গণিত ক্যাম্প! শুনতেই কেমন যেন ভয় লাগে, যেখানে সারা দিন সবাই ভেসে বেড়াবে গণিতের মহাসমুদ্রে। প্রতিবারের মতো এবারও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে শেষ হলো অষ্টম বাংলাদেশ গণিত ক্যাম্প। ঢাকার পদক্ষেপ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট আদাবরে ১১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ক্যাম্পটি। সারা দেশ থেকে দশম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে বাছাই করা ৪১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবারের ক্যাম্পে। সঙ্গে ছিল গতবারের আইএমওতে অংশ নেওয়া জাতীয় গণিত দলের সদস্যরাও।
এবারের ক্যাম্পে জ্যামিতির পাশাপাশি নম্বর থিওরিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকে ক্লাস, গ্র“প স্টাডি, হোমওয়ার্ক, গণিতের নতুন নতুন সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও চিন্তাভাবনা। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, আলোচনা করা হয় বিগত বছরের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্নপত্র নিয়েও। আরও ছিল চারটি ভিন্ন ধরনের পরীক্ষা এবং গাণিতিক মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের আয়োজন। এসব পরীক্ষার ফল থেকেই বাছাই করা হবে ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) জন্য বাংলাদেশ গণিত দল। তাদের নিয়ে আরও একটি বর্ধিত গণিত ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে, যার মাধ্যমে মূল দল চ‚ড়ান্ত করা হবে।
সব মিলিয়ে এবারের ক্যাম্পটিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল বাড়তি চাপ। তাই বলে কি আনন্দ থেমে থাকবে? বাড়ি থেকে অনেক দূরে অন্য রকম একটি পরিবেশে গণিতের এ ক্যাম্পকে আনন্দমুখর করে রাখতে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। এবারের ক্যাম্পে বিগত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে হাজির ছিল কাজী হাসান জুবায়ের, ফাহিম ফেরদৌস, প্রাণন রহমান, ধনঞ্জয় বিশ্বাস, সৌরভ দাস, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। বাড়তি আনন্দ হিসেবে ছিল ১৪ মার্চ পাই দিবস উদ্যাপন। ক্যাম্প সমন্বয়ক অভীক রায়ের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থাপনা সব সময় একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখত। রাতে রাফির জাদু, মুগ্ধ-øিগ্ধর গান, সুদীপ্ত আর হাসিব আল মুহাইমিনের কৌতুক সবাইকে বিশেষ আনন্দ দিয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্প ফ্যাসিলিটেটর কামরুল, সুদীপ্ত, মাসনাদ, তমাল, নাভেদ ও তুষারের উপস্থিতি সব সময় ছিল সরব। গণিত ক্যাম্পে বিশেষ আনন্দ হলো যখন জানা গেল ক্যাম্পের মেন্টর তামান্না ইসলাম ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এবার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। গণিত ক্যাম্পে যত কিছুই ঘটুক না কেন, সবকিছুতেই গণিত বিষয়টা কিন্তু থাকতই। দেখা গেল, সবাই মিলে খাবারের রুমে আড্ডায় কথা হচ্ছে ক্লাস রোল নিয়ে। কারও রোল ৪, কারও ৯, হঠাৎ একজন বলে উঠল, এগুলো না বর্গসংখ্যা। ব্যস, এই আড্ডা বদলে গেল গণিতের আড্ডায়। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ভারত দলকে পরাজয় ক্যাম্পে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। ক্যাম্পের শুরুতেই ১৩ মার্চ গণিত ক্যাম্পের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এশিয়া প্যাসিফিক গণিত অলিম্পিয়াডে (এপিএমও)। সব মিলিয়ে অনেক চাপ, সঙ্গে মজাও হয়েছে অনেক। ক্যাম্পে বিভিন্ন সেশনের পুরো পরিকল্পনা করেছেন গণিত ক্যাম্পের পরিচালক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার। ১৯ মার্চ রাতে ক্যাম্পের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ড. মাহবুব মজুমদার, তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন, বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, প্রথম আলোর উপফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন, একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান, হাম্মাদ আলী, সৌমিত্র চক্রবর্তীসহ মুভার্স কেন্দ্রীয় সার্কেলের সদস্যরা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ২০০৯ সালের আইএমও-তে ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী সামিন রিয়াসাতের মা রাজিয়া বেগম এবং নাজিয়া চৌধুরীর মা জেসমিন আক্তার। ক্যাম্পারদের উৎসাহ দিতে বিগত বছরে ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ক্যাম্পার ও আইএমও দলের সাবেক সদস্যদের মধ্যে ফারিয়া, সৌমেন, শান্ত, রাফি উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গণিত অলিম্পিয়াডের সমন্বয়কারী বায়েজিদ ভ‚ঁইয়া ও ক্যাম্প সমন্বয়ক রকিবুল ইসলামের সঙ্গে ছিল মুভার্স সাজ্জাদ হোসেন, আইয়ুব সরকার, জয়দীপ সুমন, মিজানুর রহমান, জাহিদ হোসাইন, রাকিব, বকুল, ফেরদৌস, দীপ, স্বাক্ষরসহ অনেকে।