পরীক্ষা শেষ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন শুরু

পরীক্ষা নিয়ে খুদে গণিতবিদদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা। উপদলনেতাদের চোখে-মুখেও একই ছাপ। মিলনায়তনে উপস্থিত প্রায় সবার মধ্যেই ছিল এমন উত্তেজনা। সঙ্গে বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা। গতকাল বুধবার এমন পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) খুদে গণিতবিদদের মেধার লড়াই। এর পরই শুরু হয়েছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন। আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটা শহরে অলিম্পিয়াডের ৫৩তম এই আসরে অংশ নিচ্ছে ১০০টি দেশের পাঁচ শতাধিক খুদে গণিতবিদ। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ।
গত দুই দিনে প্রতিযোগীদের ছয়টি গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়। এবারের সমস্যা বাছাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বীজগণিতের অসমতার ফিরে আসা। কয়েক বছর ধরে আইএমওতে অসমতার দেখা পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা শেষে রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের অনুলিপি রেখে মূল কপি নিজ নিজ দেশের দলনেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। আইএমওর নিয়মানুযায়ী, প্রতিটি উত্তরপত্র দলনেতা ও উপদলনেতা এবং স্বাগতিক দেশের একটি দল মূল্যায়ন করবে। পরে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর চূড়ান্ত করা হবে।
আমার দেখা অলিম্পিয়াডগুলোর মধ্যে এবারই প্রথম প্রতিযোগীদের থাকার আর পরীক্ষার জায়গা একই স্থানে করা হয়েছে। মার ডেল প্লাটা শহরের হোটেল প্রভিন্সিয়ালের দ্বিতীয় তলায় একটি বড় এবং একটি ছোট মিলনায়তনে ৫৫৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
এই নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসবের মাধ্যমে আইএমওর জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে।
আর আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বারের মতো আইএমওর আয়োজক দেশ। এর আগে ১৯৯৭ সালে ৩৮তম আইএমও হয়েছে এই মার ডেল প্লাটা শহরে। আর্জেন্টিনার সপ্তম এ বৃহত্তম শহরটি রাজধানী বুয়েনস এইরেস থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে, আটলান্টিকের পারে একটি পর্যটন নগর। নগরের সাড়ে ছয় লাখ অধিবাসীর সবাই কোনো না কোনোভাবে পর্যটন, মাছের বা বন্দরের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এটি একাধারে পোতাশ্রয়ও। আর্জেন্টিনার সবচেয়ে দীর্ঘ এ সমুদ্রতটজুড়ে হাজার খানেক হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স রয়েছে। আমাদের গাইড মাউরো জানালেন, পর্যটন মৌসুমে তার পরও সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না!
তবে, মার ডেল প্লাটাকে দেখে মূল আর্জেন্টিনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া মুশকিল। কারণ, আর্জেন্টিনা মূলত গ্রামপ্রধান দেশ, শহরপ্রধান নয়। সোয়া চার কোটি লোক থাকে ১০ লাখ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে! নামের সঙ্গে রুপা থাকলেও (ল্যাটিন আর্জেন্টান মানে রুপা) এখানে রুপার কোনো পাহাড় নেই। ধারণা করা হয় রুপার পাহাড়ের লোভে স্প্যানিশরা এখানে ঘাঁটি গেড়েছিল।
শীতপ্রধান দেশ বলে আমরা এখনো ঝাল কোনো খাবারের কবলে পড়িনি। তিন বেলা খাবারে মিষ্টির আধিক্য বেশি।
মঙ্গলবার প্রথম দিনের পরীক্ষা চলাকালে উপনেতাদের মহাসমুদ্রে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট ইঞ্জিন নৌকা, তবে আমাদের দেশের মতো নয়। অনেক যন্ত্রপাতি আছে দেখলাম! ঘণ্টা খানেক চলার পর বোঝা গেল, প্রকৃতি বিরূপ। সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল, কিন্তু সমুদ্রে সেটা ঝড়ের রূপ নিল। ফলে আমরা বেশি দূর যেতে পারলাম না। ঢেউয়ের সঙ্গে নৌকার দুলুনিটা যথেষ্ট ভয়ের ছিল। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদের বেড়ানোর ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকা নিয়ে গেলেন সিলের খাঁড়িতে। মোটা, ভুটকু, শুকনা আর লম্বা একদল সিল দেখা গেল সমুদ্র পাড়ে ঘুরে বেড়াতে। বেশি কাছে না গেলেও সিলের বোঁটকা গন্ধ টের পেয়েছি সম্যকভাবে।
পরদিন সকালে সমুদ্রের কথা বলার সময় ধনঞ্জয় জানতে চাইল, সাঁতার জানি কি না।
শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগরে সাঁতার জানলেই বা কী!

Published on:http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-12/news/272989