গাজীউল হক, কুমিল্লা | তারিখ: ২৯-১২-২০১২
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলে খুদে গণিতবিদেরা কী করবে? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে দাঁড়ায় দুই ডজন শিক্ষার্থী। ওদের জবাবটা এমন, কোনো অবস্থাতেই পাঠ্যবই বারবার পরিবর্তন করব না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তক ছড়িয়ে দেব। দুর্নীতি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
খুদে গণিতবিদদের এমন ভাবনাকে তুমুল করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। চিত্রটি কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রাঙ্গণের।
‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান নিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো কুমিল্লা অঞ্চলের গণিত উৎসব-২০১৩ গতকাল কুমিল্লা জিলা স্কুলে হয়। এর মধ্য দিয়ে এবারের গণিত উৎসবের অভিযাত্রা শুরু হলো। এ বছর দেশের ১৭ জেলায় আঞ্চলিক গণিত উৎসব হবে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। উৎসবটি হচ্ছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায়।
কনকনে শীত ও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই গতকাল কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী গণিত উৎসবে অংশ নেয়। সকাল সোয়া নয়টার দিকে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান বলেন, গণিতকে ভয় না পেয়ে ভালোবেসে জয় করতে হবে। গণিতের মধ্যেই মুক্তির জয়গান নিহিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সোয়া এক ঘণ্টার গণিত অলিম্পিয়াড হয়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে খুদে গণিতবিদেরা দুই হাত উঁচিয়ে মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে ‘না’ বলে। শিক্ষার্থীরা দেশকে ভালোবাসার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
বেলা দুইটার দিকে সমাপনী পর্বে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কুণ্ডু গোপীদাস বলেন, গণিত ছাড়া পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দেওয়া অসম্ভব। ওই অসম্ভবকে দূর করতে গণিতকে জয় করতে হবে।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে প্রথম আলো কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দিনে গণিতপ্রেমীরাই বদলে দেবে বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান আবু জাফর খান, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক হাম্মাদ আলী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক আবদুল্লাহ আল মাহবুব ও ইনামুল করিম, কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর তামিম শাহরিয়ার।
গণিত অলিম্পিয়াডে প্রাথমিক শ্রেণীতে ১২ জন, জুনিয়রে ১৬ জন, মাধ্যমিকে আটজন ও উচ্চমাধ্যমিকে ১৪ জন বিজয়ী হয়। তাদের ক্রেস্ট, সনদ ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। বিজয়ীরা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় উৎসবে যোগ দেবে। এরপর চূড়ান্ত বিজয়ীরা ৫৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে কলম্বিয়ায় যাবে।
প্রাথমিকে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে চ্যাম্পিয়ন নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসনিম আহমেদ, জুনিয়রে একই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মরিয়ম বিনতে হানিফ, মাধ্যমিকে কুমিল্লা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসবিউল এনাম ও উচ্চমাধ্যমিকে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাদিমুল আবরার চ্যাম্পিয়ন হয়। আবরার সব কটি প্রশ্নের সমাধান করে পূর্ণ নম্বর পেয়েছে।
পুরো উৎসবে সহযোগিতা করেন কুমিল্লা বন্ধুসভার সদস্য ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আজ ফেনীতে উৎসব: নিজস্ব প্রতিবেদক, ফেনী জানান, ফেনী অঞ্চলের গণিত উৎসব আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শুরু হবে। এতে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।