আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ৬ পদক বাংলাদেশের

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ৬ পদক বাংলাদেশের

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) দলীয় সর্বোচ্চ নম্বর ও সব সদস্যের পদকপ্রাপ্তির মাধ্যমে শেষ হলো ৬১তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের যাত্রা। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত ৬১তম আইএমওতে বাংলাদেশ ১টি রুপার পদক ও ৫টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। মোট ১১৮ নম্বর পেয়ে ১০৭টি দেশের মধ্যে ৩৮তম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। আজ রোববার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটে পুরস্কার বিজয়ীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

৪২ নম্বরের মধ্যে ২৯ নম্বর পেয়ে দেশের জন্য একমাত্র রুপার পদকটি পেয়েছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ ইত্তিহাদ। মাত্র ২ নম্বরের জন্য সোনার পদক পায়নি সে।

বাংলাদেশ দলের অপর পাঁচ সদস্য এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজের শিক্ষার্থী এম আহসান-আল-মাহীর (প্রাপ্ত নম্বর ২০), ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের মো. মারুফ হাসান রুবাব (১৯), কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের আদনান সাদিক (১৮), নটর ডেম কলেজের রাইয়্যান জামিল (১৬) ও ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী সৌমিত্র দাস (১৬) পেয়েছে ব্রোঞ্জপদক। দলের সব সদস্যের পদক অর্জন এবারই প্রথম।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। অন্যদের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৬১তম, পাকিস্তান ৮২তম, মিয়ানমার ৯১তম ও নেপাল ১০২তম স্থান অধিকার করেছে। ভারত এবার অংশগ্রহণ করেনি।

যথারীতি ২১৫ নম্বর পেয়ে চীন প্রথম, ১৮৫ নম্বর পেয়ে রাশিয়া ফেডারেশন দ্বিতীয় ও ১৮৩ নম্বর পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, করোনার কারণে শুরুতে এ বছরের আইএমও নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। নির্ধারিত জুলাই মাসে এ আয়োজন স্থগিত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিযোগীরা নিজ নিজ দেশ থেকে অংশ নেবে এই নিয়মে এবং আয়োজন রাশিয়া থেকে অনলাইনে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই হিসাবে ২০ সেপ্টেম্বর অনলাইন উদ্বোধনী আয়োজনের মাধ্যমে আইএমও শুরু হয়। ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

bangladesh imo team 1200

আইএমওতে এবার ১৬তম বারের মতো অংশ নিল বাংলাদেশ গণিত দল। এ সময় বাংলাদেশের অর্জন ১টি সোনা, ৭টি রুপা, ২৮টি ব্রোঞ্জ ও ৩১টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি।
প্রথম আলোয় সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় ২০০১ সালে ‘নিউরনে অনুরণন’ নামে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০০৩ সালে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজকের দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর সারা দেশে গণিত উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। আর নির্বাচিতরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে।

বাংলাদেশ গণিত দলের সাফল্যে দলের কোচ মাহবুব মজুমদার বলেন, ‘দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্তিতে আমি খুশি। মাঝখানে অনিশ্চয়তা না থাকলে হয়তো আমাদের শিক্ষার্থীরা আরও ভালো করত। সবার নিয়মিত চর্চা ও লেগে থাকা এই সাফল্য এনে দিয়েছে।’

গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘খবরটা শুনে কত যে ভালো লাগছে, কত যে খুশি হয়েছি! তবে অবাক হইনি। আমাদের ছেলে–মেয়েদের এমন ভালো করারই কথা। তাদের একটু উৎসাহ দিলে, কত ভালো করে। ওদের সুযোগ দিলে বিশ্ব জয় করে ফেলে।’

গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এই অর্জন সত্যিই অসাধারণ। দলীয় ১১৮ মানে গড়ে প্রায় ২০ করে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার স্বাক্ষর। আমি প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় থাকা কর্মীদের ধন্যবাদ দিই, কারণ আইএমওর সব নির্দেশনা অনুসরণ করে চমৎকারভাবে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক উন্নতিতে মনে হচ্ছে আগামী কয়েক বছর পর স্বর্ণপদকও আমাদের নিয়মিত হয়ে যাবে।’

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ অর্জন আমাদের সবার জন্য অনেক আনন্দের ও খুশির খবর। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে বিশ্বমানের মেধাবী ও দক্ষ—এই সাফল্য সেটা প্রমাণ করে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে দারুণভাবে গর্বিত। বরাবরের মতো গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে আমরা আছি এবং থাকব।’

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আজকের এই অসাধারণ সাফল্য দেশের গর্ব। আজ জামিলুর রেজা চৌধুরীকে স্মরণ করছি। এ সাফল্য পুরো গণিত টিমের। বিশেষভাবে টিম কোচ মাহবুব মজুমদারের অবদান আমাদের উদীয়মান গণিত প্রজন্মের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’

রৌপ্যপদক বিজয়ী আহমেদ ইত্তিহাদ হাসিব বলে, ‘পরীক্ষার আগে আশা করিনি যে সিলভার মেডেল পাব। আমি দারুণভাবে আনন্দিত ও খুশি। এই প্রাপ্তি শুধু আমার না, আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে সংযুক্ত সবার।’

এম আহসান-আল-মাহীর বলে, ‘এবারের আইএমও নিয়ে আমার একধরনের মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারত। তবে আমাদের দলের পারফরম্যান্স এবার অনেক ভালো, সেটা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চ বোধ হচ্ছে।’

মো. মারুফ হাসান রুবাব বলে, ‘আইএমওতে প্রথমবারের মতো পদক পেয়ে খুবই আনন্দিত আমি। আর এবার পুরো দলের পারফরম্যান্স অসাধারণ ছিল। আমার ফলাফল নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’

আদনান সাদিক বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় আমার প্রত্যাশা থেকেও বেশি নম্বর পেয়েছি। আমি দারুণ খুশি।’

রাইয়্যান জামিল বলে, ‘আমার প্রথম ও শেষ আইএমও হওয়াতে ভালো কিছুর আশায় ছিলাম। নিজের ব্যক্তিগত স্কোর আরও ভালো করার সুযোগ ছিল। আমাদের দল বেশ ভালো করতে পেরেছে, তাই খুশি লাগছে।’

সৌমিত্র দাস জানায়, পরীক্ষার দিক থেকে এবারের আইএমও ছিল আগের মতোই। ব্যক্তিগতভাবে আরও ভালো করতে পারলে খুশি হতো বলে জানিয়েছে সে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী অনলাইন গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজনের মাধ্যমে ৬১তম আইএমওর জন্য ৬ সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়। দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

 

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, https://www.prothomalo.com/bangladesh/আন্তর্জাতিক-গণিত-অলিম্পিয়াডে-৬-পদক-বাংলাদেশের