লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে যাচ্ছে পাঁচ খুদে গণিতবিদ

math press conferenceলাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এবারও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশের পাঁচ খুদে গণিতবিদ। আজ শনিবার রাতে বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যরা আর্জেন্টিনার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে। সে দেশের মার ডেল প্লাটা শহরে ৪ থেকে ১৬ জুলাই এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ৫৩তম আসর বসছে। ৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে অলিম্পিয়াডের মূল পর্ব।
গতকাল শুক্রবার রূপসী বাংলা হোটেলে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গণিত উৎসবের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে মেধার ভিত্তিতে বাছাই করা পাঁচ খুদে গণিতবিদ এবারের অলিম্পিয়াডে যোগদানের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তারা হলো: চট্টগ্রাম কলেজের ধনঞ্জয় বিশ্বাস, নটর ডেম কলেজের মির্জা মো. তানজিম শরীফ, ঢাকা কলেজের সৌরভ দাশ, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র আদীব হাসান। এই পাঁচজনের সঙ্গে দলনেতা হিসেবে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কোচ মাহবুব মজুমদার ও উপদলনেতা হিসেবে যাচ্ছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি সারা দেশে গণিত উৎসব ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের আয়োজন করছে। এ উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এবার অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। গত সাত বছরে নবীন দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। এ কর্মসূচি বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশে সহায়তা করছে। এ দেশের মেধাবীরা আগামী দিনে আরও সাফল্য নিয়ে আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার সারা দেশে ১৭টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পরে সব আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ী এক হাজার ৯৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫৬ জন অংশ নেয় দুই দিনব্যাপী জাতীয় উৎসবে। জাতীয় উৎসব থেকে বাছাই করা সেরা ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদারের সুপারিশ অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গণিত দলকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির ওয়েবসাইটে (www.matholympiad.org.bd) খোলা হয়েছে ‘গুডলাক মেসেজ বুক’।
এর আগে সাতবার গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ গণিত দল চারটি ব্রোঞ্জ পদক ও ১৩টি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সাবেক অধ্যাপক গণিতবিদ খোদাদাদ খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইদুল হাছান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান প্রমুখ। এ ছাড়া খুদে গণিতবিদদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-07/news/271614

৫৩তম আইএমওতে বাংলাদেশ গণিত দল

2012-06-02-16-59-38-4fca467ac4d26-untitled-20আগামী ৪ থেকে ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার মারডেল প্লাটা শহরে বসবে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের সবচেয়ে বড় আসর ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও)-২০১২। এ আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাবে পাঁচজন কৃতী শিক্ষার্থী। তাদের নিয়ে লিখেছেন বায়েজিদ ভূঁইয়া

গত বছর বর্ধিত গণিত ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রথম কোনো ক্যাম্পে ডাক পাই। ক্যাম্পে শুনতে পেলাম যে নবম শ্রেণী থেকে এখনো কেউ বাংলাদেশ থেকে আইএমওতে যায়নি। আর আমি তখন পড়ি অষ্টম শ্রেণীতে। মাথায় তখনই জেঁকে বসেছে আইএমও। সামনের বছর নবম শ্রেণীতে থাকব আমি এবং আমাকেই যেতে হবে। সে অনুযায়ী বছর ধরে অনুশীলন। শেষ পর্যন্ত দলে চান্স, স্বপ্ন সত্যি হলো। নিজের অনুভূতির কথাগুলো এভাবেই বলছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র আদীব হাসান। ২০১২ সালে আইএমওতে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে পাঁচজনের দলে আদীব সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্য। আর এই পাঁচজন খুদে গণিতবিদ নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) মানেই তো বিরাট কিছু। সারা বিশ্ব থেকে বাছাই করা খুদে গণিতবিদদের বিশ্ব লড়াই। প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এই শিক্ষার্থীদের উৎসাহ জোগাতে আসেন বিশ্বের নামকরা গণিতবিদেরা। আইএমওতে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে সাত বছর ধরে। এবারকার যাত্রা অষ্টমবারের মতো। ১৯৫৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন শুরু হয়। ২০০৪ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত ৪৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান যোগ দেন। বাংলাদেশ সেখানেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। ২০০৫ সালে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত ৪৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নেয় বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দল। আইএমওতে বাংলাদেশের শিশুকাল কাটলেও এরই মধ্যে আমাদের অর্জন খুব একটা খারাপ নয়। ২০০৯ সালে জার্মানির ব্রিমেনে আইএমওর সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০তম আয়োজনে সামিন রিয়াসাত ও নাজিয়া চৌধুরী প্রথমবারের মতো অর্জন করে দুটি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১০ সালে কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত ৫১তম আইএমওতে তারিক আদনান এবং ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত ৫২তম আইএমওতে ধনঞ্জয় বিশ্বাস ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে। গত ছয় বছরে চারটি ব্রোঞ্জ পদক এবং ১৩টি ‘অনারেবল ম্যানশন’ অর্জন করেছে বাংলাদেশের খুদে গণিতবিদেরা।

এবারের গণিত দল
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো দশম গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে দীর্ঘ মনোনয়ন-প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আগামী ৪ থেকে ১৬ জুলাই আর্জেন্টিনার মার ডেল প্লাটায় অনুষ্ঠেয় ৫৩তম আইএমওতে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্যদের নামও ঘোষণা করেছে কমিটি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাবে সারা দেশ থেকে বাছাই করা পাঁচজন কৃতী শিক্ষার্থী। তারা হলো: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ধনঞ্জয় বিশ্বাস ও নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী মির্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ এবং ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৌরভ দাশ, এবারের এসএসসি পাস ঢাকার মণিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র আদীব হাসান।

ধনঞ্জয় বিশ্বাস
‘যতটুকু সময় পাচ্ছি, সবটা সময়ই অনুশীলন করছি। বলতে গেলে প্রস্তুতি অনেক ভালো। এ ছাড়া গত বছরের আইএমওর অভিজ্ঞতা তো আছেই। ভালো কিছু করতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে।’ দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ধনঞ্জয় বিশ্বাস। সে এবার চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। বাবা মিলন কান্তি বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী এবং মা স্বাস্থ্য সহকারী স্বপ্না রানী দে দুজনই স্বপ্ন দেখেন, ছেলে দেশের জন্য বড় কোনো সাফল্য নিয়ে আসবে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ধনঞ্জয় বড়। দ্বিতীয়বারের মতো এবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে এই প্রতিযোগী। গত বছর ৫২তম আইএমওতে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে ধনঞ্জয়। গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রশিক্ষক কাজী হাসান জুবায়ের, তামান্না ইসলাম উর্মি, নাভেদ ও প্রাণন রহমান খান—সবাই সন্তুষ্ট তার ফলাফলে। নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য আরও বেশি সম্মান বয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ধনঞ্জয়। গণিতের অনুশীলন—সব মিলিয়ে অবসর তেমন নেই। সময় হলে গল্পের বই পড়া আর একটু বেশি সুযোগ পেলে ঘুমাতে ভালো লাগে তার। বড় হয়ে গণিত, পদার্থ নিয়ে পড়তে চায় ধনঞ্জয়।

মির্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ
‘২০০৪ সালে তৃতীয় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম অংশ নিই। এরপর শুধু ২০০৫ ও ২০০৯ সাল ছাড়া প্রায় প্রতিবছরই আঞ্চলি এবং জাতীয়তে পুরস্কার পেয়েছি। ২০১০ সালে জাতীয়তে হয়েছিলাম সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন।’ কথাগুলো বলছিল মির্জা মো. তানজীম শরীফ মুগ্ধ। নটর ডেম কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে। জাতীয় ও বর্ধিত ক্যাম্প মিলে প্রায় ১০টি গণিত ক্যাম্পে অংশ নেয় মুগ্ধ। বাবা মো. মির্জা ইসকান্দার ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট কলেজের গণিতের শিক্ষক। তাঁর কাছ থেকে গণিতে হাতেখড়ি। মা স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাহমিনা বেগমের সব সময়ের অনুপ্রেরণা। ছেলের এই সাফল্যে দুজনই অনেক খুশি। কিছুদিন আগে শেষ হলো এইচএসসি পরীক্ষা, কিন্তু তখনো দূরে থাকেনি গণিত থেকে। পরীক্ষার ফাঁকে যখনই সময় পেতাম অন্য বইয়ের মাঝে লুকিয়ে গণিত করেছি। ইচ্ছা ছিল, যেভাবেই হোক দলে চান্স পওয়ার বলছিল মুগ্ধ। অবসরে গান গাইতে পছন্দ করে সে। ২০১০ সালে চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মুগ্ধ। প্রিয় খেলা টেবিল টেনিস। প্রথমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে ভালো কিছু করবে, তেমনটাই ইচ্ছা মুগ্ধর। তিন ভাইয়ের মধ্যে মুগ্ধ দ্বিতীয়।

সৌরভ দাশ
‘একটু টেনশন কাজ করছিল, দলে থাকতে পারব কি না এই নিয়ে। তবে জাতীয় অলিম্পিয়াড থেকে শুরু করে অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প, এপিএমও, বর্ধিত ক্যাম্প সবগুলোতেই পরীক্ষা ভালো হয়েছে। অবশেষে দল ঘোষণা করার পর দেখলাম দলে চান্স পেয়েছি। সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগছে।’ কথাগুলো বলছিল ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সৌরভ দাশ। সে এবার দ্বিতীয়বারের মতো যাচ্ছে আইএমওতে। বাবা গৌতম বুদ্ধ দাশ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ফুড অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ডিন এবং মা সুচেতা ভৌমিক গৃহিণী। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে সৌরভ বড়। ‘গতবার কিছুটা প্রস্তুতি কম ছিল, এবার আইএমওর অভিজ্ঞতা আর অনেক অনুশীলন করেছি। আশা আছে ভালো কিছু করব।’ দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে সৌরভ সুফিয়া-নুরুল পুরস্কার পেয়েছিল সৌরভ। বড় হয়ে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায় সৌরভ। আইএমওর প্রস্তুতির জন্য জ্যামিতি ও নাম্বার থিওরির ওপর জোর দিচ্ছে সৌরভ।

নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ
‘আইএমও দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছি শুনে অনেক খুশি হয়েছি। দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলাম।’ বলছিল নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। সে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হয়। বাবা মো. মতিউর রহমান মোল্লা বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, আর মা আরিফা পারভীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কম্পিউটার প্রোগ্রামার। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। এ ছাড়া শফিউল্লাহ সপ্তম গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন ও অষ্টম গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন হয় এবং নবম গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়। বড় হয়ে জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় শফিউল্লাহ। ইচ্ছা আছে গত বছরের আইএমওর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার আইএমওতে ভালো কোনো পদক অর্জন করা। সে এবার ঢাকার মণিপুর হাইস্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। অবসরে সায়েন্স ফিকশন পড়তে ভালো লাগে। ‘সব সময়ই চেষ্টা করেছি ক্যাম্পে প্রশিক্ষকদের নির্দেশমতো হোমওয়ার্ক ও পরীক্ষায় অংশ নিতে।’ দেশের জন্য ভালো ফল এনে দিতে চায় এই শফিউল্লাহ।

আদীব হাসান
‘গণিতে অনুশীলনের জন্য ক্লাসের নিয়মিত পড়াশোনাও একটু কমিয়ে দিয়েছি। আব্বু-আম্মু তা জেনেও কিছু বলেননি, তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তা না হলে হয়তো দলে চান্স পেতাম না।’ বলছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে নবম শ্রেণীর ছাত্র আদীব হাসান। সে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে আঞ্চলিক পর্বে চ্যাম্পিয়ন এবং জাতীয় পর্বে এসে এম সেকান্দার আলী পুরস্কার পেয়েছে। ‘ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রতি অনেক টান তার। দলে চান্স পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি।’ বলছিলেন আদীবের মা নেত্রকোনার প্রতাপপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হুসনে আরা এবং বাবা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা খুরশেদ উদ্দিন খান। বড় হয়ে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায় আদিব। কৃতজ্ঞতা জানাতে চায় গৃহশিক্ষক আরিফ মোহাম্মদ আহসানউল্লাহকে, যাঁর হাত ধরে ২০০৯ সালে প্রথম প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে আঞ্চলিক পর্বে অংশ নিয়েছিল। এ ছাড়া ধন্যবাদ জানাতে চায় ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের প্রশিক্ষক সৌমিত্র চক্রবর্তীকে, যাঁর কাছ থেকে গণিতের কঠিন সমস্যা সমাধান করা আয়ত্ত করেছে। এবার জেএসসি পরীক্ষা ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রথম হয়েছে আদীব। প্রস্তুতি হিসেবে আইএমওর বিগত সালের প্রশ্ন, বিভিন্ন দেশের জাতীয় অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন অনুশীলন করছে সে। দুই বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে আদীব দ্বিতীয়।

যেভাবে হলো নির্বাচন
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া আঞ্চলিক গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অষ্টমবারের মতো আইএমওতে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দলের সদস্যদের অন্বেষণ। এরপর ১৭টি আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশ নেয় ২২ হাজার শিক্ষার্থী। এসব উৎসবে বিজয়ী এক হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫৬ জন গত ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশ নেয়। সেখান থেকে জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির সেরা ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৩ থেকে ১৯ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল ১৯ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বর্ধিত গণিত ক্যাম্প। পরবর্তীতে অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প ও বর্ধিত গণিত ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদারের সুপারিশ অনুসারে ৫২তম আইএমওর জন্য বাংলাদেশ জাতীয় গণিত দলের পাঁচজন সদস্য নির্বাচন করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

Published on: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-03/news/262715

আইএমও ২০১২-এর বাংলাদেশ দলের নাম ঘোষণা

আগামী ৪-১৬ জুলাই আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠেয় ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) বাংলাদেশ দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবার ৫ জন প্রতিযোগী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এর আগে আজ বিকেলে ঢাকায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দল ঘোষনার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম, সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, কোচ ড. মাহবুব মজুমদার, সমন্বয়ক বায়েজিদ ভূঁইয়া জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। এবারের দলে নির্বাচিত সদস্যরা হলেন ধনঞ্জয় বিশ্বাস (চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ), মির্জা মো. তানজিম শরীফ মুগ্ধ (নটরডেম কলেজ), সৌরভ দাস (ঢাকা কলেজ), নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ (মনিপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) এবং আবিদ হাসান (ময়মনসিংহ জেলা স্কুল)।
উল্লেখ্য, আইএমও দলের বাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ দিনাজপুর ও কুস্টিয়া আঞ্চলিক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এ প্রক্রিয়া শেষ হয় ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১২ তে অনুষ্ঠিত জাতীয় গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে নির্বাচিত ৪০ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয় ৮ম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। এছাড়াও এশিয়া-প্যাসেফিক গণিত অলিম্পিয়াডের (এপিএমও) ফলাফল, অনলাইন ক্যাম্প এবং সর্বশেষ বর্ধিত ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ দল নির্বাচিত করা হয়।
বাংলাদেশ দলের সবার জন্য শুভ কামনা।

Published on : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-03/news/262715

২য় লীলাবতী গণিত ক্যাম্প ২০১২

আগামী  ১৭ থেকে ২৩ জুন ২০১২  ঢাকার আদাবরে পদক্ষেপ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ২য় লীলাবতী গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে।  ক্যাম্পে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাছাইকৃত প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিবত পারবে। বাছাই প্রক্রিয়া চলছে, চুড়ান্ত দল নিবার্চিত হলে আমরা ব্লগে ঘোষনা করব। ক্যাম্পটি পরিচালনা করবেন ২০০৯ সালে ৫০তম আইএমওতে-ব্রোঞ্জ বিজয়ী নাজিয়া চৌধুরী।

আজ শেষ হলো বধির্ত গণিত ক্যাম্প

আজ  শেষ হলো বর্ধিত গণিত ক্যাম্প ২০১২। দুপুরের খাবের পর এক এক করে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে ক্যাম্পারা । এর আগে ০১ মে বিকালে  শুরু হলেও   সন্ধ্যায় মুনির হাসান ভাইয়ের উপস্থিতিতে পরিচিতি পর্ব ও প্রাথমিক আলোচনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক শুরু ক্যাম্পের। আলোচনা পর্বে অনেক বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্পের পর বর্ধিত ক্যাম্পে আসা পর্যন্ত বাসায় কে কি প্রাকটিস করেছে, নিজ এলাকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেউ কিছু করেছ কি না ম্যাথ ক্লাব টাইপের, ফোরামে কে কি আলোচনা করেছে, বাসায় প্রাকটিসের সময় কোন  প্রবলেমে পড়েছে কি না ইত্যাদি । আলোচনার এক সময় মুনির ভাই কার জিবনের লক্ষ কি জানতে চায় ? এই আলোচনায় কেউ বুয়েটে ভর্তি, কেউ ফিজিক্স, কেউ কেমেস্ট্রি, কেউ ডাক্তার , কেউ গণিত নিয়ে পড়তে চায় ইত্যাদি বলেছে । এর মধ্যে মজার বিষয ছিল সৌরভ বলছিল সে হবে রাজনীতিবিদ, দারুন মজা পায় সবাই । স্বল্প সময়ের এই ক্যাম্পে প্রায় পাচটি পরীক্ষা, ক্লাস ও আলোচনা হয় । হরতালের জন্য প্রথম দিন থেকে জোবায়ের ক্যাম্পে যোগ না দিলেও ২ তারিখে কুষ্টিয়া থেকে এসে যোগ দিয়েছে সে। উর্মিও দিনাজপুর থেকে গত পরশু যোগ দিয়েছে। এদিকে নাভেদতো ছিলই।  এছাড়াও একাডেমিক দলের বিভিন্ন সময়ে  অভিক রায়, তুষার চক্রবর্তী, সকাল রায়, সুদিপ্ত, তমাল বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছে ক্যাম্পে। এদিকে ব্যবস্থাপনা দলের রকি ছিল প্রথম দুই দিন ।আর সুমন আর রতন ছিল পুরো সময়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে যোগ দিয়েছে- বকুল, ফেরদৌস এবং সবসময়ের প্রধান সহযোগী আমাদের আইযুব ভাই। এইচ এস সি পরীক্ষার জন্য প্রথম থেকে উপস্থিত না হতে পারলেও একদিন আগে এসে যোগ দিয়েছে- ধনঞ্জয়, মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ। এবং বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়েছেণ , ফোনে, মেইলে যোগাযাগ রেখেছেন বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার স্যার।

পাই দিবস উদ্যাপন

pai Dayপাইয়ের মান নির্ণয়, পাই নিয়ে কিছু কথা আর সবশেষে পাই কেক কাটার মধ্য দিয়ে ১৪ মার্চ বিশ্ব পাই দিবস ২০১২ উদ্যাপন করল বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি। বিকেল পাঁচটায় অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্পে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি প্রতিবছর ‘পাইয়ের মতো সুন্দর হোন’ স্লোগানে গণিতের ভালোবাসা ও সৌন্দর্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পাই দিবস উদ্যাপন করে থাকে। সংগঠনটি টানা সপ্তমবারের মতো ‘পাই দিবস’ পালন করে। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির স্বেচ্ছাসেবক, ম্যাথ অলিম্পিয়াড ভলান্টিয়ার্স (মুভার্স), গণিত অলিম্পিয়াডের বর্তমান ও সাবেক খুদে শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। পরে সবার অংশগ্রহণে পাই কেক কাটা, খাওয়া ও পাই আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

ঢাকায় হয়ে গেল এপিএমও

Apmo-1১৩ মার্চ বিশ্বের ২৬টি দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডÑএশিয়ান প্যাসিফিক ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডের (এপিএমও) ২৪তম আয়োজন। ২৪তম এপিএমওতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। এপিএমওর নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হয়েছে নিজ নিজ দেশে। এপিএমওর সদস্য ২৬টি দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে পৃথিবীর এই সর্ববৃহৎ আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াড। তবে ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়ের ব্যবধানের জন্য দেশভেদে কয়েক ঘণ্টার সময় পার্থক্য হয়ে থাকে। সে হিসাবে আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোর অলিম্পিয়াড হয় ১২ মার্চ বিকেলে এবং বাংলাদেশসহ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলোর অলিম্পিয়াড হয় ১৩ মার্চ সকালে। বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হলেও এপিএমওর পরীক্ষা হয় অভিন্ন প্রশ্নে। এবার অলিম্পিয়াডটি সমন্বয় করে জাপান। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে এপিএমওর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এপিএমওতে সারা দেশ থেকে আসা প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৯৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এবার অনুষ্ঠিত ২৪তম এপিএমওতে অংশগ্রহণকারী সানিডেল স্কুলের আল রোহিত হোসেনের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর মা। তিনি বলছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে অভিজ্ঞতা বাড়ে, আবার অনেক কিছু শেখাও হয়, তাই এ প্রতিযোগিতায় আসা।’ তিনি আরও জানান, ‘অভিজ্ঞতা আর জানার বিষয়টি বাড়াতে এ ধরনের আয়োজন অনেক উপকারী।’
বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হলেও এপিএমওর পরীক্ষা হয় একই প্রশ্নে। মূল প্রশ্ন অলিম্পিয়াডে গণিতের পাঁচটি সমস্যা সমাধানের জন্য চার ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রশ্নের সর্বোচ্চ মান ছিল ৭। পরে সব শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে প্রথম ১০ জনের ফলাফল এবং নমুনা হিসেবে প্রথম, তৃতীয় ও সপ্তম স্থান অধিকারীর উত্তরপত্র জাপানে পাঠানো হবে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এপিএমওতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

গণিতবাড়ির দিনগুলো

Math Camp

গণিত ক্যাম্প! শুনতেই কেমন যেন ভয় লাগে, যেখানে সারা দিন সবাই ভেসে বেড়াবে গণিতের মহাসমুদ্রে। প্রতিবারের মতো এবারও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে শেষ হলো অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। ঢাকার পদক্ষেপ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট আদাবরে ১১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পটি। সারা দেশ থেকে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে বাছাই করা ৪১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবারের ক্যাম্পে। সঙ্গে ছিল গতবারের আইএমওতে অংশ নেওয়া জাতীয় গণিত দলের সদস্যরাও।
এবারের ক্যাম্পে জ্যামিতির পাশাপাশি নম্বর থিওরিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকে ক্লাস, গ্র“প স্টাডি, হোমওয়ার্ক, গণিতের নতুন নতুন সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও চিন্তাভাবনা। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, আলোচনা করা হয় বিগত বছরের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্নপত্র নিয়েও। আরও ছিল চারটি ভিন্ন ধরনের পরীক্ষা এবং গাণিতিক মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের আয়োজন। এসব  পরীক্ষার ফল থেকেই বাছাই করা হবে ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) জন্য বাংলাদেশ গণিত দল। তাদের নিয়ে আরও একটি বর্ধিত গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে, যার মাধ্যমে মূল দল চ‚ড়ান্ত করা হবে।
সব মিলিয়ে এবারের ক্যাম্পটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল বাড়তি চাপ। তাই বলে কি আনন্দ থেমে থাকবে? বাড়ি থেকে অনেক দূরে অন্য রকম একটি পরিবেশে গণিতের এ ক্যাম্পকে আনন্দমুখর করে রাখতে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। এবারের ক্যাম্পে বিগত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে হাজির ছিল কাজী হাসান জুবায়ের, ফাহিম ফেরদৌস, প্রাণন রহমান, ধনঞ্জয় বিশ্বাস, সৌরভ দাস, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। বাড়তি আনন্দ হিসেবে ছিল ১৪ মার্চ পাই দিবস উদ্যাপন। ক্যাম্প সমন্বয়ক অভীক রায়ের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থাপনা সব সময় একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখত। রাতে রাফির জাদু, মুগ্ধ-øিগ্ধর গান, সুদীপ্ত আর হাসিব আল মুহাইমিনের কৌতুক সবাইকে বিশেষ আনন্দ দিয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্প ফ্যাসিলিটেটর  কামরুল, সুদীপ্ত, মাসনাদ, তমাল, নাভেদ ও তুষারের উপস্থিতি সব সময় ছিল সরব। গণিত ক্যাম্পে বিশেষ আনন্দ হলো যখন জানা গেল ক্যাম্পের মেন্টর তামান্না ইসলাম ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এবার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।  গণিত ক্যাম্পে যত কিছুই ঘটুক না কেন, সবকিছুতেই গণিত বিষয়টা কিন্তু থাকতই। দেখা গেল, সবাই মিলে খাবারের রুমে আড্ডায় কথা হচ্ছে ক্লাস রোল নিয়ে। কারও রোল ৪, কারও ৯, হঠাৎ একজন বলে উঠল, এগুলো না বর্গসংখ্যা। ব্যস, এই আড্ডা বদলে গেল গণিতের আড্ডায়। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভারত দলকে পরাজয় ক্যাম্পে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। ক্যাম্পের শুরুতেই ১৩ মার্চ গণিত ক্যাম্পের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এশিয়া প্যাসিফিক গণিত অলিম্পিয়াডে (এপিএমও)।  সব মিলিয়ে অনেক চাপ, সঙ্গে মজাও হয়েছে অনেক। ক্যাম্পে বিভিন্ন সেশনের পুরো পরিকল্পনা করেছেন গণিত ক্যাম্পের পরিচালক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার। ১৯ মার্চ রাতে ক্যাম্পের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ,  ড. মাহবুব মজুমদার, তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন, বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, প্রথম আলোর উপফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন, একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান, হাম্মাদ আলী, সৌমিত্র চক্রবর্তীসহ মুভার্স কেন্দ্রীয় সার্কেলের সদস্যরা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ২০০৯ সালের আইএমও-তে ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী সামিন রিয়াসাতের মা রাজিয়া বেগম এবং নাজিয়া চৌধুরীর মা জেসমিন আক্তার। ক্যাম্পারদের উৎসাহ দিতে বিগত বছরে ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ক্যাম্পার ও আইএমও দলের সাবেক সদস্যদের মধ্যে ফারিয়া, সৌমেন, শান্ত, রাফি উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গণিত অলিম্পিয়াডের সমন্বয়কারী বায়েজিদ ভ‚ঁইয়া ও ক্যাম্প সমন্বয়ক রকিবুল ইসলামের সঙ্গে ছিল মুভার্স সাজ্জাদ হোসেন, আইয়ুব সরকার, জয়দীপ সুমন, মিজানুর রহমান, জাহিদ হোসাইন, রাকিব, বকুল, ফেরদৌস, দীপ, স্বাক্ষরসহ অনেকে। 

ফরিদগঞ্জে গণিত উৎসব

Faridgonj-1মজার বিষয় গণিত আর গণিতের ভয় দূর করে গণিতকে ভালোবাসতে হবে। তাই স্লোগান ছিল ‘গণিতের ভয়, করব জয়’। এ স্লোগান সামনে রেখে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো হয়ে গেল গণিত উৎসব। ফরিদগঞ্জ সদরের একদল শিক্ষার্থীর সংগঠন ড্রিম টেন্ডস টু রিয়েলিটির উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক সহযোগিতায় ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে গণিতের এই আয়োজন। উপজেলার পূর্ব বড়ালী কবির জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন উপলক্ষে সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়। শোভাযাত্রা শেষে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় মূল উৎসবে।
উৎসবে নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন চাকরিজীবী মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করতে এ ধরনের আয়োজন বেশ উপকারী। মূলত গণিতের নানা বিষয় জানাতে নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন বলেও জানান তিনি। উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী লামিয়া তানজিম বলে, ‘গণিত উৎসবে অংশ নিয়ে ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনে অংশ নিতে চাই।’
পূর্ব বড়ালী কবির জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শাহজান কবিরের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
গণিতের এই আয়োজনে অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ও আলমগীর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মজুমদার, ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র, কবির জুনিয়র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদসহ অনেকে। দিনব্যাপী গণিতের এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের ও সেরা ১০ শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়।

KMH Math Workshop Continues

Kazi Motaher Hossain Math Workshop continues

The classes of 1st Kazi Motaher Hossain Math workshop continues at Jamil Sarwer Trust. last week the first term exam was held on friday and a discussion on 'Average' was held on Saturday. The exam included  the topics discussed earlier. On saturday, Tamim Shariar Subeen discussed the properties of average and how to calculate the same.

The next class of the workshop will be held on next Friday (estimation) and Saturday (Factorization).

15 students of grade III-V are participating in the workshop organized by Socieyty for the Popularization of Science, Bangladesh. (SPSB).