ পূর্ণ হলো এই পদকের মাধ্যমে।’ রুপাজয়ী ধনঞ্জয় বিশ্বাস এবার চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ধনঞ্জয়ের মা স্বপ্না রানী দে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে দিন-রাত সব সময় অঙ্ক নিয়ে পড়ে থাকত। খেলাধুলা-আড্ডা কিছুই করত না। তার সব পরিশ্রম ও সাধনা সত্যি হলো এই অর্জনের মাধ্যমে। অনেক খুশি হয়েছি।’
সন্তানের এই সাফল্যে গর্বিত বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘এই খবরটার জন্য কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস তাবরেজ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম রুপার পদক পাওয়ায় ধনঞ্জয়কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, এই কৃতিত্ব বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অতীতের মতো ভবিষ্যতেও এই গণিত উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করার আশা রাখে।
এবারের অলিম্পিয়াডে দলগত সাফল্যে দীর্ঘদিনের চ্যাম্পিয়ন চীনকে পেছনে ফেলে এই প্রথমবার দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম স্থান দখল করেছে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবারের আইএমও শেষ হওয়ার কথা।
Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-16/news/273990
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের পক্ষে ২৫ নম্বর পেয়ে প্রথম রুপার পদক পেল ধনঞ্জয় বিশ্বাস। এ ছাড়া, বাংলাদেশ এবার দুটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।
ধনঞ্জয় চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী এবং মা স্বাস্থ্যসহকারী স্বপ্না রানী দে খুব খুশি ছেলের এই সাফল্যে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ধনঞ্জয় বড়। দ্বিতীয়বারের মতো এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় ধনঞ্জয়। উল্লেখ্য, গত বছর নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৫২তম আইএমওতে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে ধনঞ্জয়। বড় হয়ে গণিত ও পদার্থ নিয়ে পড়তে চায় ধনঞ্জয়।
বাংলাদেশের এবারকার যাত্রা অষ্টমবারের মতো। ১৯৫৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন শুরু হয়। ২০০৪ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত ৪৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান যোগ দেন। বাংলাদেশ সেখানেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ২০০৫ সালে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত ৪৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নেয়।
আইএমওতে বাংলাদেশের শিশুকাল কাটলেও এরই মধ্যে আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। ২০০৯ সালে জার্মানির ব্রিমেনে আইএমওর সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০তম আয়োজনে সামিন রিয়াসাত ও নাজিয়া চৌধুরী প্রথমবারের মতো অর্জন করে দুটি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১০ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত ৫১তম আইএমওতে তারিক আদনান এবং ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে ৫২তম আইএমওতে ধনঞ্জয় বিশ্বাস ব্রোঞ্জ পদক পায়। গত ছয় বছরে চারটি ব্রোঞ্জ পদক এবং ১৩টি ‘অনারেবল ম্যানশন’ অর্জন করেছে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উত্সবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।
Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-15/news/273901
পর্যটন নগরের নানা আকর্ষণ থাকে। তবে পৃথিবীর ১০০টি দেশ থেকে আসা বেশির ভাগই একটি ‘সামার’ অলিম্পিয়াডের কথা ভাবে। সে কারণে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে কম লোককে। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় নগরের সবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম দেখাতে। সেখানে দুপুর কাটিয়ে বিকেলে আবার তাদের বিচ ফুটবল, টেবিল টেনিস খেলায় ফেরার কথা। এর মধ্যে আমাদের সৌরভ আর আবিদের দল বিচ ফুটবলে চার গোলে হেরে দর্শক সারিতে জায়গা নিয়েছে।
নতুন বন্ধু বানানো, নতুন নতুন খেলার সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ভাববিনিময়ে শিক্ষার্থীরা যখন ব্যস্ত, তখন তাদের দলনেতা আর উপদলনেতারা হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) উত্তরপত্র মূল্যায়ন ঠিক আমাদের দেশের যেকোনো পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের উল্টো। আমাদের দেশে উত্তরপত্র মূল্যায়নের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে শিক্ষার্থী কী জানে না, তা বের করার চেষ্টা। এখানে তার উল্টো।
যেহেতু ১০০ দেশের উত্তরপত্র ১০০টি দেশের মূল্যায়নকারীরা মূল্যায়ন করে থাকেন, তাই প্রথম থেকেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। পরীক্ষার আগে যখন সমস্যা চূড়ান্ত করা হয়, তখন সেটি সমাধানের নম্বর দেওয়ার কাঠামোও (মার্কিং স্কিম) চূড়ান্ত করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এক বা একাধিক অফিসিয়াল সমাধানও ঠিক করা হয়। তবে এই সমাধান দেওয়া হয় কেবল ধারণার জন্য। প্রকৃত প্রস্তাবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অফিসিয়াল সমাধানে কাজ করে না। এতে বোঝা যায়, পরিণত মস্তিষ্কের সঙ্গে তরুণদের চিন্তাভাবনার অনেক তফাৎ থাকে। মার্কিং স্কিমে মূলত কী কী করলে পরে কত নম্বর পাওয়া যাবে, সেটি ঠিক করা থাকে। কিন্তু কীভাবে তা করা হলো, তার কোনো নির্দেশনা থাকে না। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী তার ইচ্ছামতো সমস্যার সমাধান করতে পারে। যদি সে সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারে, যেভাবেই হোক, তাহলে তার প্রাপ্য ৭-এ ৭! তবে কথা থাকে, সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রমাণ করেছে। কোনো কোনো সমস্যার অনেকগুলো অংশ থাকে। সম্পূর্ণ নম্বর পেতে হলে তার সবটুকুই করতে হয়। যেমন এবার ৪ নম্বর সমস্যার চারটি অংশ রয়েছে। সবগুলোই করতে হবে।
সমস্যার সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো বিষয় নেই। খাতার নানা অংশে তা থাকলেই চলে। তবে সেসব ক্ষেত্রে দলনেতা আর সমন্বয়কারীদের ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। আবার কোনো সমস্যার সমাধানে কোনো শিক্ষার্থী যদি এমন কিছু করতে পারে, যা হয়তো সেভাবে নেই, কিন্তু আসলে ওই পথে এগুলোর সমাধান পাওয়া যাবে, তাহলেও শিক্ষার্থীকে কিছু নম্বর দেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আমরা প্রথম দিনের তিনটি সমস্যার খাতা দেখা চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে ৩ নম্বর সমস্যাটি আমাদের কোনো শিক্ষার্থী চেষ্টা করেনি। ১ নম্বর সমস্যার সমাধান সবাই পূর্ণভাবে করেছে। আইএমওতে অংশ নেওয়ার অষ্টমবারের মাথায় এবারই প্রথম আমাদের সব প্রতিযোগী অন্তত একটি সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করেছে। এর মানে, এবার আর কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না। অন্তত একটা সম্মানজনক উদ্ধৃতি তারা পাবে।
২ নম্বর সমস্যা থেকে সৌরভ ও ধনঞ্জয়—উভয়ে ৪ নম্বর করে সংগ্রহ করেছে। ধনঞ্জয়ের আংশিক প্রচেষ্টা যে শেষ পর্যন্ত একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিল, তা খুঁজে পেতে সমন্বয়কারীদের যথেষ্ট খাটাখাটুনি করতে হয়েছে।
পাঠক যখন এই প্রতিবেদন পড়বেন, ততক্ষণে আমাদের আরও দুটি সমস্যার সমন্বয়ের কাজ শেষ হবে। তবে সব খাতা দেখা শেষ হতে শনিবার দুপুর (বাংলাদেশ সময় রাত) গড়িয়ে যাবে। আর পদকের হিসাব-নিকাশ হবে রোববার সকালে। সেদিন বিকেলেই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের আইএমও।
এ নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।
Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-14/news/273452