বাংলাদেশের প্রথম রুপা জয়

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের পক্ষে ২৫ নম্বর পেয়ে প্রথম রুপার পদক পেল ধনঞ্জয় বিশ্বাস। এ ছাড়া, বাংলাদেশ এবার দুটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।
ধনঞ্জয় চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী এবং মা স্বাস্থ্যসহকারী স্বপ্না রানী দে খুব খুশি ছেলের এই সাফল্যে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ধনঞ্জয় বড়। দ্বিতীয়বারের মতো এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় ধনঞ্জয়। উল্লেখ্য, গত বছর নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৫২তম আইএমওতে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে ধনঞ্জয়। বড় হয়ে গণিত ও পদার্থ নিয়ে পড়তে চায় ধনঞ্জয়।
বাংলাদেশের এবারকার যাত্রা অষ্টমবারের মতো। ১৯৫৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন শুরু হয়। ২০০৪ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত ৪৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান যোগ দেন। বাংলাদেশ সেখানেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ২০০৫ সালে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত ৪৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নেয়।
আইএমওতে বাংলাদেশের শিশুকাল কাটলেও এরই মধ্যে আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। ২০০৯ সালে জার্মানির ব্রিমেনে আইএমওর সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০তম আয়োজনে সামিন রিয়াসাত ও নাজিয়া চৌধুরী প্রথমবারের মতো অর্জন করে দুটি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১০ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত ৫১তম আইএমওতে তারিক আদনান এবং ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে ৫২তম আইএমওতে ধনঞ্জয় বিশ্বাস ব্রোঞ্জ পদক পায়। গত ছয় বছরে চারটি ব্রোঞ্জ পদক এবং ১৩টি ‘অনারেবল ম্যানশন’ অর্জন করেছে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উত্সবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-15/news/273901

এবার কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না

পর্যটন নগরের নানা আকর্ষণ থাকে। তবে পৃথিবীর ১০০টি দেশ থেকে আসা বেশির ভাগই একটি ‘সামার’ অলিম্পিয়াডের কথা ভাবে। সে কারণে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে কম লোককে। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় নগরের সবচেয়ে বড় অ্যাকুয়ারিয়াম দেখাতে। সেখানে দুপুর কাটিয়ে বিকেলে আবার তাদের বিচ ফুটবল, টেবিল টেনিস খেলায় ফেরার কথা। এর মধ্যে আমাদের সৌরভ আর আবিদের দল বিচ ফুটবলে চার গোলে হেরে দর্শক সারিতে জায়গা নিয়েছে।
নতুন বন্ধু বানানো, নতুন নতুন খেলার সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে ভাববিনিময়ে শিক্ষার্থীরা যখন ব্যস্ত, তখন তাদের দলনেতা আর উপদলনেতারা হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) উত্তরপত্র মূল্যায়ন ঠিক আমাদের দেশের যেকোনো পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের উল্টো। আমাদের দেশে উত্তরপত্র মূল্যায়নের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে শিক্ষার্থী কী জানে না, তা বের করার চেষ্টা। এখানে তার উল্টো।
যেহেতু ১০০ দেশের উত্তরপত্র ১০০টি দেশের মূল্যায়নকারীরা মূল্যায়ন করে থাকেন, তাই প্রথম থেকেই সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। পরীক্ষার আগে যখন সমস্যা চূড়ান্ত করা হয়, তখন সেটি সমাধানের নম্বর দেওয়ার কাঠামোও (মার্কিং স্কিম) চূড়ান্ত করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এক বা একাধিক অফিসিয়াল সমাধানও ঠিক করা হয়। তবে এই সমাধান দেওয়া হয় কেবল ধারণার জন্য। প্রকৃত প্রস্তাবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অফিসিয়াল সমাধানে কাজ করে না। এতে বোঝা যায়, পরিণত মস্তিষ্কের সঙ্গে তরুণদের চিন্তাভাবনার অনেক তফাৎ থাকে। মার্কিং স্কিমে মূলত কী কী করলে পরে কত নম্বর পাওয়া যাবে, সেটি ঠিক করা থাকে। কিন্তু কীভাবে তা করা হলো, তার কোনো নির্দেশনা থাকে না। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী তার ইচ্ছামতো সমস্যার সমাধান করতে পারে। যদি সে সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারে, যেভাবেই হোক, তাহলে তার প্রাপ্য ৭-এ ৭! তবে কথা থাকে, সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় প্রমাণ করেছে। কোনো কোনো সমস্যার অনেকগুলো অংশ থাকে। সম্পূর্ণ নম্বর পেতে হলে তার সবটুকুই করতে হয়। যেমন এবার ৪ নম্বর সমস্যার চারটি অংশ রয়েছে। সবগুলোই করতে হবে।
সমস্যার সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ারও কোনো বিষয় নেই। খাতার নানা অংশে তা থাকলেই চলে। তবে সেসব ক্ষেত্রে দলনেতা আর সমন্বয়কারীদের ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়। আবার কোনো সমস্যার সমাধানে কোনো শিক্ষার্থী যদি এমন কিছু করতে পারে, যা হয়তো সেভাবে নেই, কিন্তু আসলে ওই পথে এগুলোর সমাধান পাওয়া যাবে, তাহলেও শিক্ষার্থীকে কিছু নম্বর দেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আমরা প্রথম দিনের তিনটি সমস্যার খাতা দেখা চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে ৩ নম্বর সমস্যাটি আমাদের কোনো শিক্ষার্থী চেষ্টা করেনি। ১ নম্বর সমস্যার সমাধান সবাই পূর্ণভাবে করেছে। আইএমওতে অংশ নেওয়ার অষ্টমবারের মাথায় এবারই প্রথম আমাদের সব প্রতিযোগী অন্তত একটি সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করেছে। এর মানে, এবার আর কাউকে খালি হাতে ফিরতে হবে না। অন্তত একটা সম্মানজনক উদ্ধৃতি তারা পাবে।
২ নম্বর সমস্যা থেকে সৌরভ ও ধনঞ্জয়—উভয়ে ৪ নম্বর করে সংগ্রহ করেছে। ধনঞ্জয়ের আংশিক প্রচেষ্টা যে শেষ পর্যন্ত একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিল, তা খুঁজে পেতে সমন্বয়কারীদের যথেষ্ট খাটাখাটুনি করতে হয়েছে।
পাঠক যখন এই প্রতিবেদন পড়বেন, ততক্ষণে আমাদের আরও দুটি সমস্যার সমন্বয়ের কাজ শেষ হবে। তবে সব খাতা দেখা শেষ হতে শনিবার দুপুর (বাংলাদেশ সময় রাত) গড়িয়ে যাবে। আর পদকের হিসাব-নিকাশ হবে রোববার সকালে। সেদিন বিকেলেই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের আইএমও।
এ নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।

Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-14/news/273452

শুরু হয়েছে খেলার লড়াই

প্রভিনশিয়াল হোটেলের নিচতলায় দুটি বড় কক্ষকে খেলাধুলার ঘরে পরিণত করা হয়েছে। একদিকে রয়েছে দাবার মতো মাথা ঘামানোর খেলা, অন্যদিকে রয়েছে টেবিল টেনিস আর ফুটবলের আয়োজন। বিভিন্ন দেশের বিশেষ কিছু খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে।
রক, পেপার আর সিজস্রের মতো একটি আর্জেন্টিয়ান খেলা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি হলো হাতের অবস্থান ও প্রকাশ দেখে নিজের জবাব দেওয়া। পুরো ব্যাপারটা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। তবে অনেকেই এ খেলায় অংশ নিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তাস, দাবা, ফুটবল ও অন্যান্য খেলার প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশ দলের সদস্যরাও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে। এর আগে গত বুধবার গণিত অলিম্পিয়াডের মূল পর্বের পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
অজ্ঞাতবাস থেকে দলনেতারা এসে যোগ দিয়েছেন আমাদের সঙ্গে। তবে প্রভিনশিয়াল হোটেলে নয়, আমি আর মাহবুব এসে উঠেছি পার্শ্ববর্তী হারমিটেজ হোটেলে। এখানেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও সমন্বয়ের কাজ শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। বুধবার পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশ দলের সদস্যরা তাদের দলনেতা মাহবুব মজুমদারের সঙ্গে দেখা করে। তারা তাদের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন দিক মাহবুবকে অবহিত করেছে।
এদিকে, গত দুই দিন মুখ লুকিয়ে থাকার পর গতকাল সকাল থেকে সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। শীতের প্রকোপও একটু কম মনে হচ্ছে। তবে সূর্য ওঠার ঠিক আগে আগে আটলান্টিকের ওপরে আকাশে দীপ্যমান হয়ে ছিল বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। দক্ষিণ গোলার্ধে আকাশ দেখার অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকমের, তা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় টের পেয়েছি। তবে ভোরের আকাশে জ্বলজ্বলে তারাদের দেখার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। পূর্বাকাশে খুব সহজে শুক্র আর বৃহস্পতিকে দেখা গেছে। চাঁদের উপস্থিতিও যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে।
সকাল থেকে দলনেতারা তাঁদের শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখা শুরু করেছেন; বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চমৎকারিত্ব নিয়ে আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তবে এশিয়ার দেশগুলোর এবার ভালো করার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, পরীক্ষার সময় তা নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে বেশ কয়েকজন দলনেতার। তাঁদের বক্তব্য, দুটি জ্যামিতি সমস্যা থাকলেও ৫ নম্বরটি মোটেই সহজ ছিল না।
গতবার থেকে বিশেষ নজরে আসা সৌদি আরব দল এবারও আলোচনায় রয়েছে। যদিও এরই মধ্যে আমেরিকার আইএমও বিশেষজ্ঞ টিটু এনডারেস্কু ও ডরিন দেশে ফিরে গেছেন। তাঁদের জায়গা নিয়েছেন সদ্য গণিত স্নাতক পামার নিবেইন। নিবেইন সম্প্রতি গাণিতিক সমস্যাবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আর্ট অব প্রবলেম সলভিংয়ে পূর্ণকালীন ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তাঁর হিসেবে সৌদি আরবের শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে বাংলাদেশ দল বর্তমানে আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অবস্থান করছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি পাঁচজনের এই গণিত দল নির্বাচন করে।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-13/news/273196

পরীক্ষা শেষ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু

পরীক্ষা নিয়ে খুদে গণিতবিদদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। উপদলনেতাদের চোখে-মুখেও একই ছাপ। মিলনায়তনে উপস্থিত প্রায় সবার মধ্যেই ছিল এমন উত্তেজনা। সঙ্গে বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা। গতকাল বুধবার এমন পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) খুদে গণিতবিদদের মেধার লড়াই। এর পরই শুরু হয়েছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন। আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অলিম্পিয়াডের ৫৩তম এই আসরে অংশ নিচ্ছে ১০০টি দেশের পাঁচ শতাধিক খুদে গণিতবিদ। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ।
গত দুই দিনে প্রতিযোগীদের ছয়টি গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়। এবারের সমস্যা বাছাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বীজগণিতের অসমতার ফিরে আসা। কয়েক বছর ধরে আইএমওতে অসমতার দেখা পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা শেষে রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের অনুলিপি রেখে মূল কপি নিজ নিজ দেশের দলনেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। আইএমওর নিয়মানুযায়ী, প্রতিটি উত্তরপত্র দলনেতা ও উপদলনেতা এবং স্বাগতিক দেশের একটি দল মূল্যায়ন করবে। পরে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর চূড়ান্ত করা হবে।
আমার দেখা অলিম্পিয়াডগুলোর মধ্যে এবারই প্রথম প্রতিযোগীদের থাকার আর পরীক্ষার জায়গা একই স্থানে করা হয়েছে। মার ডেল প্লাটা শহরের হোটেল প্রভিন্সিয়ালের দ্বিতীয় তলায় একটি বড় এবং একটি ছোট মিলনায়তনে ৫৫৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
এই নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।
আর আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বারের মতো আইএমওর আয়োজক দেশ। এর আগে ১৯৯৭ সালে ৩৮তম আইএমও হয়েছে এই মার ডেল প্লাটা শহরে। আর্জেন্টিনার সপ্তম এ বৃহত্তম শহরটি রাজধানী বুয়েনস এইরেস থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে, আটলান্টিকের পারে একটি পর্যটন নগর। নগরের সাড়ে ছয় লাখ অধিবাসীর সবাই কোনো না কোনোভাবে পর্যটন, মাছের বা বন্দরের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটি একাধারে পোতাশ্রয়ও। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দীর্ঘ এ সমুদ্রতটজুড়ে হাজার খানেক হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স রয়েছে। আমাদের গাইড মাউরো জানালেন, পর্যটন মৌসুমে তার পরও সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না!
তবে, মার ডেল প্লাটাকে দেখে মূল আর্জেন্টিনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া মুশকিল। কারণ, আর্জেন্টিনা মূলত গ্রামপ্রধান দেশ, শহরপ্রধান নয়। সোয়া চার কোটি লোক থাকে ১০ লাখ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে! নামের সঙ্গে রুপা থাকলেও (ল্যাটিন আর্জেন্টান মানে রুপা) এখানে রুপার কোনো পাহাড় নেই। ধারণা করা হয় রুপার পাহাড়ের লোভে স্প্যানিশরা এখানে ঘাঁটি গেড়েছিল।
শীতপ্রধান দেশ বলে আমরা এখনো ঝাল কোনো খাবারের কবলে পড়িনি। তিন বেলা খাবারে মিষ্টির আধিক্য বেশি।
মঙ্গলবার প্রথম দিনের পরীক্ষা চলাকালে উপনেতাদের মহাসমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ইঞ্জিন নৌকা, তবে আমাদের দেশের মতো নয়। অনেক যন্ত্রপাতি আছে দেখলাম! ঘণ্টা খানেক চলার পর বোঝা গেল, প্রকৃতি বিরূপ। সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল, কিন্তু সমুদ্রে সেটা ঝড়ের রূপ নিল। ফলে আমরা বেশি দূর যেতে পারলাম না। ঢেউয়ের সঙ্গে নৌকার দুলুনিটা যথেষ্ট ভয়ের ছিল। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদের বেড়ানোর ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকা নিয়ে গেলেন সিলের খাঁড়িতে। মোটা, ভুটকু, শুকনা আর লম্বা একদল সিল দেখা গেল সমুদ্র পাড়ে ঘুরে বেড়াতে। বেশি কাছে না গেলেও সিলের বোঁটকা গন্ধ টের পেয়েছি সম্যকভাবে।
পরদিন সকালে সমুদ্রের কথা বলার সময় ধনঞ্জয় জানতে চাইল, সাঁতার জানি কি না।
শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগরে সাঁতার জানলেই বা কী!

Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-12/news/272989

শুরু হলো ৫৩তম মেধার লড়াই

১০০টি দেশের পাঁচ শতাধিক গণিতবিদের অংশগ্রহণে শুরু হলো বিশ্বের প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেধার লড়াই্ল—আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)। এটি অলিম্পিয়াডের ৫৩তম আসর। গতকাল সোমবার আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অলিম্পিয়াডের আনুষ্ঠানিকতা।
শহরের রেডিও সেন্টার মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা গাণিতিক সমস্যা সমাধানে খুদে গণিতবিদদের সাফল্যকে উৎসাহিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে খুদে গণিতবিদদের স্বাগত জানান আর্জেন্টিনার শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক আলবার্তো সিলোনি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী মন্ত্রী জোশে লিনো বারানো ও বুয়েনস এইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর রুবেন হালু। উপস্থিত ছিলেন মার ডেল প্লাটা শহরের মেয়র। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইএমও উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান নজর আগাখানভ।
আইএমওর নিয়মানুসারে গতকাল নিজ নিজ দলের দলনেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগীদের ‘চোখের দেখা’ হয়েছে। মিলনায়তনে বাংলাদেশ দলের দলনেতা মাহবুব মজুমদার হাত নেড়ে তাঁর দলের গণিতবিদদের শুভেচ্ছা জানান। আইএমওর প্রথা অনুসারে মাহবুব মজুমদার ৪ জুলাই থেকে অন্য দলনেতাদের সঙ্গে অজ্ঞাতবাসে রয়েছেন। সেখানে তাঁরা আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবারের জন্য সমস্যা নির্বাচন করছেন। এবার বাংলাদেশ দলে রয়েছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ: ধনঞ্জয় বিশ্বাস, মির্জা মো. তানজীম শরীফ, সৌরভ দাশ, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও আদিব হাসান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রতিযোগীরা হোটেলে ফিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য সময় কাটিয়েছে। আজ সকাল নয়টা থেকে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টা) প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগীদের সাড়ে চার ঘণ্টা সময়ে তিনটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এর আগে রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন দেশের গণিতবিদেরা মার ডেল প্লাটা শহরে উপস্থিত হয়। বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা পৌঁছায় ভোর ছয়টায়। মার ডেল প্লাটাতে হোটেল প্রোভিন্সিয়ালে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সব দেশের প্রতিযোগীরা অবস্থান করছে। তবে ফ্লাইট জটিলতায় কয়েকটি দেশের প্রতিযোগীরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। আজ পরীক্ষা শুরু হওয়া পর্যন্ত অন্য উপদলনেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের উপদলনেতাও হোটেলে অবস্থান করবেন। এরপর নগরের অন্য প্রান্তের একটি হোটেলে দলনেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন খাতা মূল্যায়নের কাজে।
হোটেলে গণিত দলকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ দলের গাইড মাউরো সিলম্যান। মাউরো ২০০৭ সালের ভিয়েতনাম ও ২০০৮ সালের স্পেনের আইএমওতে আর্জেন্টিনা দলের পক্ষে অংশ নিয়েছেন। আইএমও ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী মাউরো আগামী কয়েক দিন বাংলাদেশ দলের দেখভাল করবেন।
সকালে গাইড মাউরো বলেন, ‘চাইলে আমি ওদের কিছু টিপসও দিতে পারব।’ মাউরো বর্তমানে গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এবার নিয়ে অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্যরা এই প্রথম একজন গণিতের শিক্ষার্থীকে গাইড হিসেবে পেয়েছে। দুই দিনের যাত্রাপথের ক্লান্তি সত্ত্বেও দলের সদস্যরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।
উত্তর গোলার্ধে এখন গরমের সময় হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে এখন শীতকাল। মার ডেল প্লাটা সমুদ্রতীরবর্তী শহর বলে এর তাপমাত্রা একটু বেশি। কিন্তু রাতের দিকে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে চলে যেতে পারে বলে জানা গেছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১২ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। আয়োজকেরা সবাইকে একটি করে উলের জ্যাকেট ও একটি করে ছাতা দিয়েছে। কারণ, আর্জেন্টিনার শীতের সঙ্গে বৃষ্টির কোনো বৈরী মনোভাব নেই।
২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশ থেকে ১৭টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে পর্যায়ক্রমে পাঁচজন প্রতিযোগীকে লাল-সবুজের পতাকা বহনের জন্য নির্বাচন করেছে।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-10/news/272296

লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে যাচ্ছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ

math press conferenceলাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এবারও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশের পাঁচ খুদে গণিতবিদ। আজ শনিবার রাতে বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা আর্জেন্টিনার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে। সে দেশের মার ডেল প্লাটা শহরে ৪ থেকে ১৬ জুলাই এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ৫৩তম আসর বসছে। ৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে অলিম্পিয়াডের মূল পর্ব।
গতকাল শুক্রবার রূপসী বাংলা হোটেলে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গণিত উৎসবের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে মেধার ভিত্তিতে বাছাই করা পাঁচ খুদে গণিতবিদ এবারের অলিম্পিয়াডে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তারা হলো: চট্টগ্রাম কলেজের ধনঞ্জয় বিশ্বাস, নটর ডেম কলেজের মির্জা মো. তানজিম শরীফ, ঢাকা কলেজের সৌরভ দাশ, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র আদীব হাসান। এই পাঁচজনের সঙ্গে দলনেতা হিসেবে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কোচ মাহবুব মজুমদার ও উপদলনেতা হিসেবে যাচ্ছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসব ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের আয়োজন করছে। এ উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এবার অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। গত সাত বছরে নবীন দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। এ কর্মসূচি বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশে সহায়তা করছে। এ দেশের মেধাবীরা আগামী দিনে আরও সাফল্য নিয়ে আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার সারা দেশে ১৭টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পরে সব আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ী এক হাজার ৯৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫৬ জন অংশ নেয় দুই দিনব্যাপী জাতীয় উৎসবে। জাতীয় উৎসব থেকে বাছাই করা সেরা ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদারের সুপারিশ অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গণিত দলকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির ওয়েবসাইটে (www.matholympiad.org.bd) খোলা হয়েছে ‘গুডলাক মেসেজ বুক’।
এর আগে সাতবার গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ গণিত দল চারটি ব্রোঞ্জ পদক ও ১৩টি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক গণিতবিদ খোদাদাদ খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইদুল হাছান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখ। এ ছাড়া খুদে গণিতবিদদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-07/news/271614

৫৩তম আইএমওতে বাংলাদেশ গণিত দল

2012-06-02-16-59-38-4fca467ac4d26-untitled-20আগামী ৪ থেকে ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার মারডেল প্লাটা শহরে বসবে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সবচেয়ে বড় আসর ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)-২০১২। এ আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাবে পাঁচজন কৃতী শিক্ষার্থী। তাদের নিয়ে লিখেছেন বায়েজিদ ভূঁইয়া

গত বছর বর্ধিত গণিত ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রথম কোনো ক্যাম্পে ডাক পাই। ক্যাম্পে শুনতে পেলাম যে নবম শ্রেণী থেকে এখনো কেউ বাংলাদেশ থেকে আইএমওতে যায়নি। আর আমি তখন পড়ি অষ্টম শ্রেণীতে। মাথায় তখনই জেঁকে বসেছে আইএমও। সামনের বছর নবম শ্রেণীতে থাকব আমি এবং আমাকেই যেতে হবে। সে অনুযায়ী বছর ধরে অনুশীলন। শেষ পর্যন্ত দলে চান্স, স্বপ্ন সত্যি হলো। নিজের অনুভূতির কথাগুলো এভাবেই বলছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র আদীব হাসান। ২০১২ সালে আইএমওতে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচজনের দলে আদীব সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্য। আর এই পাঁচজন খুদে গণিতবিদ নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) মানেই তো বিরাট কিছু। সারা বিশ্ব থেকে বাছাই করা খুদে গণিতবিদদের বিশ্ব লড়াই। প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এই শিক্ষার্থীদের উৎসাহ জোগাতে আসেন বিশ্বের নামকরা গণিতবিদেরা। আইএমওতে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে সাত বছর ধরে। এবারকার যাত্রা অষ্টমবারের মতো। ১৯৫৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন শুরু হয়। ২০০৪ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত ৪৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান যোগ দেন। বাংলাদেশ সেখানেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ২০০৫ সালে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত ৪৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নেয় বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দল। আইএমওতে বাংলাদেশের শিশুকাল কাটলেও এরই মধ্যে আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। ২০০৯ সালে জার্মানির ব্রিমেনে আইএমওর সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০তম আয়োজনে সামিন রিয়াসাত ও নাজিয়া চৌধুরী প্রথমবারের মতো অর্জন করে দুটি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১০ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত ৫১তম আইএমওতে তারিক আদনান এবং ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত ৫২তম আইএমওতে ধনঞ্জয় বিশ্বাস ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে। গত ছয় বছরে চারটি ব্রোঞ্জ পদক এবং ১৩টি ‘অনারেবল ম্যানশন’ অর্জন করেছে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা।

এবারের গণিত দল
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো দশম গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে দীর্ঘ মনোনয়ন-প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আগামী ৪ থেকে ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটায় অনুষ্ঠেয় ৫৩তম আইএমওতে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যদের নামও ঘোষণা করেছে কমিটি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাবে সারা দেশ থেকে বাছাই করা পাঁচজন কৃতী শিক্ষার্থী। তারা হলো: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ধনঞ্জয় বিশ্বাস ও নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী মির্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ এবং ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৌরভ দাশ, এবারের এসএসসি পাস ঢাকার মণিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র আদীব হাসান।

ধনঞ্জয় বিশ্বাস
‘যতটুকু সময় পাচ্ছি, সবটা সময়ই অনুশীলন করছি। বলতে গেলে প্রস্তুতি অনেক ভালো। এ ছাড়া গত বছরের আইএমওর অভিজ্ঞতা তো আছেই। ভালো কিছু করতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে।’ দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ধনঞ্জয় বিশ্বাস। সে এবার চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী এবং মা স্বাস্থ্য সহকারী স্বপ্না রানী দে দুজনই স্বপ্ন দেখেন, ছেলে দেশের জন্য বড় কোনো সাফল্য নিয়ে আসবে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ধনঞ্জয় বড়। দ্বিতীয়বারের মতো এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে এই প্রতিযোগী। গত বছর ৫২তম আইএমওতে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে ধনঞ্জয়। গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রশিক্ষক কাজী হাসান জুবায়ের, তামান্না ইসলাম উর্মি, নাভেদ ও প্রাণন রহমান খান—সবাই সন্তুষ্ট তার ফলাফলে। নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য আরও বেশি সম্মান বয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ধনঞ্জয়। গণিতের অনুশীলন—সব মিলিয়ে অবসর তেমন নেই। সময় হলে গল্পের বই পড়া আর একটু বেশি সুযোগ পেলে ঘুমাতে ভালো লাগে তার। বড় হয়ে গণিত, পদার্থ নিয়ে পড়তে চায় ধনঞ্জয়।

মির্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ
‘২০০৪ সালে তৃতীয় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নিই। এরপর শুধু ২০০৫ ও ২০০৯ সাল ছাড়া প্রায় প্রতিবছরই আঞ্চলি এবং জাতীয়তে পুরস্কার পেয়েছি। ২০১০ সালে জাতীয়তে হয়েছিলাম সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন।’ কথাগুলো বলছিল মির্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ। নটর ডেম কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে। জাতীয় ও বর্ধিত ক্যাম্প মিলে প্রায় ১০টি গণিত ক্যাম্পে অংশ নেয় মুগ্ধ। বাবা মো. মির্জা ইসকান্দার ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট কলেজের গণিতের শিক্ষক। তাঁর কাছ থেকে গণিতে হাতেখড়ি। মা স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাহমিনা বেগমের সব সময়ের অনুপ্রেরণা। ছেলের এই সাফল্যে দুজনই অনেক খুশি। কিছুদিন আগে শেষ হলো এইচএসসি পরীক্ষা, কিন্তু তখনো দূরে থাকেনি গণিত থেকে। পরীক্ষার ফাঁকে যখনই সময় পেতাম অন্য বইয়ের মাঝে লুকিয়ে গণিত করেছি। ইচ্ছা ছিল, যেভাবেই হোক দলে চান্স পওয়ার বলছিল মুগ্ধ। অবসরে গান গাইতে পছন্দ করে সে। ২০১০ সালে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মুগ্ধ। প্রিয় খেলা টেবিল টেনিস। প্রথমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে ভালো কিছু করবে, তেমনটাই ইচ্ছা মুগ্ধর। তিন ভাইয়ের মধ্যে মুগ্ধ দ্বিতীয়।

সৌরভ দাশ
‘একটু টেনশন কাজ করছিল, দলে থাকতে পারব কি না এই নিয়ে। তবে জাতীয় অলিম্পিয়াড থেকে শুরু করে অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প, এপিএমও, বর্ধিত ক্যাম্প সবগুলোতেই পরীক্ষা ভালো হয়েছে। অবশেষে দল ঘোষণা করার পর দেখলাম দলে চান্স পেয়েছি। সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগছে।’ কথাগুলো বলছিল ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌরভ দাশ। সে এবার দ্বিতীয়বারের মতো যাচ্ছে আইএমওতে। বাবা গৌতম বুদ্ধ দাশ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ফুড অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ডিন এবং মা সুচেতা ভৌমিক গৃহিণী। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে সৌরভ বড়। ‘গতবার কিছুটা প্রস্তুতি কম ছিল, এবার আইএমওর অভিজ্ঞতা আর অনেক অনুশীলন করেছি। আশা আছে ভালো কিছু করব।’ দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে সৌরভ সুফিয়া-নুরুল পুরস্কার পেয়েছিল সৌরভ। বড় হয়ে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায় সৌরভ। আইএমওর প্রস্তুতির জন্য জ্যামিতি ও নাম্বার থিওরির ওপর জোর দিচ্ছে সৌরভ।

নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ
‘আইএমও দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছি শুনে অনেক খুশি হয়েছি। দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলাম।’ বলছিল নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। সে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হয়। বাবা মো. মতিউর রহমান মোল্লা বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, আর মা আরিফা পারভীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কম্পিউটার প্রোগ্রামার। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। এ ছাড়া শফিউল্লাহ সপ্তম গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন ও অষ্টম গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হয় এবং নবম গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়। বড় হয়ে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় শফিউল্লাহ। ইচ্ছা আছে গত বছরের আইএমওর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার আইএমওতে ভালো কোনো পদক অর্জন করা। সে এবার ঢাকার মণিপুর হাইস্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। অবসরে সায়েন্স ফিকশন পড়তে ভালো লাগে। ‘সব সময়ই চেষ্টা করেছি ক্যাম্পে প্রশিক্ষকদের নির্দেশমতো হোমওয়ার্ক ও পরীক্ষায় অংশ নিতে।’ দেশের জন্য ভালো ফল এনে দিতে চায় এই শফিউল্লাহ।

আদীব হাসান
‘গণিতে অনুশীলনের জন্য ক্লাসের নিয়মিত পড়াশোনাও একটু কমিয়ে দিয়েছি। আব্বু-আম্মু তা জেনেও কিছু বলেননি, তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তা না হলে হয়তো দলে চান্স পেতাম না।’ বলছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে নবম শ্রেণীর ছাত্র আদীব হাসান। সে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে আঞ্চলিক পর্বে চ্যাম্পিয়ন এবং জাতীয় পর্বে এসে এম সেকান্দার আলী পুরস্কার পেয়েছে। ‘ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রতি অনেক টান তার। দলে চান্স পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি।’ বলছিলেন আদীবের মা নেত্রকোনার প্রতাপপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হুসনে আরা এবং বাবা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা খুরশেদ উদ্দিন খান। বড় হয়ে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায় আদিব। কৃতজ্ঞতা জানাতে চায় গৃহশিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ আহসানউল্লাহকে, যাঁর হাত ধরে ২০০৯ সালে প্রথম প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিয়েছিল। এ ছাড়া ধন্যবাদ জানাতে চায় ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের প্রশিক্ষক সৌমিত্র চক্রবর্তীকে, যাঁর কাছ থেকে গণিতের কঠিন সমস্যা সমাধান করা আয়ত্ত করেছে। এবার জেএসসি পরীক্ষা ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রথম হয়েছে আদীব। প্রস্তুতি হিসেবে আইএমওর বিগত সালের প্রশ্ন, বিভিন্ন দেশের জাতীয় অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন অনুশীলন করছে সে। দুই বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে আদীব দ্বিতীয়।

যেভাবে হলো নির্বাচন
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া আঞ্চলিক গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দলের সদস্যদের অন্বেষণ। এরপর ১৭টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশ নেয় ২২ হাজার শিক্ষার্থী। এসব উৎসবে বিজয়ী এক হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫৬ জন গত ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশ নেয়। সেখান থেকে জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির সেরা ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৩ থেকে ১৯ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল ১৯ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বর্ধিত গণিত ক্যাম্প। পরবর্তীতে অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প ও বর্ধিত গণিত ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদারের সুপারিশ অনুসারে ৫২তম আইএমওর জন্য বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দলের পাঁচজন সদস্য নির্বাচন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-03/news/262715

আইএমও ২০১২-এর বাংলাদেশ দলের নাম ঘোষণা

আগামী ৪-১৬ জুলাই আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠেয় ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) বাংলাদেশ দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবার ৫ জন প্রতিযোগী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এর আগে আজ বিকেলে ঢাকায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দল ঘোষনার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম, সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, কোচ ড. মাহবুব মজুমদার, সমন্বয়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। এবারের দলে নির্বাচিত সদস্যরা হলেন ধনঞ্জয় বিশ্বাস (চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ), মির্জা মো. তানজিম শরীফ মুগ্ধ (নটরডেম কলেজ), সৌরভ দাস (ঢাকা কলেজ), নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (মনিপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) এবং আবিদ হাসান (ময়মনসিংহ জেলা স্কুল)।
উল্লেখ্য, আইএমও দলের বাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ দিনাজপুর ও কুস্টিয়া আঞ্চলিক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এ প্রক্রিয়া শেষ হয় ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১২ তে অনুষ্ঠিত জাতীয় গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে নির্বাচিত ৪০ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয় ৮ম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। এছাড়াও এশিয়া-প্যাসেফিক গণিত অলিম্পিয়াডের (এপিএমও) ফলাফল, অনলাইন ক্যাম্প এবং সর্বশেষ বর্ধিত ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ দল নির্বাচিত করা হয়।
বাংলাদেশ দলের সবার জন্য শুভ কামনা।

Published on : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-03/news/262715

২য় লীলাবতী গণিত ক্যাম্প ২০১২

আগামী  ১৭ থেকে ২৩ জুন ২০১২  ঢাকার আদাবরে পদক্ষেপ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ২য় লীলাবতী গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে।  ক্যাম্পে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাছাইকৃত প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিবত পারবে। বাছাই প্রক্রিয়া চলছে, চুড়ান্ত দল নিবার্চিত হলে আমরা ব্লগে ঘোষনা করব। ক্যাম্পটি পরিচালনা করবেন ২০০৯ সালে ৫০তম আইএমওতে-ব্রোঞ্জ বিজয়ী নাজিয়া চৌধুরী।

আজ শেষ হলো বধির্ত গণিত ক্যাম্প

আজ  শেষ হলো বর্ধিত গণিত ক্যাম্প ২০১২। দুপুরের খাবের পর এক এক করে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে ক্যাম্পারা । এর আগে ০১ মে বিকালে  শুরু হলেও   সন্ধ্যায় মুনির হাসান ভাইয়ের উপস্থিতিতে পরিচিতি পর্ব ও প্রাথমিক আলোচনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক শুরু ক্যাম্পের। আলোচনা পর্বে অনেক বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্পের পর বর্ধিত ক্যাম্পে আসা পর্যন্ত বাসায় কে কি প্রাকটিস করেছে, নিজ এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেউ কিছু করেছ কি না ম্যাথ ক্লাব টাইপের, ফোরামে কে কি আলোচনা করেছে, বাসায় প্রাকটিসের সময় কোন  প্রবলেমে পড়েছে কি না ইত্যাদি । আলোচনার এক সময় মুনির ভাই কার জিবনের লক্ষ কি জানতে চায় ? এই আলোচনায় কেউ বুয়েটে ভর্তি, কেউ ফিজিক্স, কেউ কেমেস্ট্রি, কেউ ডাক্তার , কেউ গণিত নিয়ে পড়তে চায় ইত্যাদি বলেছে । এর মধ্যে মজার বিষয ছিল সৌরভ বলছিল সে হবে রাজনীতিবিদ, দারুন মজা পায় সবাই । স্বল্প সময়ের এই ক্যাম্পে প্রায় পাচটি পরীক্ষা, ক্লাস ও আলোচনা হয় । হরতালের জন্য প্রথম দিন থেকে জোবায়ের ক্যাম্পে যোগ না দিলেও ২ তারিখে কুষ্টিয়া থেকে এসে যোগ দিয়েছে সে। উর্মিও দিনাজপুর থেকে গত পরশু যোগ দিয়েছে। এদিকে নাভেদতো ছিলই।  এছাড়াও একাডেমিক দলের বিভিন্ন সময়ে  অভিক রায়, তুষার চক্রবর্তী, সকাল রায়, সুদিপ্ত, তমাল বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছে ক্যাম্পে। এদিকে ব্যবস্থাপনা দলের রকি ছিল প্রথম দুই দিন ।আর সুমন আর রতন ছিল পুরো সময়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছে- বকুল, ফেরদৌস এবং সবসময়ের প্রধান সহযোগী আমাদের আইযুব ভাই। এইচ এস সি পরীক্ষার জন্য প্রথম থেকে উপস্থিত না হতে পারলেও একদিন আগে এসে যোগ দিয়েছে- ধনঞ্জয়, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ। এবং বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়েছেণ , ফোনে, মেইলে যোগাযাগ রেখেছেন বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার স্যার।